দোঁহা

নিখিল নওশাদের কবিতা



 
ডাকবাক্স'৯০

যখন বিদ্যুৎ ছিলো দূর 'সভ্য' দেশে
যখন আমাদের বিজলী ছিলো শুধু
আকাশে আকাশে
মেঘেদের অমীমাংসায় 

ড্রাই সেল খুলে ফেলে
দূরে রেখে রেডিও রিসিভার
টিনে কাটা জানালায়
তখন তাকিয়ে দেখেছে কৈশোর
কতো বর্ষায় বিদ্ধ হলো
বিশুদ্ধ হলো একটি গ্রামের
প্রিয় আর প্রয়োজনের পালিত পুকুর
এক শিকারভ্রষ্ট মাছরাঙা কেন
তাকিয়ে দেখতো শুধু
লম্ফনকারী মীন-ছানাদের বৃষ্টিবিলাস... 

এইসব ডায়েরীর পাতামাখা দিন
কাঁচের মার্বেলে
কী করে সেঁধে গেলো আসমানী চাঁদ
একটা বাতাবিলেবু
কতদিনে বড় হয়ে ছড়াবে সুঘ্রাণ
কবে সেই একদিন কদমের নিচে
বসবে না বেত হাতে হেডস্যার
ছিঁড়ে যাবে পাকা খাতা
একটা চকে স্যার
সেরে নেবে কয়টা সরল সুদকষা... 

দেখেছি অতীতের সাথে
এহেন ঐকিক নিয়মের জালে
আটকে থাকে ইতিহাস, ফলে- 

স্ব-সৃষ্ট এই গ্যাস সংকট কালে
মনে পড়ে বারুদের ম্যাচ
ম্যাচ বাক্সের স্মৃতি, পিতার পকেট... 

বদন ছোঁয়া খেলবার ছলে
যে চিঠি দিতে গিয়ে হয়নি দেয়া
কতো লাজুক প্রেমিকের প্রেম তাই
চিরতরে ছুটে গেছে; গোল্লাছুটে... 

তবু আজ তোমাকে বেসেছি ভালো
জোড়া দিঘির মাঝে
টলটলে কলমির লতার মতো
কতো শিশিরের ভোরে সিক্ত সবুজ! 

আকাশে 'আসমান' দেখা দেয় রাতে
একটু চাঁদের রেখা
সুবেহ-সাদিক বরাবর
চিরকাল আযান যেমন
পাড়ায় বাজিয়ে দেয় করুণ ভৈরবী... 

পাহাড়ের আড়াল থেকে পারো-
(দুঃ) সেনা-খচিত জুমখেতের পাশে
তুমি এসো প্রথম রশ্মি!
সূর্য্য থেকে ছিঁটকে দুনিয়ায়... 

না হয় আলোর সাগরতীরে পারো-
যে প্রথম ঢেউ-তাড়িত বিন্দু জলে
জ্বলে উঠবে পৃথিবীর আদি রংধনু
ভেবে দেখো, তোমাকে আসতে হয়! 

এমন সব স্বপ্নের শাওনে
প্রকৃত ময়ূরীর পেখমের মতো
একবার যেন চকিতে চেয়ে যাওয়া
হরিণীর মায়া-
কি করে সে ভোর, বৃষ্টি এনে
ভিজিয়েছে আমাদের
নাগরিক নিবিড়তা সেদিন! 

শহরের পথে পথে বিপথগামী ইট
পাথরের গায়ে ফ্যাসিস্ট পিচ ঢেলে
গঞ্জে-হাটে হেঁটে চলে পথ
চলে শোষণের সেতু
ধুলো ওড়ে, নিষ্ঠুর নির্মাণের নিচে
ফুলে ওঠে মানুসের ফুসফুস 

সেইখানে এক ধ্রুপদী মাতৃরূপে
জলের পায়েল এঁকে পায়ে
প্রেমিকাই পেরেছে আসতে চিরকাল
যুগের পিদিম জ্বলে তাই 

তবু নিখিলের বুকে যারা থাকে
তারা
একে একে হয়ে যায়-
'নাই'...


গ-বে-ষ-ণা

গবেষক তুমি কতোটা নীরব থাকো বলে-
বুকের গভীরে ঢুকে পড়ে
কতো রক্তকণিকার কোলয়েড আলোড়নে
খুঁজে পেলে নিঠুর নব-নিউমেরিক...

সকল অংক শুরু বিয়োগের কলা থেকে
মানুষের মিথ্যা মরণ গুণে তাই
সংখ্যা-শরীর গেছে ভরে-
নিষিক্ত ভোমরার রক গুঞ্জন-ঘ্রাণে।

এই নীরব লম্বা টেবিলের ক্লথ
সিরামিক গ্লাসে ভরা
জুল কেলভিন প্যাসকেল
কতোটা কোলাহলে এসেছে এরাই!

কোন মৌমাছি কখন কোথায়
মাতৃপ্রধান দেশে দেশলাই খুঁজে ফেরে
মাখন-প্রাসাদে বসে
কেমন সংবাদ করছো সংশ্লেষণ?
কোন জীবনের কাছে ভুলে
রাখিতেছো কেমন কোশ্চেনারি!

পাশে বায়ু না প্রবাহের ঘরে
নীলাভ পর্দা তবু উড়িতেছে

নৈঃশব্দ, কতো সশব্দের কলা সেঁচে
এনেছে নিনের কূজন
তাই একা রাই হেঁটে গেলে-
কেঁপে ওঠে হরতন
কম্পনে কিনারায়
বাহিত-কাল বহে, সমুদ্র সংশয়ে
সংশ্রব ঘটে সখা-শব্দে...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন