দোঁহা

তমোঘ্ন মুখোপাধ্যায়ের কবিতা

  


 যাওয়া ১ 

নিজের কৌশলে যে বাক্যগুলি বলার জন্য জন্মেছিলাম, তা বলা হয়ে গেছে। সুতরাং মরে যাওয়াই শ্রেয়। আপাতত স্বীকারোক্তি বাজানোর মতো আঙুল যদিও বা কিছু আছে, এই দিয়ে বেশিদিন কাজ চালানো সম্ভব নয়। কিছুদিন সুখভোগ হল, এবার ছিটকে যাওয়াই যায়। যাদের পিছুটান খুব প্রবল মনে হচ্ছে, তারাও ঘুমের ভেতর আমায় বিশাল গাছের নীচে কবর খুঁড়তে দেখে রোজ। মরতেই তো চাইছি। পোষ্য প্রাণীগুলির সামনে পোশাক-টোশাক খুলে সাময়িক কান্না। তারপর দাঁত, মুখ শক্ত করে যতগুলি ক্ষমা করার আছে, সব একে একে সেরা ফেলা।

কোথাও যাবার ছিল কি না মনে পড়ে না, দরকারও নেই। কেই বা অপেক্ষা করে! যেখানে-যেখানে শত্রু ও বন্ধু গজিয়ে উঠেছে, সেই সেই স্থানে আমার প্রণাম। আর কেরামতি ভাল লাগে না। কথা ঘুরিয়ে বলার অভ্যাস অনেক অনেক একা করে দেয়। আর বিশেষ কথাও তো নেই। পোষ্যগুলির ঘুমের ভেতর ঢুকতে পারলাম না, এইটুকুই শোক রয়ে গেল। এটুকু ভাল। খুব আনন্দের সাথে মৃত্যু হলে যাওয়াটা টের পাওয়া যায় না ঠিকঠাক। যেতে চাই একা একা, যতখানি একা যাওয়া চলে...



যাওয়া ২ 

কাউকে কিছু বোঝানোর ছিল? নাকি আর কথা বাড়ানো ঠিক হবে না? সন্তান রেখে যাচ্ছি না, এই সুখ যে কী শান্তি দিচ্ছে! শুধু কিছু গাছ রয়ে গেল। মনখারাপ লাগছে। এ তো হওয়ারই ছিল। ওদের থাকারই কথা। এই উৎসবের মতো শূন্য হয়ে যাওয়ার কিছু প্রত্যক্ষদর্শী থাকা ভাল। সেও তো পিছুটান। ওদের নিয়ে যাওয়ার নোংরা লোভ হচ্ছে। সেই লোভ, যার জন্য এতদিন বেঁচেবর্তে থাকা হল, গান হল, মানুষ ভুরু কুঁচকে তাকাল, চাকরির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে সমবেদনা জানানোর ইয়ার্কি করল। নাহ্! যাওয়াটুকু একা-একা ভাল। গাছেরাও একা যাবে। অন্যথায় আলো নেই কোনও।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন