দোঁহা

পাঁচটি তারার তিমির

 


প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত 

"Sleep, those little slices of death — how I loathe them." 
 
-Edgar Allan Poe


আজকাল মৃত্যু বিষয়টি বড় বেশি গা সওয়া, ক্লান্তিকর হয়ে উঠেছে। আজকাল মৃত্যুর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা নিঃশব্দে বৃষ্টির আওয়াজ, মন কেমনের সোঁদা গন্ধ বা নিস্তব্ধতার নিবিড়, গাঢ় বালিয়াড়ি জেগে ওঠে না। অথচ এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না। 'গুজারিশ' ছবির গানটির কথা মনে পড়ে, অকাল প্র‍য়াত গায়ক কৃষ্ণকুমার কুন্নথ 'কেকে' যা গেয়েছিলেন অভাবনীয় নির্লিপ্ততায় -

"ইয়ে জো বারিশ হ্যায়, দেখো না
ইস মে তেরি বাহো মে মর যাউ...
বস ইতনি সি, ছোটি সি ইক খোয়াইশ হ্যায়
বস, ইতনি সি তুম সে গুজারিশ হ্যায়..."

মৃত্যু হয়তো এমনই হওয়া উচিত। দুকূল ছাপানো বৃষ্টির মধ্যে প্রিয়জনের হাত ছুঁয়ে নেমে আসা অন্তিম শ্বাস বা রেডিওতে বেজে ওঠা কোনও প্রিয় গান, শেষবারের মত তা শুনতে শুনতে কখন নেমে আসে ঘুম, টের পাওয়া যাবে না। কিন্তু বাস্তবে 'গুজারিশ' পূরণ হয়ে ওঠে না সবসময়। অনর্গল মৃত্যুর মিছিল সেই 'শেষ পারানির কড়ি', গান কণ্ঠে তুলে আনতে দেয় না। 

আর তাই বুঝি, আগের মত মৃত্যু আর আলোড়িত করে না আমায়। ভিতর ভিতর অনিবার্য নিয়মে চোরা মনখারাপ কাজ করে ঠিক'ই, কিন্তু বিষয়টি জুড়ে এক অদ্ভুত উদাসীনতার পরত গড়ে ওঠে, ঘিরে থাকে নির্বিকার নির্বিকল্প কুয়াশার চাদর। 

ভয় পাই, তবে কী সাধারণ মানবিক অনুভূতিগুলি ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে? ফুরিয়ে আসছে আন্দোলন ও স্বাভাবিক ছন্দের যাবতীয় কারুকাজ? কেন তবে এহেন অপার নির্লিপ্ততা? আসলে প্রতিটি মৃত্যুই বুঝি আমাদের একসময়, এমন নির্লিপ্ত হতে, সহজ থেকে সহজতর গ্রহনীয়তার পাঠ শেখায়। সঈদ কাদরি দেখিয়েছেন সেই দার্শনিক চেতনার আলো - 

"কঁহা কিসি কে লিয়ে হ্যায় মুমকিন
সব কে লিয়ে এক-সা হোনা
থোড়া-সা দিল মেরা বুরা হ্যায়,
থোড়া ভালা হ্যায় সিনে মে..."

সত্য বচন। সবার পক্ষে হয়তো সত্যি-ই সবার মত হয়ে ওঠা সম্ভব নয়। কিছুটা ভালো, কিছুটা খারাপ, পিঠোপিঠি ঘিরে থাকে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। আর তা-ই বুঝি এমন এই অপার ঔদাসিন্য, মৃত্যুর জন্য ধরা থাকে। সব কিছু হাতে পেয়েও, মুহূর্তে তা পরিত্যাগ করার অসীম প্রবণতা, প্রগাঢ় নিস্ক্রমন। 

গত মাসে চলে গেলেন শিব জি, কিংবদন্তি সন্তুর বাদক পণ্ডিত শিবকুমার শর্মা (১৯৩৮-২০২২)। তাঁরই শেষযাত্রায় বহুদিনের সতীর্থ, অনুজপ্রতীম উস্তাদ জাকির হুসেইনের মুখ ছুঁয়ে দেখেছি নির্লিপ্ত বিষাদের রোদ খেলা করে। অগ্রজের চিতাকুণ্ডের পাশে একলা দাঁড়িয়ে, অপলক তাঁর সেই দৃষ্টিতে স্বজনহারানো বেদনা ছাপিয়ে উঠে এসেছিল অমোঘ ঔদাসিন্যের ঝাঁপতাল। 'কেকে'-এর কণ্ঠে গীতিকার নীলেশ মিশ্র কী অদ্ভুত ভাবে সেই অনুভূতি ব্যক্ত করেছিলেন - 

"ম্যায় নে দিল সে কঁহা 
ঢুন্ড লা না খুশি -
না-সমঝ লায়া গম
তো ইয়ে গম হী সহী..."
 


দুই বন্ধু, দুই পৃথিবী

 
অথচ এর বিপরীতে রয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি চিত্র। মানসা, পঞ্জাবের বছর ২৯ এর ছেলেটির কথা'ই ধরা যাক। আর একসপ্তাহ পরেই যার জন্মদিন। সামনের মাসে বিয়ে হওয়ার কথা। শুভদীপ সিং সিধু, লোকে চিনত সিধু মুসওয়ালা (১৯৯৩-২০২২) নামে। সে'ও আরেক 'উড়তা পঞ্জাব', মাদকের নেশায় ধ্বস্ত এক অস্থির, দিকভ্রষ্ট প্রজন্মের প্রতিনিধি; গুলিগোলা-বোমা-খুনখারাপি গ্যাংওয়ার যাঁদের মজ্জাগত। গানের মাধ্যমে  পঞ্জাবের 'গ্যাংস্টার' ও 'গান কালচারে'র জয়ধ্বনি তুলে নতুন কিছু করতে চেয়েছিলেন তিনি।

পাশাপাশি গ্যাংস্টার র‍্যাপ, হিপহপ, আরএণ্ডবি -তে সিদ্ধহস্ত মুসওয়ালা, পঞ্জাবের 'মাচো-কালচারে'র প্রতিনিধি এই গায়কের হাতে গিটার বা হারমনিয়ামের চাইতে বন্দুকই দেখা গেছে বেশি। 'ভালগ্যরিটি' ও 'ভায়লেন্স' ঠাঁই পেয়েছিল তাঁর গানে। ভয়াবহ সেই সব গান গেয়ে হয়ে উঠেছিলেন 'ইউথ আইকন'। এর সাথেই হাত পাকানোর চেষ্টা করেছিলেন রাজনীতির ময়দানে। পরিণতিও হয়েছিলেন ভয়ংকর। অজ্ঞাত আততায়ীর ১৯ টি গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিলেন বিতর্কিত এই গায়ক। 

"ম্যায় খোয়াব জো সঁজায়ে 
সাঢা ত্যইনু দেখেয়া -
ভ্যে ম্যায় ইশক দি ভাট্টি 
ভিচ দিল স্যকেয়া..."
 
 
মায়ের সঙ্গে মুসওয়ালা

 
তাঁর শেষযাত্রায় বাজেনি কোনও গান। বাবা বলকৌর সিং ছেলের গোঁফে শেষবারের মত 'তা' দিয়ে দেন। সুরমূর্চ্ছনার চেয়েও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে বারুদের গন্ধ। নেপথ্যে পড়ে থাকে শয়ে শয়ে প্রশ্নচিহ্ন। সম্প্রতি মুসওয়ালার মৃত্যু নিয়ে ন্যাশনাল নিউজ চ্যানেলে ডিবেটে বসে বিখ্যাত পঞ্জাবী গায়ক জসবিন্দর নারুলা বলেন, "সঙ্গীত হল ঈশ্বরীয় সাধনার অঙ্গ। সেখানে মারণাস্ত্রের স্তুতি চলে না। কী লাভ হল গুলি বারুদ নিয়ে গান গেয়ে? অথচ ছেলেটি চমৎকার ভজন গাইত, একসময়..." বুলেটের আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া সেই ছেলেটিই তাঁর বাবা-কে নিয়ে একদা লিখেছিল কবিতা, বেঁধেছিল চমৎকার এক গান। সেই গান আজ ধুয়েমুছে গেছে গুলির শব্দে।

বৈপরীত্যের আসরে দাঁড়িয়ে আমাদের দিকে তর্জনী ছুঁড়ে দিয়েছেন কৃষ্ণকুমার কুন্নথ, 'কেকে' (১৯৬৮-২০২২) নামেই আপামর ভারতবাসীর কাছে পরিচিত যিনি। দেশের 'সংস্কৃতি রাজধানী' কলকাতায় অনুষ্ঠান করতে এসে জলজ্যান্ত মানুষটি চিরকালের মত বিদায় নিলেন পৃথিবী থেকে। অসুস্থতা সত্ত্বেও তিনি স্টেজ ছাড়েননি। 'শো মাস্ট গো অন' নীতিতে ভর দিয়ে একের পর এক ২০ টি গান গেয়েছেন তিনি। আনন্দবিহ্বল অডিটোরিয়াম কী আদৌ বুঝতে পেরেছিল, এর পর আর কোনদিন গান গাইতে শোনা যাবে না তাঁকে! যখন বুঝতে পেরেছে, দেরী হয়ে গেছে অনেক। 

'কেকে'-র গানে সব-হারানোর 'সুখ' দেখেছি আমি। গুলজারের 'মাচিশ' -এ 'ছোড় আয়ে হম' এ বিখ্যাত সেই শিস, 'লাইফ ইন আ মেট্রো'য় গাওয়া 'অলভিদা', 'জিসম' ছবিতে 'আওয়ারাপান বঞ্জারাপান', ইরফান খান অভিনীত 'রোগ' থেকে 'ম্যায়নে দিল সে কঁহা', বা 'পল' অ্যালবামে 'পল ইয়ে হ্যায় প্যায়ার কা পল'...সর্বস্ব হারানোর সেই ক্ষণ অণুক্ষণ, যেভাবে তুলে এনেছেন তিনি নিজস্ব গায়কীতে, তা শুধু শ্রোতা নয়, বোধকরি শিল্পীর জীবনেও এক ভিন্ন দর্শনের আলো ছড়িয়ে দেয়।
 
 

অপ্রতিদ্বন্দ্বী
 
সেই অবিনশ্বর আলো আমাদের এক অন্য বোধ, চেতনার মুখোমুখি দাঁড় করায়। সেই বোধ, চেতনার মূর্ত প্রতিফলন ঘটতে দেখি 'মাই ব্রাদার...নিখিল' সিনেমার সেই স্বল্প পরিচিত গান 'লে চলে'-র মধ্যে, সব কিছু হারানোর ঊর্ধ্বে জীবনকে কানায় কানায় অদ্ভুত নির্লিপ্ত অনুভব, দার্শনিক বীক্ষণ -

"জো ঘনা হো ফিজা মে অন্ধেরা
লায়েঙ্গে হম সবেরে তেরে লিয়ে
লে চলে লে চলে 
ইঁয়াদো কে ইয়ে ক্যফিলে..."

রবীন্দ্রসদনে কফিনবন্দী তাঁর শেষযাত্রায় যখন দেওয়া হচ্ছে 'গান স্যালুট'ও তখনও তাঁকে ঘিরে অনন্ত স্মৃতির মিছিল...যার শুরু আছে, শেষ নেই...

এমনই এক অনন্ত যাত্রায়, সম্প্রতি, হেঁটে গেলেন আরেক কিংবদন্তি সন্তুরবাদক পণ্ডিত ভজনলাল সোপোরি (১৯৪৮-২০২২)। শিবকুমার শর্মার চেয়ে বছর দশেক ছোট, সন্তুরের আরেক জাদুকর, যাকে দেখলে মনে হতো স্বয়ং যিশু বেথলেহেম থেকে উঠে এসে সন্তুর বাজাতে বসেছেন...

বর্তমান প্রজন্ম সোপোরি-কে কতটা চিনেছে, সে নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে। শিবকুমার শর্মা যখন ধীরে ধীরে আসমুদ্রহিমাচল-কে মথিত করেছেন তাঁর শততন্ত্রী বীণায়, সেই আলোকবর্তিকা থেকে দূরে, নীরবে, নিভৃতে সাধনা চালিয়ে গেছেন প্রচার বিমুখ কাশ্মীরের সোপোর অঞ্চলের এই মানুষটি। 

সৌভাগ্যক্রমে বহুবার তাঁর বাজনা শোনার সুযোগ হয়েছে আমার। স্কুলে পড়ার সময়, অপ্রত্যাশিত ভাবে, ভদ্রেশ্বরের টাউন হলে তাঁর বাজনা প্রথম শুনি। পাহাড়ি ধুন ছাড়াও 'মধ্যম সে গারা' ও মিশ্র কাফি শুনিয়ে ছিলেন তিনি৷ এমন ঈশ্বরীয় আলাপ আগে কখনো শুনিনি। পরবর্তী কালে নয়াদিল্লি ও কলকাতা মিলিয়ে বহুবার সেই বিরল অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছি। 
 
 
সন্ত-ই-সন্তুর

সোপোরি জির বাজনায় যে 'সুফি বাজ' এর প্রতিফলন পেয়েছি, তার নাগাল এক জীবনে পাওয়া দুস্কর। পিতামহ পণ্ডিত সমসার চাঁদ সোপোরি ও পিতা পণ্ডিত শম্ভুনাথ সোপোরি, কাশ্মীরের যে অতীন্দ্রিয় সুফিবাদ-কে লালন করেছিলেন তাঁদের এ বাজনায়, তার সার্থক ব্যঞ্জনা বারবার ফুটে উঠতে দেখেছি ভজনলাল জি ও পরবর্তীতে সুযোগ্য অভয় রুস্তম সোপোরির ধ্বনি মূর্চ্ছনায়। সুফি গায়কী ও তৎসহ 'তন্ত্রকারী অঙ্গ' একত্রে শততন্ত্রী বীণায় যে অপার্থিব জাদুবাস্তবতা সৃষ্টি করতে পারে, পণ্ডিত জি'কে না শুনলে তা বোঝা দুঃসাধ্য। তাঁকে 'সেন্ট (সন্ত) অফ সন্তুর' বলা বিন্দুমাত্র অতিকথন নয়। বিশেষ করে তাঁর সৃষ্ট রাগ - লালেশ্বরী, পটওয়ান্তি, নির্মলরঞ্জনী, হেমরস, এক একটি বিস্ময়কর সুরেলা বিস্ফোরণ।

২রা জুন কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ৭৩ বছর বয়সে না-ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন পণ্ডিত ভজন লাল সোপোরি। পরিসমাপ্তি ঘটল শাস্ত্রীয় সংগীতের এক স্বর্ণোজ্জ্বল অধ্যায়ের। আজও পিছন ফিরে তাকালে, সেই মৃদুভাষী, মহাপণ্ডিত ও সদাহাস্যজ্বল মানুষটির মুখ মনে পড়ে। অদ্ভুত সরলতা, গভীর ও শান্ত দুটি চোখ, সাধকোচিত নির্লিপ্ততা আর ঠোঁটে করুণাঘন হাসি। অবসরে বই পড়তে ভালবাসতেন তিনি। কাশ্মীরের সুফি-সাধিকা লালেশ্বরীর 'বাক' ছিল তাঁর সারাজীবনের সঙ্গী। কেউ তাঁর বাজনার উচ্চকিত প্রশংসা করলে, স্থির অকম্পন দৃষ্টি মেলে উচ্চারণ করতেন অপভ্রংশ প্রাকৃতে তাঁর পছন্দের দোঁহা'টি - 

"ওয়ারন ওহ নাম কুনুউ বৎসুম
ন্যেব্রা দৌপানাম অন্দারে অৎসুম 
সুই গাভ লালি মে বাক থা বৎসুম
তভে মে ইওতুম নংগে নৎসুম..." 

[গুরু আমায় দীক্ষা দিয়েছেন। সব অহং ত্যাগ করে অন্তর্দৃষ্টি মেলার। গুরুর বাণী মাথায় নিয়ে নগ্নপ্রায় ঘুরে বেড়াচ্ছি]

এমনই আরেক অসম্ভব উড়ান শেষ হয়েছিল সেদিন, যেদিন পরপারে পাড়ি দিয়েছিলেন পণ্ডিত ভজন সোপোরি। আরও এক নির্লিপ্ত, অবিচল চলে যাওয়া। দিল্লিবাসী ২২ বছরের পপ সিঙ্গার শেইল সাগর রহস্যময় ভাবে প্রয়াত হন সেদিনই।

শুধু ভালো গায়ক'ই ছিলেন না শেইল, ভালো লিখতেন, সুরও দিতেন। দিল্লির 'জেনারেশন ওয়াই' প্রজন্মের অন্যতম প্রতিভাশালী সংগীতশিল্পী। পিয়ানো, স্যাক্সোফোন ও গীটারে সিদ্ধহস্ত শেইল খুব অল্পসময়ের মধ্যে শ্রোতাদের হৃদয়ে জায়গা বানিয়ে নেন। 

দিল্লি ও এনসিআর-এর অধিকাংশ পপ ও জ্যাজ ক্লাবে ছিল তাঁর সুরেলা আধিপত্য। 'ইন্ডিপেন্ডেন্ট মিউজিশিয়ান'দের মধ্যে শেইল তাঁর লেখা, সুর ও তাঁর 'লো ব্যারিটন ভয়েজ'-এর জন্য হয়ে ওঠেন হার্টথ্রব। ইউটিউব ঘেঁটে দেখলে মাত্র ৭ টি ট্র‍্যাক। তাতেই বাজিমাৎ করেছিলেন শেইল। 

অবাক হয়েছিলাম তাঁর 'ইফ আই ট্রাই' ও 'মিস্টার মোনাইলম্যান' গান দুটি শুনে। ২২ বছরের একটি ছেলের লেখনী ও সুরে এতটা গভীরতা, এককথায় অবিশ্বাস্য। দিল্লির সংগীতপ্রেমীদের কাছে রীতিমত 'ব্লু আইড বয়' হয়ে উঠেছিলেন হংসরাজ কলেজের এই প্রাক্তনী। অনেকেই তাঁকে 'নিউ এজ ডিলান অফ ডেহলি' বলে ডাকতেন। শেইল নিজেও বব ডিলান, কোহেন, কোবেইনের অন্ধভক্ত। তাঁর বন্ধুরা জানিয়েছিলেন, 'মিস্টার মোবাইলম্যান' ছিল বব ডিলানের প্রতি তাঁর 'ট্রিবিউট'।


"Are there kisses we still haven't shared, 
that can't be known
Why did we pretend that our goodbye was 
etched in stone?"

[Before it goes, Sheil Sagar] 
 

সুধা 'সাগর' তীরে
 
অথচ মাত্র ২২ বছর বয়সে থেমে গেল শেইলের পিয়ানো। তাঁর মৃত্যুর কারণ আজও অজ্ঞাত। কিন্তু অসম্ভব প্রতিভাবান এই তরুণ শিল্পীর গান আর শোনা যাবে না দিল্লির জ্যাজ পপ সার্কিটে, এটিও হৃদয়বিদারক। 

বছরের শুরুতেই সুরলোকে পাড়ি জমিয়েছিলেন দুই কিন্নরকণ্ঠী লতা মঙ্গেশকর ও সন্ধ‍্যা মুখোপাধ‍্যায়। তার কিছুদিনের মধ্যে বাপি লাহিড়ী। এর পর গত একমাসে পাঁচ পাঁচজন সংগীতশিল্পী পাড়ি জমিয়েছেন অমৃতলোকে। পাঁচ পাঁচটি অধ্যায়ের সমাপতন৷ 

মৃত্যু নিয়ে সত্যি আজকাল আর তেমন উদ্বেলিত হই না। বড় বেশি গা-সওয়া, নির্লিপ্ত থাকি৷ শোকের বহিঃপ্রকাশ হয়ে ওঠে নৈঃশব্দ্য, অনুচ্চারণ৷ জানি, মেনে নেওয়া কঠিন, হয়তো সময়টাই এমন, এতটা অপ্রত্যাশিত এই মুহূর্ত, এই অসহায়তা...তবু আরও একবার অনিচ্ছা সত্ত্বেও ঘুরে দেখার স্পৃহা, বিদায় জানিয়ে দেওয়া নিজের মত এই সব মানুষগুলিকে, এতগুলি কথা লিখতে বাধ্য করে। 

আরও একবার ধীর পায়ে সেই সব পদচিহ্ন ধরে হাঁটি, কালের নিয়মে অস্থির বাতাস তাদের চিরতরে মুছে ফেলার আগেই...আরও একবার চিনে নিতে চেষ্টা সেই সব অকথিত সুর, জীবন সংগ্রামের গান আর থেমে যাওয়া শব্দপ্রাচীর...তা-ই আজ আর তেমন স্পর্শ করে না কিছুই...

জানি এই চলে যাওয়াও আসলে এক নতুন সূচনার ইঙ্গিত৷ আমি শুধু সেই ইশারায় বাঁচি। মনে হয় ফের বেজে উঠবে স্যাক্স, গীটার, সন্তুর, পিয়ানো একত্রে। এর থেকে বেশি আর কিইবা চাওয়া আছে? 

এর চেয়ে বেশি আর কিই বা চাইতে পারি, মৃত্যুর কাছে...যেমনটি চেয়েছিলেন কবি ল্যাংসটন হিউজ -

"Life is for the living.
Death is for the dead.
Let life be like music.
And death a note unsaid."

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন