দোঁহা

ঈশ্বরের চোখে জল

 


প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত 

Humiliation is the beginning of sanctification. - John Donne

১.
ছেলেটি তখন থেকে বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে। 
রঘু, রাঘবেন্দ্র তাঁর নাম। 

কতই বা বয়স হবে - ১১ কি ১২! অনেক দূর থেকে এসেছে সে। প্রচণ্ড গরমে মারাঠাওয়ারা তখন জ্বলছে। গরমে, ক্লান্তিতে টলছে ছেলেটা, গলা শুকিয়ে কাঠ, ঘামে ভেসে যাচ্ছে জামা। একটু জল চায় সে, তেষ্টায় জিভ জড়িয়ে আসে। বাড়ি ভর্তি লোক, অথচ জল দেওয়ার কেউ নেই। চেয়েও পাওয়া যায়নি সাড়া। সে তবু ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। 

রঘু জানে এটা তাঁর বাবার বাড়ি, তাঁর স্বনামধন্য পিতা এখানে বিরাজমান অথচ এ বাড়িতে তাঁর প্রবেশ নিষেধ।

অনেক দূর ফিরতে হবে তাঁকে। সন্ধ্যে নামার আগেই পৌঁছে যেতে হবে নবি পেঠ, কোকিলা চাওয়ালে। সেখানে তাঁর পথ চেয়ে বসে আছেন মা, ছোট দুই বোন। তাঁরা অভুক্ত, অশক্ত। ঘরে নিদারুণ অভাব, নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। পেট পুরে খাওয়া হয়না বহুদিন। মাসের শেষে আরো জটিল হয় পরিস্থিতি, পাওনাদার হানা দেয়, দুই বোনের কান্না আরও তীব্রতর হয়, মা মন্দিরেই পরে থাকেন সর্বক্ষণ। সে সব অসহনীয় মুহূর্ত, যার শুস্রুষা রয়েছে এই বাড়িতে। তা-ই এখানে আসা। 

রঘু শুনতে পায়, বাড়ির ভেতর তানপুরা, সুরমণ্ডলের শব্দ। সুরে সুরে বাঁধছেন কেউ। রঘু ছটফটিয়ে ওঠে। তাঁর ইচ্ছে করে ছুটে ভিতরে যেতে। অনেকদিন 'আন্না'কে দেখে না সে, কত কথা বলা হয়ে ওঠেনি। সে সব ভেবেই বোধহয় মন্ত্রবিৎ সে পা বাড়ায়। কিন্তু এগিয়ে যেতেই পথ আটকে দাঁড়ান এক মহিলা। চোখে তাঁর আগুন ঝড়ছে, রুঢ় কণ্ঠে বলে ওঠেন - "খবর্দার! উনি এখন ব্যস্ত৷ ছাত্রছাত্রীরা এসেছে, ক্লাস শুরু হবে এক্ষুণি। বিরক্ত করো না।" এই বলে একটা খাম তিনি ছুড়ে দেন ছেলেটির দিকে। কিছু নোট আর রেজকি ছড়িয়ে পড়ে মাটিতে। রঘু চমকে ওঠে। তারপর দ্রুত হাতে সে সব কুড়িয়ে নিতে থাকে। অবজ্ঞায়, ঘৃণায় হেসে ওঠেন মহিলা। ছেলেটির সে দিকে হুঁশ নেই। মাটিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে পয়সা কুড়িয়ে নিতে সে ব্যস্ত। ভদ্রমহিলা অবজ্ঞার হাসি হেসে ভিতরে চলে যান। মুখের ওপর বন্ধ হয়ে যায় দরজা।

টাকা পয়সা কুড়িয়ে ফিরে চলে ছেলেটা। সুতীব্র অপমানে, লাঞ্চনায় তার চোখ ফেটে জল আসে, কিন্তু সে কাঁদেনা। বাড়ির বড় ছেলে সে, তাঁর চোখে জল মানায় না। মনে মনে বাবাকে প্রণাম জানিয়ে, চোখের জল মুছে, দ্রুত ফিরে যায় সে। 

বাবা যখন খবর পেলেন তাঁর আদরের রঘু এসেছিল, তানপুরা ফেলে ছুটে আসেন বাইরে। ডাকাডাকি করেন, খোঁজ করেন এদিক-সেদিক। কিন্তু ততক্ষণে অনেকটা দেরি হয়ে গেছে৷ ছেলে ফিরে গেছে তাঁর মায়ের কাছে। বাবার চোখ জলে ভরে ওঠে। আবার কবে হবে দেখা, তিনি জানেন না। সে দিন যেন কিছুতেই সুর বসল না গলায়। 

তানপুরা, সুরমণ্ডল নির্বাক হয়ে পড়ে রইল ঘরের এককোনে। সে রাতে দরবারি কানাড়া ভেসে উঠেছিল পুণের ভাণ্ডারকর রোডের 'স্বধ্যায়' বাংলোতে।
 
                              রাঘবেন্দ্র ভীমসেন জোশী  

 ২. 
The meeting of two personalities is like the contact of two chemical substances: if there is any reaction, both are transformed. – Carl Gustav Jare

সাল ১৯৪৪। দূর সম্পর্কের মামা অচ্যুতাচার্য কাট্টির কন্যা, সম্পর্কে মামাতো বোন, সুনন্দা কাট্টির সঙ্গে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হলেন ভীমসেন জোশী। 

কর্ণাটকের গদাঘ-ধারওয়ার থেকে উঠে আসা ২২ বছরের যুবা ভীমসেন তখন একটু একটু করে সংগীতের দুনিয়ায় পাখা মেলছেন। ঠিক তিন বছর আগে ১৯৪১ সালে তাঁর প্রথম লাইভ পারফরম্যান্স, ভীমসেন তখন মাত্র ১৯। পরের বছর, ১৯৪২'এ এইচএমভি থেকে হিন্দি এবং মারাঠি ভজনের প্রথম অ্যালবাম, পরের বছরই রেডিও আর্টিস্ট হিসেবে মুম্বই পাড়ি। ততদিনে কিরানা ঘরানার নব্য প্রতিনিধি, খেয়াল গায়ক রূপে পসার ও খ্যাতি দুই কামিয়েছেন ভীমসেন। 

পারিবারিক পুজোয় অংশ নিতে বাড়ি আসা। সেখানেই প্রথম দেখা সুনন্দাকে। বাবা গুরুরাজ জোশীর আদেশে মামা অচ্যুতাচার্য কাট্টির কন্যা সুনন্দার সঙ্গে হয় শুভ পরিণয়। সুনন্দা বয়সে ভীমসেনের থেকে প্রায় ৮-৯ বছরের ছোট স্মিতভাষ্য, সদাহাস্য কিশোরী। গান বা পড়াশোনা বিশেষ জানতেন না। তবে দেবজ্ঞানে পুজো করতেন স্বামীকে। ঈশ্বরের কল্যাণে তাঁদের চার সন্তান হয় - রাঘবেন্দ্র, ঊষা, সুমঙ্গলা এবং আনন্দ জোশী। 
 
                              ভীমসেন, রাঘবেন্দ্র ও সুনন্দা
 
রাঘবেন্দ্র জানিয়েছেন, 'অদ্ভুত সুন্দর সে সময়। তখনও আনন্দ (কনিষ্ঠ পুত্র) আসেনি, সুমঙ্গলা নেহাৎ দুধের শিশু। বাবার গানের অনুষ্ঠান হলে, আমরা মা'র হাত ধরে দেখতে যেতাম। টাঙ্গায় চড়ে দূর কোনও প্রদেশে অনুষ্ঠান দেখতে গিয়ে অধিকাংশ সময়ে আমি ঘুমিয়ে পড়তাম। যখন ঘুম ভাঙত, চারপাশে হাততালির শব্দ। বুঝতাম বাবা তাঁর অনুষ্ঠান শেষ করছেন। ফেরার পথে মা সারাক্ষণ বাবার গল্প বলছেন, উত্তেজিত, গর্বিত কণ্ঠে। 'ভীম আন্না'কে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন মা। বলতেন, তাঁর কণ্ঠে ঈশ্বর বিরাজ করেন, আমরা যেন তাঁর মত গান গাইবার চেষ্টা করি, বড় হওয়ার চেষ্টা করি...বাবার কাছেই শুরু হয় তালিম, যখন তিনি সময় পেতেন, তানপুরা নিয়ে মুখোমুখি বসতেন...শিখিয়েছিলেন ভৈরবী, আভোগী, টোড়ি আরও কত কী...কিন্তু এ সুখের সময় দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।' 

সাল ১৯৫১। দ্বিতীয়বার বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হলেন ভীমসেন জোশী। প্রথম পক্ষের স্ত্রীকে কোনও কিছু না জানিয়েই রীতিমতো 'ইলোপ' করে হয় এই বিয়ে। পাত্রী ভীমসেনেরই ছাত্রী, একসময় কন্নড় স্টেজ থিয়েটার 'ভাগ্য শ্রী'তে অভিনয় করতে আসা আওরঙ্গবাদের বিদূষী, সুন্দরী বৎসলা ধন্দুপন্ত মুধলকর। তাঁদের দীর্ঘদিনের গোপন প্রেম, রতি অভিসার এবং শেষে পরিণয়। ভীমসেনের এই 'প্রতারণা' মেনে নিতে পারেননি সুনন্দা। শোকে, দু:খে, অপমানে তিনি তখন উন্মাদিনী। 'মাকে সামলানো দিন দিন হয়ে উঠেছিল কঠিন...বাবা নেই, তিনি তখন অন্য গ্রহের বাসিন্দা, এদিকে মা অধিকাংশ সময়েই অসুস্থ থাকতেন, প্রলাপ বকতেন...কখনো তিনি হাসছেন, কখনো কাঁদছেন...আমরা ভাইবোনেরা অদ্ভুত আতঙ্কে সিঁটিয়ে থাকতাম' - জানাচ্ছেন রাঘবেন্দ্র। 

ভীমসেন অবশ্য তখন প্রেমের জোয়ারে নৌকা ভাসিয়েছেন। তাঁর অধিকাংশ অনুষ্ঠানে তানপুরা ধরছেন তাঁর 'নতুন বউ' বৎসলা মুধলকর জোশী। তিনি শুধু রূপবতীই ছিলেন না, ছিলেন গুণবতীও৷ অল্পবয়সেই রেডিও শিল্পী, তানরস ঘরানার উস্তাদ সাব্বু খাঁ-র ছাত্রী। ভীমসেন জোশীর কাছেও একসময় শিখেছেন গান৷ ছিল চমৎকার গানের গলা, একসময়ে নিজেও গান গেয়েছেন প্রবল মুনশিয়ানায়। এককথায় ভীমসেনের যোগ্য সঙ্গিনী। এদিকে ভীমসেন স্বয়ং তখন অশ্বমেধের ঘোড়া ছুটিয়েছেন শাস্ত্রীয় সংগীতের দুনিয়ায়। কিরানা ঘরানার অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী, অভূতপূর্ব তাঁর গায়কী, ভোকাল ট্রিটমেন্ট, রেঞ্জ, বেস। সব দিক থেকেই পরিপূর্ণ শিল্পী। শুধু কিরানা-ই নয়, খেয়ালের মেধাবী চলনে অনায়াসে সংযুক্ত করে চলেছেন জয়পুর-আতারৌলী, পাতিয়ালা, দিল্লি, বেনারস ঘরানার বন্দিশ, গায়কী। শুনে লোকে ধন্য ধন্য করছে৷ সংগীতের দুনিয়ায় ভীমসেন তখন এক জ্বলন্ত বিস্ময়, লোকে বলে তাঁর কণ্ঠে স্বয়ং ঈশ্বরের আবাদক্ষেত্র। বৈভব, বিত্ত, খ্যাতি - তিন দেবতাই এসে চরণস্পর্শ করেছে। ধীরে ধীরে কিংবদন্তি হয়ে ওঠার পথে ফিয়াট গাড়ি ছোটাচ্ছেন ভীমসেন। তিনি 'লং ড্রাইভ' ভালোবাসতেন।
 
                     বৎসলা ও ভীমসেন জোশী
 
অন্যদিকে, এহেন প্রেমাস্পদ ডুয়েট বা দ্বৈত গানের মৌরসীপাট্টা থেকে বহুদূরে ধরওয়ারে তখন প্রবল অর্থাভাব, অস্বচ্ছলতা ও দূরারোগ্য অসুখের হাতছানি। হঠাৎই একদিন ঘরের মধ্যে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন সুনন্দা...

৩. 
Allah says, I am in love with those who repent. - Sura Baqarah (2:222) 

অদ্ভুত চরিত্রের মানুষ ভীমসেন জোশী। 

এমন আত্মভোলা, আনখশির প্রেমিক খুব কমই দেখা যায়। যেভাবে জীবন দিয়ে ভালোবেসেছেন সঙ্গীত; তেমনই উদ্দাম, উন্মুক্ত তাঁর 'ভালোবাসা'৷ সে ভালোবাসায় আকুতি, প্রেম, প্রার্থনা, কাম, সমর্পণ এবং অনুশোচনা - সবই আছে৷ এই কী সেই মানুষ যে তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে 'বিশ্বাসঘাতকতা' করে দূরে সরে গেলেও, তাঁরই কাছে ফিরে এসেছেন বার বার, দু হাত ধরে চোখের জলে ভেসে চেয়েছেন ক্ষমা, বলেছেন - 'আমি সত্যিই প্রেমে পড়েছি। ভুল বুঝো না!' সুনন্দার মুখ থেকে কথা সরে না৷ অবাক, নিস্পলক চোখে তাকিয়ে থাকেন স্বামীর মুখে। 

রাঘবেন্দ্র জানিয়েছেন, ১৯৫১ সালে ভীমসেন জোশীর দ্বিতীয় বিবাহের সাথেই তাঁর সোনার সংসার ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। সকলের অমতে এই বিয়ে, যাকে ভালো চোখে দেখেননি বৎসলা মুধলকরের পরিবারও। এক অচেনা 'শাদি-শুদা গাওয়াইয়া'-র সঙ্গে কন্যার বিবাহ মেনে নিতে পারেননি বৎসলার বাবা। যদিও শোনা যায় ভীমসেন জোশীর বাবা গুরুরাজ এই বিয়েতে মত দিয়েছিলেন। পাত্রীর বহুমুখী প্রতিভা মুগ্ধ করেছিল তাকে, সুনন্দার মত অতি সাধারন, আটপৌরে, সহজসরল চরিত্র কোথাও যেন হয়ে পড়ে ম্রিয়মাণ। কিন্তু এতটা সহজ ছিল না এই বিবাহ৷ বহুবিবাহ প্রথা হিন্দু সমাজে তখন নিষিদ্ধ, বম্বে প্রেসিডেন্সিতে ঠাঁই হয়নি যুগলের, বাধ্য হয়ে নাগপুরে (সেন্ট্রাল প্রভিন্স) স্থানান্তরিত হন ভীমসেন ও বৎসলা। সেখানে এই প্রথা তখনও বর্তমান। নাগপুর বিদ্দ্বজ্জন সমাজের অন্যতম প্রতিভূ বাবুরাও দেশমুখের উদ্যোগে শেষ পর্যন্ত 'সিভিল ম্যারেজ এক্টে' বিবাহ সম্পন্ন হয়। দীর্ঘদিনের লড়াই পরিণতি পায়। বৎসলার গর্ভে জন্ম হয় ভীমসেনের তিন সন্তানের - জয়ন্ত, সুভদ্রা ও শ্রীনিবাস জোশীর।

দ্বিতীয়বার বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হলেও ভীমসেন কিন্তু কখনই তাঁর প্রথম পক্ষের স্ত্রীকে অস্বীকার করেননি। আইনত: বিবাহবিচ্ছিন্ন হননি তাঁরা। তিনি তাঁর ব্যস্ত সময়ের মধ্যেও সুন্দনা ও তাঁর চার সন্তানের খোঁজখবর নিতেন, দেখভাল করতেন। সামান্য হলেও প্রতিমাসে করতেন অর্থ সাহায্যও, যাতে তাঁদের জীবনধারণে অসুবিধা না হয়। ভীমসেন জোশীর কন্যা ঊষা কুলকর্ণী জানাচ্ছেন, 'নতুন স্ত্রীকে পেয়েও মা'কে কিন্তু ভোলেননি আন্না। আসলে নতুন জীবন শুরু করলেও কোথাও না কোথাও তাঁর মনের মধ্যে কাজ করছিলে একটা অপরাধবোধ। তাই তিনি শুধু সময় পেলেই পুণে থেকে ছুটে আসতেন গদাঘে। এ নিয়ে তাঁর নতুন সংসারেও ধরে বিক্ষোভের আগুন, যা খুবই স্বাভাবিক। আমার মায়ের মতো 'বৎসলাতাঈ'ও মেনে নিতে পারেননি 'ভীম-আন্না'র প্রথম পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ।' স্বাভাবিকভাবেই ঘরেবাইরে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, প্রবল অশান্তির ঝড়-ঝাপটা আছড়ে পড়ে ভীমসেনের উপর। কিন্তু এর মধ্যেও তিনি দেখে ফেললেন এক 'অসম্ভব স্বপ্ন' - দুই স্ত্রী এবং সন্তানাদিদের এক ছাদের তলায় নিয়ে এসে সুখে-শান্তিতে বসবাস করা।

ভীমসেনের দীর্ঘদিনের অভিন্নহৃদয়ের বন্ধু এনবিএইচ কুলকর্ণী জানিয়েছেন, 'ভীমসেন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তা এককথায় অবিশ্বাস্য, অভাবনীয়৷ তাঁর এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সে সময় বহু হাসাহাসি, টিপ্পনী হয় কিন্তু মানুষটার মন ছুঁয়ে দেখতে পারেননি কেউ। নিজের যাবতীয় দোষ ত্রুটির ঊর্ধ্বে আর চার-পাঁচটা সাধারণ মানুষের মত ভীমসেন জোশীও মনেপ্রাণে চেয়েছিলেন, একটা সুস্থ স্বাভাবিক সংসার। আর সেই জন্য নাগপুর ছেড়ে পুণের ভান্ডারকার রোডে বাংলো ভাড়া নেন তিনি। স্বামীর নাছোড়বান্দা জেদের কাছে বৎসলা, অনিচ্ছা সত্ত্বেও সতীনের সঙ্গে ঘর করতে রাজী হন তিনি৷ অন্যদিকে সুনন্দা, যিনি নিজে স্বামীর জন্য উৎসর্গপ্রাণা, সন্তানদের হাত ধরে গদাঘ থেকে পুণে আসেন। ভীমসেন তাঁর দুই স্ত্রীর জন্য আলাদা আলাদ বন্দোবস্ত করেছিলেন। বছর কয়েক সব কিছু ঠিকঠাকই ছিল। আনন্দমুখরিত ভীমসেন তাঁর অনুষ্ঠান এবং সন্তানদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। কিন্তু তিনি ঘুণাক্ষরেও টের পাননি, কী অসহনীয় মুহূর্ত অপেক্ষা করছে তাঁর জন্য। অবশেষে বিধ্বংসী সুনামির জলচ্ছ্বাস, ভয়াবহ ঝড় আছড়ে পড়ে তাঁর জীবনে। 

অনিবার্য ভাবে ভীমসেনের সংসারে শুরু হয় দুই সতীনের কোন্দল। কথায় কথায়, উঠতে বসতে ঝগড়াঝাটি; শুরু হয় উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়। প্রবল সরগরম, অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে ভীমসেনের সংসার। এর নেপথ্যে কার ভূমিকা বেশি, সুনন্দা নাকি বৎসলা, সে নিয়েও রয়েছে মতানৈক্য৷ দুই নারীর কোন্দল নিয়ে দুভাগে ভাগ হয়ে যায় ভীমসেনের বন্ধুমহলও। রাঘবেন্দ্র জানাচ্ছেন, 'মা (সুনন্দা) খুব বেশি পড়াশোনা করেননি। তাঁর মধ্যে গ্রাম্য ভাবধারার মানসিকতা বেশি। সে তুলনায় উনি (বৎসলা) প্রভূত ব্যক্তিত্বময়ী, শিক্ষিতা, গুণী। ঘরে তাঁর কর্তৃত্ব এবং দাপট দুইই ছিল সর্বাধিক। এমনকি বাবাকেও তিনি নিজের মত পরিচালনা করতেন। অসমতুল ব্যক্তিত্বের সংঘাত সেখানে অনস্বীকার্য।' জোশী পরিবারের শুভানুধ্যায়ীদের একাংশের মতে, এতকিছু সত্ত্বেও সুনন্দা সবকিছু মানিয়ে নিতে চলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু একদিন ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে। জানা যায়, এক পারিবারিক অনুষ্ঠানের আসরে সর্বসমক্ষে বৎসলা সুনন্দাকে 'দাসী' এবং তাঁর সন্তানদের 'দাসীপুত্র' বলে অপমান করলে, চোখের জলে এক কাপড়ে সন্তানদের নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যান সুনন্দা। আর ফিরে আসেননি। ভীমসেন তখন অনুষ্ঠান করতে গেছেন বরোদায়। ফিরে এসে দেখেন, ঘর খালি। শোকে, দু:খে পাথর হয়ে যান ভীমসেন৷ কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতে পারেননি। 

৪. 
'আবার তাহারে কেন ডেকে আনো?
কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে?' - জীবনানন্দ দাশ

এরপর কেটেছে দীর্ঘ দু দশক। 

আলাদা হয়ে গেছে দুটি ঘর। ভেঙে গেছে সংসার। শুধু ঘরই নয়, হৃদয়ও; 'দ্বিখণ্ডিত' হয়েছেন ভীমসেন নিজেও। প্রথম 'খণ্ড' তাঁর পুণের নবি পেঠের কোকিলা চাওয়ালে, পরবর্তী কালে 'বাগেশ্রী'তে, সেখানে সুনন্দার বাসস্থান। দ্বিতীয় 'খণ্ড'টি পুণের অপর প্রান্তে ভাণ্ডারকর রোডের বাড়ি, বৎসলা ও তাঁর সন্তানদের নিয়ে, পরবর্তীতে যা স্থানান্তরিত হবে 'কলাশ্রী'তে। 

রাঘবেন্দ্র জানাচ্ছেন, সুযোগ পেলেই 'বাগেশ্রী' আসতেন পণ্ডিতজি৷ ছেলেমেয়েদের দেখতে, স্ত্রী সুনন্দাকে দেখতে৷ দ্বিতীয় স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও প্রথম স্ত্রী ও তাঁর সন্তানদের দেখভালের দায়িত্ব নিতে কার্পণ্য করেননি তিনি৷ দিনের শেষে আবারও ফিরে যেতেন ভাণ্ডারকর রোডে। এ নিয়ে দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর সঙ্গে মনোমালিন্য কম হয়নি। তবু সব কিছু অগ্রাহ্য করে শেষদিন পর্যন্ত যথাসম্ভব সাহায্য করে গেছেন সকলের 'ভীম আন্না'।

কিন্তু এই বিশটা বছর প্রচুর ঝড়ঝাপটা গেছে ভীমসেনের উপরে। সংসারের টানাটানি, দুই পরিবারের সংঘাত, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, ভালোবাসা-ঘৃণা, মনস্তাপ-মনোমালিন্যের ধাক্কা, সর্বোপরি নিজের 'স্বপ্নের সংসার' ভেঙে যাওয়ার হতাশা, অবসাদে ভীমসেন জোশী তখন ক্ষতবিক্ষত। মনের জ্বালা জুড়োতে শরণাপন্ন হয়েছেন সুরার, সকাল বিকেল তখন মদই তাঁর প্রেয়সী। শুনতে আশ্চর্য লাগলেও, ভয়াবহ 'অ্যালকোহলিক' হয়ে পড়েন তিনি। এতটাই সুরাসক্ত যে মদের বোতল ছাড়া চলতে পারতেন না এক-পাও। অনুষ্ঠানের সময়েও একলা গ্রীনরুমে গলা ভিজিয়ে স্টেজে উঠতেন। গান শেষে তাঁকে ধরে ধরে দাঁড় করাতে হত। ভীমসেন-ঘনিষ্ঠ বি আচরেকর জানাচ্ছেন, 'অতিরিক্ত মদ্যপান প্রভাব ফেলেছিল তার কন্ঠে এবং গায়কীতেও। ভীমসেন কখনো সুরভ্রষ্ট হননি, মদের নেশায় চূড় থাকলেও তাঁর রাগদারি বা আলাপ আওচারেও কখনো তা প্রভাব ফেলতে পারেনি; কিন্তু অনেকবার এমন হয়েছে একটি রাগ গাইতে গাইতে তিনি অজান্তেই ঢুকে পড়েছেন অন্য রাগে; সঙ্গতকারদের ইশারায় সম্বিৎ ফিরে পেয়ে আবারও ফিরে এসেছেন নির্দিষ্ট রাগে...ভীমসেনের জন্য যা অনায়াস, তা অন্য শিল্পীদের ক্ষেত্রে আত্মঘাতী হওয়ার জন্য যথেষ্ট।' বৎসলা অনেক চেষ্টা করেছিলেন তাঁর এই মদের নেশা ছাড়ানোর। দীর্ঘ ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে অবশেষে পারিবারিক আধ্যাত্মিক গুরু রাঘবেন্দ্র স্বামীর (যার নামে ভীমসেন জোশীর বড়ছেলের নামকরণ) আশ্রমে তথা আধ্যাত্মিক চেতনা উন্মেষে ভীমসেন দেরীতে হলেও মদের নেশা থেকে মুক্তি পান। কিন্তু এতটা ধকল সহ্য করতে পারেননি বৎসলা। ১৯৭২ সালে ম্যাসিভ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের শিকার হন বৎসলাও।

শুধুমাত্র পারিবারিক কোন্দল এবং ভাঙনের তীব্রতর মানসিক যন্ত্রণা থেকে নিবৃত্তি পাওয়ার জন্য তিনি মদের ভক্ত হননি; অনেকেই বলেন এর নেপথ্যে রয়েছে তাঁর গুণগ্রাহী মো-সাহেব দের তাঁকে নিয়ে 'মাতামাতি'। জোশী পরিবারের অনেকেই মনে করতেন, মো-সাহেবদের তাঁকে নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত 'মেকি' ভক্তিপ্রদর্শন ও মদের বোতল উপহার স্বরূপ দেওয়া, ভীমসেন জোশীর মত মানুষকেও ঠেলে দিয়েছিল বিপদের মুখে। রাঘবেন্দ্র জানিয়েছেন, একাধিকবার মদ্যপ অবস্থায় বাড়ি এসেছেন 'ভীম আন্না'। কান্নাকাটি হুলুস্থুল বাঁধাতেন। সন্তানরা তাঁর সেই রূপ দেখে ভয় পেত। মা অনিচ্ছাসত্ত্বেও তাঁকে সামলাতেন। মদের নেশায় ঘরের এককোনে পড়ে থাকতেন ভীমসেন, মা তাঁর জুতো খুলিয়ে দিতেন, পালটে দিতেন জামা। সকালে উঠেই বেরিয়ে যেতেন। তখন তিনি অন্য মানুষ। মজার বিষয়, দ্বিতীয় পক্ষের সঙ্গে বিবাহের প্রায় ১১ বছর পার করে প্রথমা স্ত্রীর কোলে সন্তান জন্ম দেন ভীমসেন, সুনন্দার গর্ভে ভীমসেনের ছোটছেলে আনন্দের জন্ম হয় ১৯৬২ সালে। 

রাঘবেন্দ্র জানিয়েছেন, একটা সময় তিনি আর ভান্ডারকর রোডের বাড়িতে যেতেন না। অপমান আর ঘৃণার অনুদান বাবদ মাত্র ২০০ টাকা নিতে তাঁর ভালো লাগত না। ছোটভাই আনন্দ জোশী সেই টাকা নিয়ে আসতেন। তিনি জানিয়েছেন, বাড়ির চাকর-বাকরও বুঝি এতটা অপমানিত কখনো হননি; যতটা তিনি ও তাঁর পরিবারকে সহ্য করতে হয়েছে৷ সবচেয়ে দু:খের, সত্তরের দশকের মাঝামাঝি মা সুনন্দা দীর্ঘ রোগভোগের পর প্রয়াত হন। যে-দিন সুনন্দা জোশী মারা যান রাঘবেন্দ্র ফোন করেন তাঁর বাবাকে। ভীমসেনের গলা শুনে বুঝতে পারেন, তিনি মদের নেশায় আচ্ছন্ন। ফোনে স্ত্রীবিয়োগের খবর শুনে তিনি বলেন, ব্যস্ত আছেন। অনুষ্ঠানে বেরোতে হবে। নির্লিপ্ত কণ্ঠে নির্দেশ দেন, রাঘবেন্দ্র যেন সব কাজ করেন। 'ক্ষোভে দু:খে অপমানে পাথর হয়ে গিয়েছিলাম। ইনিই আমার বাবা! ভারতবিখ্যাত খেয়ালগায়ক, কিংবদন্তি গায়ক ভীমসেন জোশী? এতটা নিষ্ঠুর তিনি হলেন কী করে?' - এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন জোশী-পুত্র। পিতৃ আজ্ঞা পালন করে মায়ের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করেন রাঘবেন্দ্র। অনেক পরে, সম্বিৎ ফিরে পেতে শ্মশানে দৌড়ে এসেছিলেন ভীমসেন। সেখানে তখন পোড়া কাঠ ছাড়া আর কিছুই তেমন অবশিষ্ট ছিল না৷ শ্মশানের একপ্রান্তে তিনি বসেছিলেন সারারাত। 

৫. 
'তখন কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই আমি
সকল খেলায় করবে খেলা, এই আমি' - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

২০ জানুয়ারি, ২০১১ সাল। 

পুণের সহ্যাদ্রি সুপার স্পেশালিটি হসপিটালে ভর্তি রয়েছেন ৮৯ বর্ষীয় 'ভারতরত্ন' পন্ডিত ভীমসেন জোশী। বাইল্যাটেরাল নিমোনিয়া ও গ্যাসট্রোইন্টেস্টিনাল ব্লিডিং এ আক্রান্ত তিনি। শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যার কারণে দিতে হয়েছে ভেন্টিলেটর সাপোর্ট। রয়েছে কনভালশন, চলছে ডায়লিসিস। 

কয়েকদিন আগেই সামান্য সুস্থ হয়েছেন তিনি। তখনও পুরোপুরি বিপন্মুক্ত নন। ডেকে পাঠান বড়ছেলে রাঘবেন্দ্রকে। বাবাকে দেখতে তড়িঘড়ি হাসপাতালে ছুটে আসেন রঘু। সে সময় এক নার্স ছাড়া আর কেউ ছিল না পন্ডিতজির কাছে। ছেলেকে কাছে ডেকে নেন তিনি, হাত টেনে নেন বুকে। চোখ বন্ধ করেন, কাঁপতে থাকে ঠোঁট। 

রাঘবেন্দ্র জানিয়েছেন, সে এক অদ্ভুত মুহূর্ত যা ভাষায় ব্যাখা করা যায় না। হাতে অজস্র চ্যানেল, মুখে অক্সিজেন মাস্ক - বাবাকে দেখতে অনেকটা 'শরশয্যায় শায়িত ভীষ্মে'র মত লাগছিল৷ তাঁকে দেখে আমার দুচোখ দিয়ে উপচে পড়ছে জল, সমস্ত রাগ-অভিমান-ঘৃণা ধুয়েমুছে যাচ্ছে সে-ই জলে৷ বাবা তাঁর ও অন্যান্য ভাইবোনেদের খবর নেন। খোঁজ নেন তাঁর স্বাস্থ্যের, চাকরির। 

নিজেকে আর সামলাতে পারেননি রাঘবেন্দ্র। বাবাকে প্রশ্ন করেন, কেন এত নিষ্ঠুর হলেন তিনি? যে মানুষ আভোগী, যোগীয়া, টোড়ি বা ভৈরবীর মত রাগ গেয়ে শ্রোতাদের মোহিত করেন, আনন্দাশ্রু পাত ঘটান, এক অন্য নির্মল জগতের দর্শন করান, সেই তিনি কী করে তাঁর স্ত্রী, সন্তানদের প্রতি এতটা নির্মম হলেন? কী করে সম্ভব হল তা? ছেলের মুখে এই প্রশ্ন শুনে চোখ বুঁজে ফেলেন ভীমসেন। অবারিত, অনর্গল ঝরনাধারা নেমে আসে তাঁর গাল বেয়ে। কাঁদতে থাকেন তিনি, নি:শব্দে৷ রাঘবেন্দ্র বলেন, বাবার চোখে জল দেখে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছিল আর এও ভাবছিলাম - ঈশ্বরও কাঁদেন? তাঁরও চোখে জল আসে। বাবার করবদ্ধ হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরেন তিনি। 

সেদিন ভিজিটিং আওয়ার্স শেষে ভীমসেন তাঁর পুত্রের কাছে শেষ আবদার রাখেন। একটা গান, শুধু একটা গান যদি সে শোনায়! পরম আবেগে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন রাঘবেন্দ্র। তারপর বাবার কথামতো শোনান গান, যোগীয়ায় নিবদ্ধ ভজন। চোখ বুঁজে সে গান শোনেন ভীমসেন। তাঁর মুখে ফুটে ওঠে অনাবিল হাসি। গান শেষ হলে সেই কেবিনের একমাত্র শ্রোতা, নার্সকে ডেকে বলেন গর্বিত কণ্ঠে, 'মাঝা মুলগা, মাঝা মুলগা আহেস!' অর্থাৎ দেখো, এই হল আমার ছেলে...সেদিন ওষুধ খেতে হয়নি, দীর্ঘদিন বাদে ছেলের হাত বুকে চেপে পরম শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন ভারতশ্রেষ্ঠ গায়ক, কিরানা ঘরানার প্রবাদপ্রতিম শিল্পী ভারতরত্ন পন্ডিত ভীমসেন জোশী।

এই ঘটনার চারদিন পর ২৪ জানুয়ারি, ২০১১ সালে অনন্তলোকের শাশ্বত সুর সাধেন ভীমসেন জোশী। শেষ হয় একটা কালখণ্ড৷ যার নির্মল, স্নিগ্ধ আলোকিত দিকটি চিরকাল রাগরাগিনীর মায়াবী আলোয় ঢেকে রেখেছিলেন ভীমসেন; রক্তমাংসের মানবিক সত্ত্বাকে কখনো প্রকাশ্যে আনেননি তিনি। রাঘবেন্দ্র জানিয়েছেন, তাঁর বাবা ভীমসেন নিজেই বিশ্বাস করতেন - 'For music, even your body has to become an instrument' - সেখানে সুর, বেসুর দুই সমান লয়ে বাজে। 

দুই'ই সত্য, শাশ্বত; যার ক্ষয় নেই। 


তথ্যসূত্র:

1. Raghavendra Bhimsen Joshi, Bhimsen Joshi, My Father, Oxford University Press, 2016
2. Kasturi Paigude Rand, Pandit Bhimsen Joshi: Celebrating his Centenary, Publications Division, 2021
3. Vamanrao Deshpande, Gharandaj Gayaki, Mauj Prakashan, 1985
4. Mohan Nadkarni, Bhimsen Joshi: The Man & His Music, Prism Books, 2003
5. কুমারপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, কুদরৎ রঙ্গিবিরঙ্গি, আনন্দ পাবলিশার্স, ২০১৪
6. ঐ, খেয়াল ও হিন্দুস্থানি সঙ্গীতের অবক্ষয়, দে'জ পাবলিশার্স, ২০১৬
7. Raghabendra Joshi, ‘I wonder how a man as soft as you could be so cruel with his own family', Bangalore Mirror, November 7, 2013
8. Suanshu Khurana, 'Centenary: The Making of Pandits Bhimsen Joshi', The Indian Express, April 15, 2022
9. Lhendup G Bhutia, A Belated Acknowledgement, Open Magazine, November 27, 2013
10. Sahapedia, Bhimsen Joshi, October 2021

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন