দোঁহা

অরিত্র দ্বিবেদীর কবিতা



"এ জীবনী পরাণ-ভ্রমর"


১.
পৃথিবীর মেঘেরা ছোট হয়ে আসছে।
ঝরে...পড়ছে আকাশ থেকে। 
গত শতাব্দীর সেই বিকেলে এ বিষয় সংক্রান্ত দুশ্চিন্তা তুমি ব্যক্ত করেছিলে, কিন্তু কী একটা মনগড়া কবিতায় কমাটা সঠিক বসাতে পারছিলাম না বলে, আমি ঘেঁটেছিলাম। অভিযোগ ছিল বেশখানিক।

তুমি সাবধান করেছিলে, "শুনছেন? ঝড় বেড়ে উঠবে কিন্তু একদিন, এভাবেই চলতে থাকলে"...
ধুস্, আমি পাত্তাই দিইনি, তোমায় ছেড়ে তখন অসূর্যম্পশ্যা মেয়েটিকে দেখছি নিবিষ্টে, কেমন আলো ধুইয়ে চলেছে পায়ে পায়ে, কী সুন্দর রাঙা দুটি পা!

গত শতাব্দীতে শেষ কী কথা বলেছিলে আজ আর মনে পড়ে না! এখন গরম বাড়ছে। ঝড় চলছে প্রতি বিকেলে। আমি কমা মুছে ফেলেছি সব, যাদের ঘরে আলো ঢুঁ মারেনি, তাদের ঘরও মিশিয়ে দিয়েছি ধুলোয়।

আবহাওয়া পরিবর্তন নিয়ে P.Voosen এর প্রবন্ধে কিন্তু তোমায় নিয়ে লেখা রয়েছে, ২৫ সালের জানুয়ারিতে, আমি পড়েছি। অথচ তুমি আপাতত নিখোঁজ, গ্রহান্তরে। আমার ঝড়ঝাপ্টি জীবন তোমার পছন্দ হয়নি কোনোকালেই!

গতবছরের শেষাশেষি প্রাচীন DNA স্যাম্পেল মিলেছে সারা পৃথিবী জুড়ে, U, A, G বিভিন্ন অংশে আর প্রোটিন সংশ্লেষে বোঝা গিয়েছে শত শত কিলোমিটার জুড়ে মানুষ আসলে এক! একথা তুমি শুনেছ কি না জানি না, শুনলে কোনো অংশ ছেড়ে যেও অনুভূতির...

এ প্রস্তাব আমাদের এক করে এনেছে ঘুম,
সংশ্লিষ্ট স্বপ্নে কেমন জড়িয়ে রেখেছে আমাদের ভয়! তাই বুঝি তফাৎ বজায় রেখেছ 
দ্রাঘিমার নিবিড় অস্পষ্ট অসম্ভবে? তুমি জানতে, আমরা আদতে এক বংশোদ্ভূত!

D.R.Schield কি এটাকেই তবে বলেছেন sexual selection? এই তোমার আমায় বাদ দেওয়াকেই?

আকাশগঙ্গার মাঝামাঝি, যেখানে Sagittarius A রয়েছে, এই ডিসেম্বরের সকালে শুনলাম, সেখানে নাকি একটা binary star system D9 এর খবর মিলেছে। পৃথিবীর অনুরূপ গ্রহের সন্ধানও খুব দূর নয়!

আমাদের ঝড়ঝাপ্টি পেরিয়ে ওদিকে
পৌঁছতে পেরেছ কি না জানিও, 
আমি অপেক্ষায়! আশায় আছি তোমার করুণ মুখটা দেখতে পাব সেই দিব্য দুর্বিপাকে, যেখানে একসঙ্গে পাক খায় কৃষ্ণগহ্বর আর নিয়তি তাড়িত নক্ষত্র D9, কিন্তু সঠিক জানি, তুমি একটু একটু এগিয়ে যাবে ওই নিকষ কালো, সর্বস্বের দিকে।

Florian PeiƁker আবিষ্কারের মুহূর্তে তোমায় দেখতে পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন, সেই একই ধূলিধূসরিত পোশাকে, হাতে ছোট্ট কফি মাগ, সত্তর দশকের চশমা আঁটা চোখ আর সামনের টেবিলে ছড়ানো বাংলা কবিতা...

আমার কোনো বই হচ্ছে না আগামী দিনে, পৌঁছে দেব। ঠিকানা বদল কোরো না লক্ষ্মীটি, কেমন?

৪ 
নতুন মোড়কে আজকাল লিখছি আর লেখার সরঞ্জাম ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলছি বারান্দায়, সেখানে একটা পাহাড়ের মতন হয়ে রয়েছে। 

Keith Cooper বলছেন, আলোর বেগে cosmic রশ্মি ছুটে ছুটে সৌর জগতে ধাক্কা মারছে অবিরত। তৈরী হচ্ছে ২০০ gigaelctronvolt energy, gama রশ্মি নির্গত হচ্ছে সূর্য থেকে! আমি উত্তেজিত হয়ে পড়ছি আরও বেশি করে!

কবিতা লেখা আমার দ্বারা হবে না জেনে
বাঁক বদল করে পালাতে চাইছি দূরে
যে দূরত্বে আমারও খবর পাবে না তুমি। নজরদারির রাস্তা চিরতরে বন্ধ করে দেবো। পৃথিবী সুন্দর ভুলে যাবে আমায়, আমিও ভুলব সহজে!

গূঢ় বিশেষণ নিয়ে মাথা ঘামাব না। পড়ব না বিজ্ঞান বিষয়ক নতুন প্রবন্ধ। শুধু তোমার অপার্থিব চোখটি মনে থাকবে! Vela Pulsar কে যেমন ভেবেছিলেন বিজ্ঞানীরা, ভেবেছিলেন যেমন তোমার চোখের মতন, সেখান থেকে কোটি কোটি gama রশ্মি বেরিয়ে আসছে প্রতিনিয়ত...

তুমি ভুলে যাবে আমায়।  
আমিও ভুলে যাব তুমি আপাতত নিখোঁজ, গ্রহান্তরে। আমার ঝড়ঝাপ্টি জীবন তোমার পছন্দ হয়নি কোনোকালেই!



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন