দোঁহা

পিরীতির তিরিশ বছর, কেউ কথা রাখুক না রাখুক- শাহরুখ রেখেছে

 


 ডঃ মেঘদূত রুদ্র

 

আজ ২৫শে জুন, অভিনেতা শাহরুখ খানের চলচ্চিত্র অভিনয় জীবনের তিরিশ বছর

পূর্তি। 

 

তিরিশ বছর আগে আজকের দিনটিতে মুক্তি পেয়েছিল শাহরুখ খান অভিনীত

প্রথম ছবি ‘দিওয়ানা’। পরিচালক রাজ কনওয়ার। উর্দু শব্দ দিওয়ানার অর্থ হল

‘ক্রেজি লাভার’, বাংলায় পাগল প্রেমিক। হেমা মালিনী পরিচালিত ‘দিল আসনা হ্যায়’

ছবিটিতে শাহরুখ প্রথমবারের জন্য চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান। কিন্তু বিভিন্ন

কারণে ছবিটির রিলিজ পিছিয়ে যাওয়ায় ১৯৯২ সালের ২৫শে জুন মুক্তি পাওয়া

‘দিওয়ানা’-ই হয়ে ওঠে শাহরুখের ডেবিউ ফিল্ম। ছবিটিতে পর্দায় শাহরুখের আগমন হয়

ছবির দ্বিতীয়ার্ধে এক ঘন্টা কুড়ি মিনিটের মাথায়। সাধারণত নায়ক হিসেবে ডেবিউ

ছবিতে কোনো অভিনেতার পর্দায় আগমন এতো দেরি করে হয়না। সে যেহেতু ছবির

সারপ্রাইজ প্যাকেজ, প্রথমবার দর্শক তাকে দেখবে, ফলে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত

তাকে কেন্দ্র করেই ছবির গল্প আবর্তিত হয়। যেরকম আমরা হৃত্তিক রোশনের ‘কহো

না…প্যায়ার হ্যায়’ কিম্বা রনবীর কাপুরের ‘সাওয়ারিয়া’ ইত্যাদি ছবিতে দেখেছি। কিন্তু

এক্ষেত্রে তা হয় না। ফলে নিজেকে প্রমাণ করার জন্য শাহরুখের হাতে রইল ছবির

দ্বিতীয়ার্ধের মাত্র এক ঘণ্টা পনেরো মিনিট। কিন্তু কেন এমন হল তা জানার জন্য

ছবির প্রথমার্ধের ঘটনাগুলিকে খুব সংক্ষেপে বলে তারপর শাহরুখের পর্দায় আগমনের

দৃশ্যটা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছি।

 

শাহরুখ ছাড়া ছবিতে অভিনয় করেছিলেন ঋষি কাপুর ও দিব্যা ভারতী। এর আগে ছবির

গল্পে আমরা দেখেছি যে রাজ পরিবারের একমাত্র সন্তান কুমার রবি প্রতাপ অর্থাৎ

ঋষি কাপুর আর আর নায়িকা কাজল অর্থাৎ দিব্যা ভারতী একে অপরের প্রেমে পরে

এবং এবং তাদের বিয়ে হয়। রবি একজন গায়ক। ভালো প্রেমিক। সে গান গায়। তারা

একসাথে নাচ-গান করে। সুখের সংসার। কিন্তু তাদের এই সুখ বেশিদিন স্থায়ী হয় না।

সম্পত্তির লোভে রবির কাকা ধীরেন্দ্র প্রতাপ (অমরেশ পুরি) রবিকে হত্যা করার

পরিকল্পনা করে এবং একটা সময় পরে ধীরেন্দ্রর ছেলের হাতে রবি খুন হয়। হাতের

মেহেন্দির রঙ ওঠার আগেই কাজল বিধবা হয় এবং প্রাণের ভয়ে রবির মা কাজলকে

নিয়ে মুম্বাইতে পালিয়ে আসে। দুঃখিনী, বিরহিণী কাজলের জীবন সম্পর্কে হতাশা

জন্মায়। এইরূপ পরিস্থিতিতে একটা নাটকীয় দৃশ্যে মাতৃসমা শাশুড়ি আর কাজলের মধ্যে

কিছু কথা হয়-

 

কাজল- আমি বেঁচে থাকতে চাইনা। একটা দম বন্ধকরা চিৎকার আমার বুকের ভেতরে

আটকে আছে। প্রতিনিয়ত বাইরে বেরিয়ে আসার জন্য ছটফট করছে। আমি কী করব মা,

আমি কী করব?

শাশুড়ি মা- ভরসা রাখ মা, ভরসা রাখ। সময়ই তোর ক্ষত একদিন ঠিক সারিয়ে দেবে।

 

আর এই সময়ের ডাকেই পরের দৃশ্যে পর্দায় আবির্ভূত হন শাহরুখ খান। বাইকে চেপে

শহরের রাস্তা দিয়ে আমরা আসতে দেখি শাহরুখ’কে। একটা গানের প্রিলিউড শুরু হয়।

এক মিনিট পঁচিশ সেকেন্ড ধরে বিভিন্ন শটে তাকে আমরা বাইক চালাতে দেখি। বহু

ঘটনার সাক্ষী সিনেমা নামক শিল্প মাধ্যমটি এক মিনিট পচিশ সেকেন্ড ধরে স্বাগত

জানাতে থাকে তার নবীনতম নায়ককে।

 


আমরা বুঝতে পারি এই নায়কই ছবিতে এরপর দুঃখিনী নায়িকা কাজলের জীবনে আশার আলো হয়ে আসবে। ভুলিয়ে দেবে তার দুঃখ।

কীভাবে হবে বাকি ছবিতে আমরা তা দেখার একটা মানসিক প্রস্তুতি নিতে থাকি। এরপর

শাহরুখের লিপে শুরু হয় গান, ‘কোই না কোই চাহিয়ে প্যায়ার করনে ওয়ালা’। সাড়ে ছয়

মিনিটের এই গানের বিভিন্ন দৃশ্যে শাহরুখকে বিভিন্ন ভঙ্গিতে আমরা দেখতে পাই।

 

কখনও ও চলন্ত বাইকের ওপর উঠে লাফাতে থাকে, কখনও দু’হাত ছেড়ে বাইক চালায়,

কখনও ব্রিজের ওপর থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সাদা চোখে পপুলার সিনেমার এসব অবাস্তব

দৃশ্য দেখে আমরা ভাবি যে, যুগে যুগে যেভাবে হিরোইজম দেখিয়ে নায়করা নায়িকাদের মন

জয় করেছে এখানেও হয়ত সেটাই হতে চলেছে। কিন্তু গানের মাঝে আরও কিছু

ইন্টারেস্টিং দৃশ্য দেখানো হয় যেগুলো আমাদের অন্যরকম কিছু ইঙ্গিত দিতে থাকে ।

গানের একটি দৃশ্যে দেখা যায় যে সমুদ্রে কিছু মেয়ে স্নান করছে। শাহরুখের এক বন্ধু

মেয়েদের দিকে ছুটে যায় কিন্তু শাহরুখ যায় না। অতএব বোঝা যায় যে সে প্রেমিকার

জন্য অপেক্ষারত। শুধুমাত্র শরীর তাকে আকর্ষণ করে না। গানের কথাতেও তারই

প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই। “দিলো জান লুটায়েঙ্গে হাম তো উসি পর/ সাথ মে

বিতায়েঙ্গে শাম-ও-সেহের…’। আমি তার চরণেই প্রেম নিবেদন করবো/ সকাল বিকেল

তার সাথেই থাকবো। অর্থাৎ নায়িকা কাজলের জন্য এই সঠিক পুরুষ। 

 

কিন্তু পর্দায় শাহরুখের এই আগমন কে শুধু এটুকুতেই আটকে রাখলে চলবে না। আমাদের আরও কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে হবে। নইলে এই নায়ক ছবির নায়িকা কাজলের সাথে সাথে কীভাবে আগামী বেশ কিছু বছরের মধ্যেই গোটা পৃথিবীর নারীদের জীবনে আশার আলো হয়ে আবির্ভূত হল সেই ব্যাপারটা আমরা কিছুতেই বুঝতে পারবো না। মেয়েদের সুখের সাথী আর দুঃখের বন্ধু হয়ে ওঠার এই গোপন রহস্যটাও বুঝতে পারবো না। নিজেরা

ব্যর্থ হবো আর রাগ দেখাবো শাহরুখের ওপর। তিনি ধর্মেন্দ্র, দেব আনন্দ এদের মতো সুদর্শন ছিলেন না। সেই সময় সঞ্জয় দত্ত, সানি দেওল আর সলমন খানের মতো স্বাস্থ্যবান ছিলেন না। অ্যাকশন পারতেন না। অমিতাভের মতো বিরাট লম্বা আর দারুণ কণ্ঠস্বরের অধিকারী ছিলেন না। মিঠুন,গোবিন্দার মতো নাচতে পারতেন না। আমির খানের মত চকলেটি লুকও ছিল না। তাহলে সেই সময় কেন তিনি সফল হলেন? সেটা বুঝতেই এই গানের আলোচনাতেই আবার ফিরে আসি। 

 

গানের পরের একটি দৃশ্যে খেলার পোশাক পরা কিছু মেয়েদের সাথে শাহরুখ আর

তার বন্ধুদের নাচতে দেখা যায়। মেয়েরা উচ্ছ্বল। বন্ধুরা শাহরুখকে ইশারা করে যে

এদের মধ্যে থেকেই কাউকে পটিয়ে নে। শাহরুখ মিষ্টি করে ইঙ্গিত করে যে ‘না’। এর পর গানের লাইন গুলি হল ‘ উস চান্দ কে টুকরে কো সিনে সে লাগা লুঙ্গা/ উস রেশমি মুখরে কো আঁখও মে ছুপা লুঙ্গা/ দিওয়ানা মুঝসা না মিলেগা উসকো/ ইস জমি সে লেকে সারা আসমান তক’। অর্থাৎ মেয়ে দেখলেই প্রেম করার জন্য সে পাগল হয় না। কিন্তু তার

পছন্দের জীবন সঙ্গিনীকে সে যখন পাবে তখন তাকে পাগলের মতো ভালবাসবে। এবার

এই ধরনের প্রমিস বহু লোকই করে। কিন্তু তাদের কথায় আর কাজে তেমন মিল পাওয়া

যায় না। এটা সবসময় যে তারা খুব ইচ্ছে করে করে তা নয়। প্রকৃতিই পুরুষদের মধ্যে

সেন্সিবিলিটি আর রেস্পন্সিবিলিটির একধরণের অভাব রেখে দিয়েছে, আর সেটাই

তাদের কাজে উঠে আসে। তারা কথা রাখে না। কিন্তু কেউ কেউ রাখে। দিওয়ানা ছবির

বিভিন্ন দৃশ্যে শাহরুখকে আমরা কখনও খুবই ইন্টেন্স ভাবে দিব্যা ভারতীর চোখের

দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখি, কখনও আবার নিজের সর্বস্ব উজাড় করে দিয়ে

প্রেমিকাকে বুকে জড়িয়ে ধরতে দেখি, পুরুষ হিসেবে একজন মেয়ের সামনে কর্তৃত্ব

ফলাতে দেখি না বরং প্রণয়প্রার্থী হিসেবে আকুল প্রার্থনা করতে দেখি, কাঁদতেও

দেখি। অর্থাৎ এই পুরুষ তার প্রমিস রেখেছে।

 

এজন্যই সে অন্যদের থেকে আলাদা। প্রথম দর্শনে সাদা চোখে যেগুলো বোঝা যায় নি। এবার এগুলো তো চিত্রনাট্যে লেখা ছিল। কিন্তু অভিনয়ের মাধ্যমে কীভাবে সেগুলো প্রকাশ করতে হবে সেটা কোথাও লেখা থাকে না। ওটা কখনও অভিনেতার চরিত্রের নিজস্বতা আবার কখনও দীর্ঘদিনের আন্তরিক অভ্যাসের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। শাহরুখের ক্ষেত্রে দুভাবেই এসেছে। শাহরুখ বেছে বেছে সেই চরিত্রগুলিরই অভিনয় করে যেগুলো তার নিজের মতো। এছাড়া প্রকৃতি পুরুষদের মধ্যে বিপরীত গুণাবলীর দর্শণীয় সমাবেশ ঘটায় নি। একজন পুরুষ সাধারণভাবে একই সাথে শান্ত, ধীর, স্থির আবার একই সাথে অশান্ত, অধীর, অস্থির হতে পারে না-মেয়েরা পারে। কিন্তু শাহরুখের মধ্যে এই বিরল গুণ আছে। এই গানের কথা আর পিকচারাইজেসনেই সেটা বোঝা যায়। সে একইসাথে উচ্ছৃঙ্খল আবার একইসাথে সেন্সিবল। একইসাথে কেয়ারলেস আবার একইসাথে কেয়ারফুল। একইসাথে ফিচেল আবার একইসাথে পাগল প্রেমিক।

দৃষ্টি কখনও পাগলের মতো আবার কখনও শিশুর মতো। কখনও অগোছালো আবার

কখনও পরিপাটি দিওয়ানা ছবিতে এরকমই একটা চরিত্রের চাহিদা ছিল। যেটা সেই সময়

আর কেউ করার জন্য প্রস্তুত ছিল না। চাইলেও করতে পারতো না। এর আগেও কোনো নায়ক এটা করতে পারেনি আর এখন অবধিও নতুন কেউই পারেনি। এবং পরবর্তীকালে শাহরুখের গোটা ফিল্মোগ্রাফি দেখলে প্রতিটা চরিত্রের মধ্যে ( কয়েকটা নেগেটিভ চরিত্র বাদ দিয়ে) এই বিষয়গুলি দেখা যাবে। আর এই বিষয়গুলির জন্যই সে হয়ে উঠেছিল মেয়েদের স্বপ্নের প্রেমিক। গানটির কিছু কিছু দৃশ্যে শাহরুখ কে রাস্তায়

নাচতে দেখা যায়। এবং দেখা যায় চারপাশে প্রচুর মানুষ তার নাচ দেখছেন। এরা কেউই

ভাড়া করা অভিনেতা নয়, সাধারণ মানুষ। শুটিং এর সময় সাধারণত যাদের ফ্রেম থেকে

সরিয়ে দেওয়া হয়, কিন্তু এখানে সরানো হয়নি। তাদের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল নবীনতম

এই নায়ককে বরণ করে নেওয়ার। যেই নায়ক তাদের মধ্যে থেকেই উঠে এসেছে। সাধারণ

মানুষের নায়ক। অনেকটা তাদের মতোই সাধারণ দেখতে। মুম্বাই এর (তৎকালীন বম্বে)

আকাশ, বাতাস, সমুদ্র, রাজপথ আর সাধারণ মানুষ সাক্ষী থেকেছিল নতুন ইতিহাসের।


 

 তবে সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছু বদলে যায়। সৌন্দর্যের সংজ্ঞা বদলে যায়।

মানুষের ভাষা, পোশাক, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদিও বদলে যায়। আর কেউ কেউ হন যিনি

সময়টাই বদলে দেন। যেটা শাহরুখ দিয়েছিল। তাই এই এলোমেলো চুল, ক্যাসুয়াল পোশাক,

মিষ্টি হাসি আর গালের টোল নিয়ে সে হয়ে উঠেছিল নতুন যুগের প্রেমিক। যে একই সাথে

খুব দূরের মানুষ আবার পর মুহূর্তেই একদম কাছের চেনা ছেলে। একইসাথে জটিল আবার

একইসাথে মাটির মানুষ। একইসাথে প্রবল এনার্জেটিক আবার প্রয়োজনে ধৈর্যশীল ও

স্পর্শকাতর। সে মেয়েদের স্বামী বা প্রেমিক হতে পারে কিন্তু তার আগে মেয়েদের

এমন একজন বন্ধু যে তাদের সম্মান করে। তাদের বোঝার চেষ্টা করে। সেই চেষ্টায়

কোনো ত্রুটি রাখে না। এটাই তো রোমান্স। মুক্তির পথ। জীবনে এর থেকে সুন্দর আর আছে টা কি?

 


 'দিওয়ানা' বাম্পার হিট হয়েছিল। বছরের সেকেন্ড বিগেস্ট হিট। শাহরুখ শ্রেষ্ঠ নবাগত

অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছিল। পরবর্তীকালে অবশ্য শাহরুখের পোশাক প্যাটার্ন বদলে

গেছিল। চোখ ঢাকা চুলের স্টাইলও বদলে গেছে। কিন্তু মিষ্টি হাসি আর চরিত্রটা

বদলায় নি। কি সেই চরিত্র আর কি বা সেই পৌরুষ। উত্তর খুবই সহজ। সেই পুরুষ এই

পুরুষ যে একইসাথে ব্যক্তিগত জীবনে এবং পর্দায় নায়ক হিসেবে সহনশীল, প্রেমিকা

তথা মেয়েদের মতামতকে সম্মান জানায়, তাদের ওপর কোনোকিছু চাপিয়ে দেয় না,

কখনও গায়ে পরে জ্ঞান দেয় না, মেয়েরা কিছু জানতে চাইলে মিষ্টি হেসে সেটা বুঝিয়ে

দেয়, ‘দেখ কেমন দিলাম’ ধরনের কথাবার্তা বলে না, দুঃখ পেলে কেঁদে কেটে ভাসিয়ে

দেয়, পাগলের মতো ভালবাসতে জানে আবার অপেক্ষা করতেও যানে। তাই আজ তিরিশ

বছর পরেও মেয়েদের কাছে ওর ক্রেজ একই রকম। বোকা প্রেমিকদের শেষ আশ্রয়স্থল। তবে এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলি থাকার ফলে অনেক ধরণের চরিত্র শাহরুখ করতে পারেনি। বা ইচ্ছে করেই হয়ত করে নি। ‘শাহরুখ আর কি অভিনয় করে’, ‘একই রকম চরিত্রই তো করে’, ‘চক দে ইন্ডিয়া আর স্বদেশ বাদে ভালো সিনেমা আর কি করেছে’, ‘এক্সপেরিমেন্টাল তো কিছুই করল না’ , ‘আমি খানের মত এক্সপেরিমেন্ট তো করতেই পারে না’ এইসব বিজ্ঞ কথা বলে অনেক বোদ্ধা ব্যক্তিরাই নিজেদের ইগো স্যাটিসফাই করে। তা করুক। কিন্তু শাহরুখ যা পারে সেটাই প্রমিস করে। এবং যেটা প্রমিস করে সেটা মেনে চলার চেষ্টা করে। ফলে ও প্রেমিকের রোলই করে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আফসোস করেছিলেন “কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখেনি”। কিন্তু আমরা দেখলাম যে তিরিশ বছর আগের দেওয়া পাগল প্রেমিকের প্রতিশ্রুতি কেউ রক্ষা করে চলেছে। এটাই বা কজন পারে? আমরা দেখলাম কিন্তু বুঝতে পারলাম না। তবে সব কিছুরই একটা শেষ আছে। কালের নিয়মে ওকে একদিন থামতেই হবে। সবাইকেই হয়। হয়ত আর প্রেমিকের চরিত্র করবে না। অন্য চরিত্র করবে। হয়তবা অভিনয়ই ছেড়ে দেবে। তাতে বোদ্ধাদের হয়ত কিছুই যাবে আসবে না। কিন্তু বোদ্ধাদের বাদ দিয়ে সহজ সরল যে দুনিয়া আছে, সেই দুনিয়ার মানুষরা সেদিন ওর অভাব টের পাবে। সেদিন মনে হবে একজন তো ছিল, ‘কই ওইভাবে তো আর কেউ সর্বস্ব দিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে না’, ‘কই ওইভাবে তো আর কেউ দুঃখ ভোলায় না’, ‘কই আর তো কোনো প্রেমিক এই ভাবে চোখের দিকে তাকাল না’, ‘সবকিছু অতিক্রম করে আত্মাকে স্পর্শ করতে পারল না’ । এক ভয়াবহ অস্থির সময়ের মধ্যে দিয়ে আমরা যাচ্ছি। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে করোনার থেকেও ঘৃণা আর বিদ্বেষের সংক্রমণে আমাদের সমাজ অনেক বেশী সংক্রামিত। মত্ত হাঙরের মতো সবকিছুকে কেমন যেন গ্রাস করে ফেলছে। তা সত্ত্বেও আমরা অনেকেই বিশ্বাস রাখছি যে ভালোবাসা

সবসময়ই ঘৃণার থেকে অনেক বেশি সংক্রামক। অনেক দ্রুত তা ছড়িয়ে পরতে পারে, ছড়িয়ে পরবে। মানুষের মনটাকে করে দেবে আকাশের মত বিশাল। এই আস্থা আমরা

রাখছি। এটাই প্রেমিকের কাজ। তিরিশ বছর ধরে একজন প্রেমিক এটা করে যাচ্ছে।

প্রেমিক এর থেকে বেশি আর কি বা করতে পারে?

 


 
গানের লিঙ্ক- https://www.youtube.com/watch?v=0A6WPBsUHHI




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন