অর্জুন উবাচ--২৭
দেখালেন বিশ্বরূপ দিব্যদৃষ্টি দানে
নিয়তি, গন্তব্য আর নির্ধারিত লক্ষ্য
সামনে সংশয়হীন অবাক দেখছি
গৌরভাবে গুড়াকেশ, প্রিয় জ্যোতির্ময়,
সমস্ত ভাবনা আজ নিয়ন্ত্রিত হোক
রূপ আর অরূপের সেতু গড়া
আলোর ছটায় ।
দিব্যদৃষ্টি চোখ থেকে সরে গেলে দেখি
গোপন প্রশ্নেরা মাথা উঁচিয়ে সপাট
শব্দহীন বলে চলে,
অঞ্জলি প্রদান যাঁকে, গোপন অজানা তাঁর ?
মাতুল হত্যার রক্তে রঞ্জিত যে হাত
জরাসন্ধ হত যাঁর ইশারায়
পৌন্ড্রকের ছিন্নমুণ্ড সুদর্শনে
কিংবা শিশুপাল মরে অলৌকিক দেখে,
গোপনে প্রকাশ যাঁর পেশী পরাক্রম
যন্ত্র ও যান্ত্রিক যিনি শ্রেষ্ঠ ষড়যন্ত্রী
গাণ্ডিবী সমস্ত জেনে তাঁর ক্রীড়নক ?
কপট ছায়ায় ভরা ঘৃণ্য রাজনীতি
প্রাপ্তির নেশায় তবু কীটের আহুতি
প্রজ্জ্বলিত অভীষ্টের হিমেল আগুনে।
ক্ষমতা লেজুড় চায় উচ্ছিষ্ট প্রদানে
তবে কি লেজুড়বৃত্তি করা ক্রীতদাস
নির্লজ্জ অনুসরণ অক্ষম পার্থের ?
আদিম প্রবৃত্তি মেনে যুদ্ধের দামামা ?
পরিণাম শুধু ভাসে অসহায় চোখেঃ
স্বজন নিরপরাধ সাধারণ প্রজা
আসন্ন হত্যার যজ্ঞে বিপন্ন সমিধ ।
২৮
হে প্রিয় দেবদত্ত, অযথাই বাজলে
রণপ্রাঙ্গণে বহু বয়সি ধানুকী
হৃদয়ের সীমার বড্ড কাছের, তাই
হতবাক বিমূঢ় গাণ্ডিব। রাজ্যভোগ স্পৃহাও মৃত।
কুলক্ষয়ে মহাপাতক
আসন্ন আগামীর অবজ্ঞা ও অশ্রদ্ধার বস্তু
কী করে বিদারক আলোয় দেখাব মুখ ?
আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হবে অসংখ্য সাদা শাড়ির কান্না,
বিনাশের বেহাগ আর বিজিতের ব্যর্থ আস্ফালন
প্রভু, অযথাই বাজালেন পাঞ্চজন্য।
বয়সি ভবিষ্যৎ ভূপতিত হলে
কী করে আচার ও ঐতিহ্যের পাঠ নেবে অল্পবয়স ?
প্রাণের ভেতরে প্রাণের পূজাই তো ধর্ম
সীমাহীন রক্তক্ষয়ে কোন অলীক ধর্মের রূপায়ণ ?
চোখে ভাসছে, প্রভু, সম্ভাব্য নরক
কী করে পালটাবেন রক্তমাখা আগামীর দৃশ্যপট
যার রূপকার সম্ভবত আপনি ও আমি !
দিব্যদৃষ্টি দানে যা দেখেছি, ভুলে যাই বারবার ।
মাটিতে শেকড় প্রভু আবেগের কাছে ধরাশায়ী
এই মরমী আলো ও আকাশের পৃথিবীতে
কী ভাবে নির্মোহ থাকি হৃদয়ের রক্তপাতে ?
