দোঁহা

ভাইরাস


রবীন বসু

ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে মহাশ্বেতা টেবিলে তার সেল ফোনটা দেখতে পায় না। বিরক্ত হয়। সোফার ওপর, টিভির মাথায়, কিচেনের সেলফে কোত্থাও পেল না। 

    মৌমিতা আজ সকালে কী পোস্ট দিল তা কাজের ঝামেলায় দেখাই হয়নি।  খুব সুন্দর সুন্দর সমাজ ভাবনার উপর লেখে ও। ফেসবুকে মহাশ্বেতা ও তার বন্ধুগ্রুপ মুখিয়ে থাকে মৌমিতার পোস্ট পড়ার জন্য। গতকাল মহাশ্বেতাও একটা মজার পোস্ট দিয়েছিল। লকডাউনে কী করবে, পুরনো অ্যালবাম ঘাঁটছিল। স্কুল লাইফে মাথায় একঢাল কালো চুল ছিল তার। দু'বেণী করে স্কুলে যেত। সেই পিঠময় খোলা চুল কমতে কমতে বিয়ের পর বর্তমানে শূন্য দশা। সকালে স্নান করে ভিজে চুলে অফিস গেলে মাইগ্রেনটা বাড়ে। অগত্যা পার্লার আর চুল ছোট করা। লকডাউনের গৃহবন্দী অবকাশে একটু মজা করতে ইচ্ছে করল। বিভিন্ন বয়সের সেই চুল-ছবির একটা কোলাজ করে ফেসবুকে পোস্টাল। ক্যাপশন দিল "কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে।" তারপর থেকে শুধুই কমেন্ট আর ইমোজিতে ভরে যাচ্ছে ওয়াল। গতকাল রাতে শুতে যাবার আগে পর্যন্ত প্রায় ৫০০ মন্তব্য ও ইমোজি এসেছে। আজ সকালে সেটা কতটা বাড়ল দেখার জন্য মনটা হু-হু করছে। কিন্তু ফোনটাই তো হাওয়া । মাথা ঠিক মত কাজ করছে না। 

     তিন কামরার ফ্ল্যাট। দুটো অপেক্ষাকৃত ছোট রুম ছেলে বিক্রম আর মেয়ে তিতিরের দখলে। বড় বেডরুমটার মাঝখানে প্লাইউডের পার্টিশন দিয়ে স্বামী-স্ত্রী আত্মরক্ষা করছে এই লকডাউন পিরিয়ডের পর থেকে 

     রজত সবে খবরের কাগজটা শেষ করে একটা সিগারেট ধরিয়েছে। এমন সময় কালবৈশাখী ঝড়। 

-"বলি শুনছ? আমার ফোনটা নিয়েছ?" 

-"কী আশ্চর্য! তোমার ফোন আমি নেব কেন?"

-"ন্যাকা। সাধু সাজা হচ্ছে। আমার ফোন যেন মোটেও ঘাঁটো না।"

-"সে দু'একবার নিয়ছি বটে। ব্যালেন্স ছিল না, তাই।"

-"তাই! না অন্য কিছু খুঁজছিলে!"

-"কী আর খুঁজব। সবই তো ওপেন।"

-"ওপেন, মানে? মুখ সামলে, কী বলতে চাইছ?"

-"বলব আর কী। অফিস ছুটির পর তোমার শ্যামলদার সঙ্গে দিলখুশ কেবিনে বস না?"

-"বসি, তো! ওখানকার চা'টা খুব ভালো। খেলে সারাদিনের মাথা জ্যাম আর টেনশন কেটে যায়। ক্যাশে বসলে বুঝতে পারতে, চাপ কাকে বলে।"

-"বুঝছি তো। সেই বিয়ের পর থেকে বুঝছি।"

-"শুধু তুমি একা বুঝেছ?  আমিও হাড়ে হাড়ে বুঝছি। কেন যে দিদির কথায় রাজি হলাম ।"

-"ওঃ! আপশোষ হচ্ছে । তা সেপারেশন দিয়ে দিচ্ছি, তোমার শ্যামলদার গলায় ঝুলে পড়। শুনেছি তিনি তো এখনও ব্যাচেলর।"

-"খবরদার! মুখ সামলে। শ্যামলদার নামে একটাও খারাপ কথা বলবে না । জঘন্য ভাইরাস একটা।" মহাশ্বেতা গলা চড়াতে রজত এবার আরও কয়েক ডেসিমেল বাড়ায়। 

-"এবার কিন্তু খুব বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। আমি ভাইরাস?"

-"হ্যাঁ, হ্যাঁ! তুমি করোনা, কোভিড-১৯।"

-"তুমি তাহলে আরও মারাত্মক, স্পেনীয়-ফ্লু।"

••

-"কী করছ তোমরা? ড্যাডি, মম! এভাবে এত জোরে ঝগড়া করছ কেন? ফ্ল্যাটের অন্য লোকেরা তো শুনতে পাবে। বিচ্ছিরি ব্যাপার হবে।" বাবা-মার ঝগড়া শুনে ছেলে বিক্রম ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে।

- "বলি, তোমাদের ঝগড়ার কারণটা কী?"

-"এই দ্যাখনা, আমার সেলফোনটা পাচ্ছিনা, তাই তোর বাবাকে… "

কথা শেষ হওয়ার আগেই মেয়ে তিতির তার ঘরের দরজা খুলে বাইরে এল। 

-"সরি, মম। আমার নেট প্ল্যান শেষ হয়ে গ্যাছিল, তাই তোমার ফোনটা নিয়ে গেম খেলছিলাম।"

   রজত ও মহাশ্বেতা এবার দু'জন দু'জনের দিকে তাকিয়ে বুঝে নেবার চেষ্টা করছিল কে বেশি ভয়ানক ভাইরাস! 

                              



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন