দোঁহা

টুসসস… বুম!

 

রাজদীপ মজুমদার 

পঞ্চু, ক্লাস সিক্সের ছাত্র। বইয়ের পাতার চেয়ে বেশি ভালোবাসে সার্কিট বোর্ড আর পিতলের স্ক্রু। ওর ঘরে একটা পুরোনো বাল্ব আছে—সেটাকে ঘষে-মেজে বানিয়েছে “টাইম-বাল্ব ১.১”। উদ্দেশ্য? সময় ভ্রমণ—তাও আবার আলপিন, চুইংগাম আর একটা পুরোনো বাল্ব দিয়ে!

ঘড়ির কাঁটা ঠিক দশটা ছুঁতেই, পঞ্চু ‘টাইম-বাল্ব’-এর মধ্যে হাত ঢুকিয়ে কি যেন টিপতেই চারপাশটা থমকে গেল। এক পলকে পুরো পাড়া অন্ধকারে গিলে খেল, যেন কোনো অদৃশ্য ভূত নেমে এসেছে!

...তখনই পঞ্চুর ঘর থেকে শব্দ হলো—“টুসসস... বুম!”
ধোঁয়ার ভেতর থেকে একটা কণ্ঠ হেঁসে উঠল,
“ভালো করে ডেকেছিস, তাই আপডেট হয়ে হাজির হলাম রে!”

চোখ মেলে পঞ্চু দেখে—একটা ভূত বসে আছে।
সাদা ঝকঝকে, গলায় গামছা, চোখে সানগ্লাস, আর হাতে হট-চিপস।

— “আমি ভূতনাথ ২.০! আগে ছিলাম তেঁতুল গাছে, এখন আপগ্রেড হয়ে টেক-ভূত!”

পঞ্চু হাঁ করে বলল, “তুমি কি ভয় দেখাবে?”

— “আমি? না গো! আমি ভয়-ইটারিয়ান! শুধু ভয় খাই!”

— “মানে?”

— “চিৎকার, হাঁকাহাঁকি, ঝরঝর চোখ—এসবই আমার স্যালাড। কিন্তু আজকাল বাচ্চারা ভূত দেখলে চমকে ওঠে না, রিল বানায়!”

পঞ্চু খিলখিলিয়ে হেসে বলল, “তবে ভয় দেখিয়ে আর পেট চলবে না, এবার হেসে চলতে হবে!
আমার একটা প্রজেক্ট আছে—‘হাসি-বাল্ব’।”

— “এইটা আবার কী?”

— “ভূতের হাসি থেকে বিদ্যুৎ! তুমি যত হাসবে, তত আলো!”

ভূতনাথ চমকে উঠল, “হাসি থেকে লাইট! আমি তো জোক-বক্স হয়ে গেলাম!”

পরদিন থেকে ভূতনাথ পঞ্চুর সঙ্গে স্কুলে হাজির।
তার নতুন দায়িত্ব? কিন্তু ভূতনাথের স্কুল-জীবন শুরু হতেই হল এক বিশাল কেলেঙ্কারি!
প্রথম দিনেই অঙ্ক ক্লাসে সে বোর্ডে লিখল—
“ভূতেরা শূন্যে বাস করে, তাই অঙ্কে শূন্য আমাদের জাত ভাই!”
ভূগোল ক্লাসে দাবী করল, ভূতেদের আলাদা দেশ আছে—"ঘোস্টল্যান্ডিয়া", যেখানে মানচিত্র খোলা থাকলেও কেউ পৌঁছাতে পারে না, কারণ রাস্তা কুয়াশায় ঢাকা!

আর খেলাধুলোর পিরিয়ডে? ভূতনাথ হাওয়ার মধ্যে দিয়ে গোল করে ফেলল! সে বলে,'ভাই, ভূত-স্টাইলে খেললে এমনি হয়! ইনভিজিবল গোল একদম লিগ্যাল!'"

অবস্থা এমন দাঁড়াল, ক্লাসের বাচ্চারা ওকে “কমেডি ভূত” না বলে ডাকতে লাগল—“হাস্য-হিমোগ্লোবিন”!

কিন্তু তাও সে সবাইকে হাসাতো —এক্কেবারে ভূতুড়ে কৌতুক দিয়ে!

— “ভূতরা কেন অনলাইন ক্লাসে যায় না?”
— “কারণ ওদের ‘স্পিরিট’ নেটওয়ার্ক!”

— “ভূত গুগলে কী সার্চ করে?”
— “ঘোস্ট-রেসিপি!”

— “ভূত কীভাবে মেসেজ পাঠায়?”
— “ভয়-ফাই দিয়ে!”

হাসির ঠেলায় ক্লাসরুমের বাল্ব জ্বলে উঠত, যেন প্রতিটি রোলে হাসির কারেন্ট বইছে।


একদিন মাঠে বসে “ঘোস্ট-চিপস” খাওয়ার সময়, একটা শুকনো পাতা পড়তেই ভূতনাথ বলল,
— “উফ! আবার এক আত্মা পতিত হল!”

পঞ্চু বলল, “ওটা পাতা রে!”
— “পাতা মানে অক্সিজেন-বন্ধু! পাতা ঝরলে ভূতের নিঃশ্বাস বন্ধ!”

পঞ্চু বলল, “তুমি গাছকে বলো ‘লাংস অফ ভূতসমাজ’?”
— “গাছ কাটলে ভূতের হোস্টেল থাকবে কোথায়?”

তাই ওরা দুই জনে মিলে বানাল মিশন—‘ভূত-ফ্রেন্ডলি ফরেস্ট’। 
স্লোগান: “একটা গাছ মানে একটা ভূতের ছায়া! গাছ লাগাও, ভূতের হোস্টেল বানাও!”

স্কুলে গাছ লাগানো হলো, নাম দেওয়া হলো, “ঘোস্টি-গ্রিন”।
ভূতনাথ বলল, “ও আমার লিভ-ইন পার্টনার!”
পঞ্চু চোখ গোল করে বলল, “গাছের সঙ্গে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস?”
ভূতনাথ চোখ ঘুরিয়ে বলল, “It’s complicated! বাতাস কম, ছায়া কম—সম্পর্কেও দম!”

একদিন হেডস্যার এসে বললেন, “কে বারবার ইলেকট্রিসিটি ছাড়াই আলো জ্বালায়?”

— “আমার বন্ধু ভূতনাথ! হাসির কারেন্ট চালায়!”

স্যার হেসে বললেন, “তাহলে ও আমাদের স্কুলের কমেডি-কনডাক্টর!”

সবাই হাততালি দিল। ভূতনাথ বলল— “ভয় নয়, এখনকার ভূতদেরও স্ট্যান্ড-আপ শিখতে হয়!”

ভয় নয়, হাসিই হলো আজকের যুগের আসল সুইচ। একটু বুদ্ধি, একটু মজা—এই দুই থাকলে ভূতও বন্ধু, আর অন্ধকারও আলোকিত হয়।
               
হাসি যখন ভূতের খাদ্য, 
আলো তখন তারই উপাদ্য!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন