দোঁহা

সৌম্য করের কবিতা

 

 

শেষ ট্রাম

রাস্তার ধারে কুকুর ঘুমোয়। ভাত নেই।
মানুষের ভিড় শপিং মলে।
শহর শেখায় - আলো মানে বিক্রি,
অন্ধকার মানে ভাড়াটে ঘর।

ট্রামের হাড়গোড় মরে গেছে,
শুধু হর্ন বেঁচে আছে।
দরিদ্রের ঘাম শুষে নেয় -
নিয়ন আলোয় ঝলসে ওঠা হোর্ডিং।

আমি হাঁটি - 
চোখে আগুন, পকেটে শূন্যতা।
তবু বুকটা বিদ্রোহী দাঁতের মতো ধারালো।
যাকে তুমি প্রেম বলেছিলে,
আমি দেখি তার দাম লেখা নোটে।

শহর কবিতা চায় না - শহর চায় রক্ত।
তবু আমি লিখি - 
কারণ শব্দই আমার শেষ বুলেট।


ভালোবাসবো যে শর্তে

আমি তাকেই ভালোবাসবো –
যে আমার শিকড়ে নেমে গিয়ে রোদ দেবে।
সবুজ আমি হলদে হওয়ার আগেই,
যার রোদে করবো সালোকসংশ্লেষ –
সেই হবে আমার পুরুষ।

যে ঝড়ের দিনে আমায় পাখির ডানায় ছায়া দেবে,
যে কুয়াশার ভেতরেও চিনে নেবে আমার গন্ধ,
যে পাতার শিরায় রক্তের মতো স্রোত বইয়ে দেবে –
তার ছায়াতেই আমি জন্মাবো বারবার।

ঋতু পেরিয়ে ঋতু,
যে আমাকে তবু ডেকে নেবে নতুন কুঁড়ির মতো,
যে ক্ষয়ের ভিতরেও খুঁজে নেবে আমার নরম সবুজ –
তার ঘাসেই আমি হেঁটে যাবো দূর পর্যন্ত।

যে আমার মাটির সীমা ছাড়িয়ে,
খোলা আকাশে আমাকে ডেকে নেবে,
যে আমার বীজকে বাতাসে ছড়িয়ে দেবে দূর দেশে –
তার ডানাতেই আমি উড়বো অন্তহীন।

যে আমার রাতের অন্ধকারে
নিজের চোখের আগুন রেখে যাবে,
যে গোপন আলোর শিখা ধরে
আমার জন্য তুলে আনবে একমুঠো তারা –
তার আলোয় আমি হয়ে থাকবো দীপ্ত অনন্তকাল।

যে আমার কণ্ঠের নীরবতাকেও
নদীর মতো বহমান করে দেবে,
যে আমার ভাঙা সুরে নতুন গান বাঁধবে,
যে আমার ছাই থেকে আবার আগুন জ্বালাবে –
তার সাথেই আমি থাকবো অন্তরায়হীন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন