পূর্ণেন্দু পত্রী লিখেছিলেন -
" যতক্ষণ কাছাকাছি থাকো , যতক্ষণ ছুঁয়ে ছুঁয়ে থাকি
আমি যেন মেঘে জলে মেশা কোন আত্মহারা পাখি " |
আমি যেন সেই পাখি টি | যতক্ষণ তোমার আকাশে ওড়াউড়ি , যতক্ষণ তোমার বাতাসে তোমার সুগন্ধ আবেশ , ততক্ষন মন ভালো করা তোমার পরশ প্রাণে | তবু মাঝে মাঝে উড়ে যেতে হয় দিক ভুলে অন্য শহরে পৃথিবীর অন্য কোন খানে , পরিযায়ী পাখির মতো | মন জানে সে ফেলে এসেছে কারে | অন্য শহর কে তাই আপন করে নেবার স্পর্ধা পাইনা খুঁজে |
যখন তোমার কাছে থাকি , স্পর্ধা যেন চেতনায় , মননে | জানি তুমি আছো , তাই সোচ্চার গলা মেলাই নাগরিক মিছিলে , ব্যানারে পোস্টারে হাত এ হাত এ যেন সেই স্পর্ধার আস্ফালন আর গলায় স্লোগান এর উলুধ্বনি | সবার সাথে আমিও যেন পৌঁছে দিতে পারি দাবি-দাওয়া-চাহিদা | মেনে নিতে নিতে দিন গুলো মেনে নেবার আগে তাই বেছে নিতে পারি সঠিক পথ আর সেই পথের তুমিই স্পর্ধা জোগানোর পাথেয় |
সমকালীন চালচিত্র - সবই তোমারই হাত ধরে | একাডেমী চত্বরে নাটকের মঞ্চে "মেফিস্টো" , "হ্যামলেট" , "যে জানলা গুলোর আকাশ ছিল" ,"হিবিজিবি বাহিনী", মধুসূদন মঞ্চে "হেনরি কোথায়" , "আন্তিগোনে" , "ব্রেন" , কলামন্দির এ "বিনোদনী অপেরা" যেন ইতিহাস এর পাতায় ফিরে দেখা বর্তমান কে | নাটক দেখে বুঁদ হয়ে একা একা বাড়ি ফেরা তোমারি পথ ধরে | সুমনের কথায় গান এ সিন্থেসাইজার এর টাপুর টুপুর , অঞ্জন এর সোচ্চার ভালোবাসার দাবি , সব যেন তোমারি জন্য |
যেন হাত এর মুঠোয় তোমার হাত ধরে পথ চলা - সময়ের অঙ্গীকার কে সাথে নিয়ে |
তোমার মলয় বাতাসে মনের ভাবনা মিশিয়ে দিই সাদা মেঘের কণার সাথে | উড়ে যায় | উদাসী ওই গগনের পরশ লাগে আমার প্রাণে | আমার অন্তরের নীড়ের পাখি তখন কি জানি কি কারণে অধীর হয়ে ওঠে | আমিও তখন প্রেমিক খুবই | কথায় শূন্যতায় ছন্দ ভেঙে লিখে রাখি মুহূর্তের ভালোলাগা আর ভালোবাসার স্বরলিপি | কোনো কোনো টি তার কবিতা হয়ে ওঠে | নিজের অজান্তে নিজের কাছে | তোমার প্রশয়েই এতো বাড়বাড়ন্ত | স্বগতকথন, কথোপকথন এ তাই ভরাই লিটল ম্যাগাজিন এর পাতা | প্রবীণ - নবীন , পুরাতন - আধুনিক এর মেলবন্ধন ঘটে বইমেলায় লিটল ম্যাগাজিন প্যাভিলিয়ন এ , নন্দন চত্বরে লিটল ম্যাগাজিন মেলায় টেবিল - এ টেবিল - এ | কলকাতা বইমেলায় স্বগত কবিতাঞ্জলি প্রকাশ , এ সবই তোমার আশ্রয় এ , তোমার সাহচর্যে | প্রেয়সী আমার , কতই নামে না ডেকেছি তোমায় , কতই ছবি এঁকেছি ইজেলে | কতবার যে ধরা দিয়েছি , ধরা পরে গেছি বারবার তোমার প্রেমে , হিসেবে রাখা আছে মনের চিলেকোঠায় | দিস্তে দিস্তে দীর্ঘ কবিতার অন্তরা তো তুমিই | আরোহী - অবরোহী তে , বন্দিশে - বন্দিশে শুধু তোমাকে খুঁজে চলা | মন খারাপের বিকেলের খবর তাই অপ্রকাশিত থেকে যায় চির গোপন নক্সীকাঁথায় | যার সন্ধান জানেনা কেউ | তোমাকে ছুঁতে চেয়েই এক পক্ষ কাল যাপন সংগীত | তবু মনের আশ যেন মেটে না কিছুতেই |
আর তাই রানওয়ে থেকে উঠে যাবার আগের মুহূর্তে থমকে থাকে চোখের কোণে কয়েক ফোঁটা চোখের জল | তোমারি জন্য | সুমন বলে "ককপিট থেকে পাইলট বুঝে যান / এসে গেলো তার তোমাকে দেখার দিন " , আর আমার অবস্থা তখন তার বিপরীত | ককপিট থেকে পাইলট ঘোষণা করেন এবার আমাদের যেতে হবে | কবি গুরুর ভাষায় তখন আমি গুণগুণ করি -
" এখন আমার বেলা নাহি আর , বহিব একাকী বিরহের ভার -" |
ভালো থেকো , ভালো রেখো
