ঘাটশিলা
এক গভীর কোনও লোক
এই নদীর পাড়ে এসে
ওই মুখটি তুলে বলে
দায় কতটা বেড়েছে?
তার দুপুর আশ্বিন
তার রাত্রি অঘ্রাণ
মোর নিবিড় কালো তারায়
তার প্রশ্ন বিলি কাটে
আমি সংসারের দেনা
ভীরু ত্রস্ত ধূসরতায়
তার দু'হাত জুড়ে রাখি
সে অবাক হয়ে তাকায়
কেন গহিন নয় মানুষ
কেন জলোচ্ছ্বাস মানুষ
যেন তিমির হয়ে এলে
তবু দিনের শেষে মানুষ-
কালো অন্ধকারে বাজে
বাজে আঁধার ক্ষেতে ক্ষেতে
একা একটি দু'টি পায়ে
তার ধুলোয় খেলে মানুষ...
সে হাঁটছে ধীরে ধীর
সে হাঁটবে ব'লে হৃদয়
আমি বিছিয়ে দিয়েছি যে
নীল পথের তীরে তীরে
তার শ্বাসের হাওয়া দেয়
ঘাটশিলার স্টেশনে
ব'সে বাদাম নিয়ে দাদু
মীন আঁখির পানে চায়
ঘাটে বসেছি দু'জনে
সু-বর্ণরেখা নদী
তার বর্ণ কী রংয়ের
কে ভেবেছে সংসারে
হাতে হাতের আভা তোর
ঠোঁটে ঠোঁটের নাভিমূল
এই জ্যোৎস্না দিয়ে লিখি
তোর লোকান্তর মুখ
ওই গভীর কালো লোক
আজ উদাস গাছে গাছে
তুই জলের মতো ব'
আমি তোকেই দেখি আয়...
অপেক্ষা
উপেক্ষা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছ
দুপুরবেলা
চারপাশে ক্লান্তি, আক্ষেপ
তোমার চোখের মণি ভ'রে ভাসে খিদের কাজল
দাঁড়িয়ে আছ...
কে নেবে ওই বিমর্ষ পসরা তোমার
চোখে আঘাতের ভার
নিরপরাধের রোদ গায়ে
দাঁড়িয়ে আছ
আমিও তো দীপ্তিহীনতায় এ স্টেশন এই চরাচরে
বসে থাকি
বসে থাকি, বিড়ি খাই, সুদীপ্ত মানুষ এসে বসে
দূরে বসে, বিড়ি খায়, ধোঁয়া ওড়ে অনিশ্চয়তায়
মাসি ভাত বাড়ে স্বামীর অন্তরের থালায়
দু'টি প্রাণী ভাত খায় জারুলপাতার মতো দোঁহে
অন্ন মুখে তোলে
আমার হৃদয় ভ'রে জল আসে
পান করি আমি
দু'টি প্রাণীর নিতল স্নেহতলি
তুমি দূ-রে কী অবান্তর তাকিয়েই থাকো নিরবধি
কেউ যদি
সংসারের দু'টি বাদামের পাতা কিনে নেয়!
আমিও তোমার মতো মর্যাদাহীন দ্বিপ্রহর
আচারের কাগজ চাটি, চেটে চেটে শূন্য করেছি
আমার বুভুক্ষু ক্রোধ
আমার ডাগর অপমান...
শিশু হাসে
আজও দেখো শিশুরাই পূর্ণতর প্রাণ
শ্রাবণের ঘুগনি আর ভাদ্রের মুড়ি খাবে এসো
এসো এই স্টেশনেই আমরা দু'জন বসি পাশে
দিদা দিক দাদু দিক জীবনের নিবিড় অধিকার
তারপর
ফিরে যাব, তারপর আবার তুমি একা
সৃষ্টির পথে পথে শশার পসরা সাজিয়ে
দাঁড়িয়ে থাকবে
তুমি দাঁড়িয়ে থাকবে রোদ হ'য়ে...