বারাণসী ৭
ফজ়রের আজান শেষে
গঙ্গায় ডুব দিয়ে উঠে আসে তরুণ প্রভাত
ঘাট থেকে ঘাট ছুঁয়ে বাতাস বিছিয়ে দিলে
নহবতের হলুদ ফরাস
বিসমিল্লাহ্ ব'লে
দিনের সাত্ত্বিক সানাই, আহির ভৈরবে মেতে ওঠে...
ধুনোর গন্ধের মতো ক্রমশ
একটু একটু ক'রে জেগে ওঠে বল্মিক-নগর
আলাপে বিস্তারে ঝালায়...
সারাদিন ধ'রে অনাহত সুর এক
নিঃসঙ্গ খেয়ার মতো একা একা দাঁড় বায়
উপবিতে, হোমাগ্নিতে, লেলিহান চিতাকাঠের অন্তিম শয্যায়
নামাবলির মতন গোধূলি নামে...
আঁধারের দাগহীন উত্তরীয় গায়ে, রাতের আখড়ায়
তরুণ কীর্তনিয়া এক-
তারার খঞ্জনি হাতে ডুবে যায় কবীরের দোঁহায়
অন্তঃসলীলা গঙ্গায়...
গানওয়ালা
আর একখানা গান শোনাবে হাশেম ভাই?
চায়ের ভাঁড়ে গঙ্গা ফুঁসে ওঠে
পুরনো মাফলারে লেগে থাকা পাহাড়ি মেয়ের স্মৃতিশীত
খুশির বিষাদরেখা ছুঁয়ে
নিভন্ত রোদ্দুরে এলোমেলো গান ধরে...
জীবনের বাজি রেখে রাত্রির অস্থির লরি
আলোহীন সড়কের প্রেমে, ছুটে চলে পাগলের মতো
তারছেঁড়া জীবনের উৎসবে
অপার অপত্য স্নেহে বেখেয়াল স্বরলিপি ভালোবেসে
অদৃশ্য পিয়ানোর পাঁজরে খেলা করে বিহ্বল আঙুল
দিগন্তরেখার মতো আবছায়া স্মৃতির চাহনি
চোখের চকিত চরে, জ্ব'লে ওঠে আলেয়ার আলো-
কার মুখ বুঝি মনে পড়ে গেল!
অজস্র ভিড়ের মিড়ে নহবতে একাকী সানাই...
একখানা গান শোনাবে, হাশেম ভাই?
বহুকাল কাঁদিনি আমি!
বহুকাল রিক্ত হইনি...
দুর্ভিক্ষের দরজায় দাঁড়িয়ে, তবুও অপরাজিত এক
যখন জনশ্রুতির মতো দিকে দিকে গান হ'য়ে যায়-
কেঁদে উঠি!
কেঁদে উঠি নিজেরই আকাঙ্ক্ষার নিষ্ফলা শবদেহ ছুঁয়ে...
সুকুমার উপত্যকায়, কোনও এক পাহাড়ি অঞ্চলে
একদিন আমারও তো অনন্ত কুয়াশাবাগান ছিল
প্রগাঢ় রোদের মতো জমে থাকা গান ছিল
নীল সাগরের জল...
স্বরলিপি ভুলে যেতে যেতে এখন বেসুরো তরী বাই!
শুধু একখানা গান
তোমার মতন ক'রে কী ক'রে গাইতে হয়-
শেখাবে হাশেম ভাই?