দোঁহা

তন্ময় ভট্টাচার্যের কবিতা


ক্লাইমেট রিফিউজি : ২০৮০

১. 

আমরা সবাই চলে যাচ্ছি। ঘর ছেড়ে, জনপদ ছেড়ে উঁচু কোনো বাংলার দিকে চলে যাচ্ছি আমরা। পিছু ফিরলে হাইস্কুলের দোতলা। মন্দিরের চূড়া কিংবা খাঁ-খাঁ অ্যাপার্টমেন্ট। আমরা চলে যাচ্ছি। জল ঢুকে পড়ছে আমাদের স্থাবরে। অস্থাবর গিয়ে ঠেকছে শপিংমলের দরজায়। এইমাত্র পা হড়কে তলিয়ে গেল একজন। বাঁচাতে গিয়ে অন্যজন ফিরলই না আর। আমরা উঁচু বাংলায় পৌঁছোচ্ছি। পাহাড় কেটে নতুন-নতুন কলোনি। ঘাড় ফিরিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলছি – ‘কইলকাতায় তিন পুরুষের বাস আসিলো আমাগো।’

২.

আমরা কেন কবিতা লিখছি? এত বইয়ের একটাও কি নিতে পারব সঙ্গে? সিনেমার মতো দৃশ্য ধরা পড়ছে ড্রোনে। একটা বই ভাসতে ভাসতে পৌঁছে গেল কুষ্টিয়ায়। একটা পাণ্ডুলিপি সিরাজগঞ্জ থেকে সটান বৈঠকখানা রোডে। ভিজে চুপচুপে, ক্রমশই ভারী হচ্ছে আমাদের কবিতা। প্যারাগ্রাফ খসাতে খসাতে, বাক্যে এসে ঠেকছে। আরেকটু ঢেউ দিলেই শব্দ। বহুদিন পর কেউ ডুবুরি নামিয়ে অক্ষর খুঁজে পাবে। সেইসব অক্ষর হাতে নিয়ে, অবাক বিস্ময়ে কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক বলে উঠবেন, এরা লিখতেও জানত একদিন!

৩. 

গঙ্গা কিংবা বঙ্গোপসাগর। ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। নৌকো নিয়ে ঘুরঘুর দিনের পর দিন। হয়তো আমাদের বাড়ির ওপরেই। কোথায় সেই নতুন দেশ? সেখানকার সীমান্তরক্ষীরা কেমন? দেখামাত্র গুলি, নাকি থাকতে-খেতে দেবে কিছুদিন? আমাদের সন্তানরা প্রচ্ছদচিত্র হয়ে উঠছে। টলটলে চোখে গল্প শুনছে কলকাতার। সেখানে মানুষ থাকত একসময়। যানজট-চিৎকার-ভিড়ে দুর্বিষহ জীবন। আমাদের সন্তানরা নৌকোর পাশে-পাশে হাঙর ঘুরতে দেখছে। সরল মনে প্রশ্ন করছে, কলকাতাও হাঙর ছিল? গিলে খেত অন্য জেলাদের?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন