দোঁহা

ইন্দিরা দাশের কবিতা



শব্দ
                          
কতদিন ধরে শব্দটি খুঁজে চলেছি
খুঁজতে খুঁজতে কন্যাকুমারীর সমুদ্রতট
খুঁজতে খুঁজতে লাদাখের কারদুংলা পাস
খুঁজতে খুঁজতে পুরুলিয়া পেরিয়ে ডুমুরদিহি গ্রাম
সমার্থক শব্দটি মনের ঘুলঘুলি দিয়ে উঁকি দিয়ে যায় ভয়ে ভয়ে,
ধমক খেতে পারে তাই।
বিপরীতার্থক বলে, ‘ধুত্তোর, বড় ক্লিশে লিখছ আজকাল
কিছু উল্টো কথাও লেখো’!
দেরাজ হাতিয়ে আঁতিপাঁতি করেও খুঁজে পাই না অক্ষরের মনোজ্ঞ দলটা’কে।  
আমি বঙ্গ-ইংরেজী অভিধানে দু-চোখ ক্লান্ত করে ফেলে
অসহ্য বিরক্তিতে কফির ঠান্ডা কাপ সরিয়ে রাখি
আর ভাবতে চেষ্টা করি মাছের চোখটি
যেখানে তীরটি বিঁধেছিল সব্যসাচীর অসীম দক্ষতায়।
ভেবে নিই সমগ্র লুক্কায়িত বীর্যপতন উপেক্ষা করে  
দেবব্রত’র কৌমার্য’র ভীষণ প্রতিজ্ঞার কথা,
অথবা সম্পুর্ণ আত্মসমর্পণ জানাতে  
সুন্দরী গ্যাব্রিয়েলার জন্য একান্ত যন্ত্রণা অগ্রাহ্য করে
ভ্যান-গগের মনোহর শ্রবণেন্দ্রিয় উপহার।
 
আমি এ সমস্ত করতে অরাজী নই
আমি সম্পুর্ণ রাজী
আমি রাজী
কিন্তু সঠিক শব্দটির জন্য অপেক্ষা করে করে  
আমার জীবনের অর্ধ-গোলার্ধ সূর্য থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
আমার পৃথিবীর অক্ষরেখা
দিনে দিনে অবিকল
সাড়ে-পাঁচ ডিগ্রি পিসা’র গম্বুজের মত হেলে পড়ছে,
সরে যাচ্ছে মনন থেকে রোদের রঙ।
 
আমি সঠিক শব্দটি কবে খুঁজে পাব?


ভিক্ষুক
 
মননে অসম্ভব লোভ, শরীরে হাঁকপাঁক খিদে
পরশ্রীকাতরতার আগুন নিয়ে বেঁচে আছি
বেঁচে থাকতে থাকতে পৈত্রিক পুকুর-বোঁজানো ফ্ল্যাটবাড়ি
শেয়ার-মার্কেট, মিউচুয়াল-বন্ডে নজর
বাঁচতে বাঁচতে সেজদা'র ছেলের স্কলারশিপ টপকে
আমার মেয়ের বিদেশ-যাত্রার ব্যবস্থা প্রয়োজন
বাঁচার জন্য তিন-হাজার স্কোয়ার-ফুট আজকাল কম পড়ে
হুন্ডাই’এ লাথি মেরে, ফেরারি’র জন্য পরিশ্রম।
শুধু অজস্র লালসা পুঁটুলিতে ভরে নিয়ে
স-সময়ে শ্মশানের কাঠের ডানলোপিলো’তে গিয়ে শুই যখন
তখনই মনে পড়ে, ভিক্ষুকের কাঙাল হাতে
‘মৃত্যু’ নামে একটিমাত্র রৌপ্য-মুদ্রা  
রেখে গিয়েছে জীবন
এ পৃথিবী পান্থশালা,  
এখানে মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে কখন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন