দোঁহা

মারুফ আহমেদ নয়নের কবিতা

 


হাওয়ার বনে আশ্চর্য পিয়ানো

ছিঁড়ে ফেলেছো কন্ঠনালী, জিহ্বার সাথে ঠোঁট সেলাই করেছো। এখন কি করে উচ্চারণ করবো তোমার নাম। দুটো হাত পিছন মোড়া করে বেঁধে ফেলেছো। আমি এক ফারাও রাজপুত্র, যে পেয়েছিলো পিপীলিকাদের সমান আয়ু, তুমি তার জীবন্ত মমি প্রস্তুত করছো। ঔষুধী ঘ্রাণের কাপড়ে মুড়িয়ে দিয়েছো শরীর। শ্রমিকরা মাথায় করে বহন করে আনছে বৃহাদাকার পাথর।

আমার অগ্নি উপাসক সম্রাজ্ঞী, আমাকে অফুরন্ত ধন-দৌলতের সাথে পরিত্যাগ করেছেন। যেনো মৃত্যুর পরে, পরজগতে প্রয়োজন হবে এসব কিছুর। এমন একটি দুঃস্বপ্নের পরে চিৎকার করে উঠি। দাঁড়িয়ে থাকি জাহাজের ডেকে। আমাকে সঙ্গ দেয় চাঁদ, যা তোমার মতো মলিন, কপালে টিপ নেই। খোঁপায় ফুলটি ভুলে গেছে হাসতে। তখন বেড়ে যায়, নীল জলের কোলাহল।

যেন একটা ঝঞ্ঝার রাত্রি পেরিয়ে আবারও তোমার মুখোমুখি। বুঝি, তলিয়ে যাবে এ জাহাজ। ভুলে গেছি, সমুদ্রের নোনা জলের ভাষা। তুমি ভয় পেয়ো না, খাদ্য হতে পারি, হাঙ্গর শিশুদের। ভেঙ্গে যাবে দেহের শিরদাঁড়া। জানো তো, জাদুকরের হাতের আঙ্গুল, হাওয়া বনে কতোদিন বাজায় না, আশ্চর্য পিয়ানো।


তোমাকে পেয়ে গেলে

ঈশ্বর প্রদত্ত বরে, যদি পেয়ে যাই তোমাকে। কেমন হতো সবকিছু! তুমি বহুমূল্যের শাড়ী, গহনা ও গোলাপের মুকুট পড়ে, হেঁটে যেতে সম্রাজ্ঞী, বিবাহ প্রাঙ্গণে। তোমাকে ঘিরে হাসি-উচ্ছ্বাস। উঠোনে পায়রার বাক-বাকুম। প্রাচীন চাঁদের পৃষ্ঠা হতে পাঠ করা হচ্ছে, শুভময় বাক্য, কবুল। তুমি উচ্চারণ করছো। যেন একটা দোলনচাঁপার বন মৌনতায় নত করেছে মাথা।

আর থিবস নগরের সেই দ্বাররক্ষী স্ফিংক্স খেয়ে ফেলেছে নিজেকে। হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে সমস্ত জটিল ধাঁধার গোলক। ধ্বংসপ্রাপ্ত হচ্ছে সব। তুমি কি এমন ধাঁধা, সমাধান জানি না। শুধু ভ্রম প্রিয় সেই খরগোশ ছানার মতো আলোর বল দেখলে ছুটে যাই। ঘাস, লতা-পাতা আহার করি। প্রার্থনা করি, বাঁচিয়ে রাখুন, অজগরের চেরা জিহ্বা থেকে।

মূলত তা হলো মৃত্যুগুঞ্জন। মহাপ্লাবনের দিন শেষে, শরীর থেকে খসে পড়বে মাংস। পোকামাকড় স্পর্শ করবে না। আমি তোমার ভয়ে একটা ত্রিভুজাকৃতির পাথরের ভেতর লুকিয়ে পড়বো। আমাকে হত্যা করো না। জেনো, আমার ঈশ্বর তোমাকে ক্ষমা করবেন না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন