দোঁহা

মোহন দাসের গুচ্ছকবিতা



ফুল

জীবন প্রকান্ড বড় বৃক্ষ
যৌবন দিনগুলো ঝরে পড়ছে শুকনো পাতার মতন
কবে তুমি আসবে বৃষ্টি হয়ে
বিদ্যুৎ চমকাবে,
প্রচন্ড বাতাসে-
রাতের আঁধার ভেদ করে আমরা দু'জনেই
ফুল হয়ে ফুটে ঝরে যাব ।



জয়লাভ

সব চলে যাওয়ার মানে যেমন শূন্যতা নয়
বিচ্ছেদ নয়,
তেমনই সব কাছে আসার মানেও প্রেম নয়, সহানুভূতি
কিংবা প্রয়োজন নয় ।

কারণেই হোক বা অকারণেই
আমরা আমাদের থেকে দূরে চলে গেছিলাম না কি
দূরত্বটা আমাদের কাছে চলে এসেছিল
ঠিক জানি না

তবে আমি জেনেছি তোমাকে
সলতে যেভাবে জানে মোমবাতিকে

এটুকুই আমার জয় ।



সম্ভাবনা

সম্ভাবনা দেখছি না
তবুও গুছিয়ে রাখছি ফুলদানি, মুছে রাখছি আয়না
ড্রেসিং টেবিল,
গুছিয়ে রাখছি প্রথম কবিতার বই
খাট ও আলমারি ।

সম্ভাবনা দেখছি না
তবুও কুড়িয়ে রাখছি রজনীগন্ধা, গেঁথে রাখছি মালা
তুলে রাখছি আমাদের অনিশ্চিত সংসার

সম্ভাবনা দেখছি না
তবুও খুলে রাখছি জানলা, খুলে রাখছি দরজা

খুলে রাখছি জীবন থেকে আয়ু আমার ।


প্রেম

প্রেম এক প্রকার গুলমো উদ্ভিদ
আপনাকে একা পেলেই

আপনার পা বেয়ে উঠে পড়বে বুকের ওপর

তারপর ওঁকে আপনি যত প্রশ্রয় দেবেন
ওঁ ততই বড় হবে

একসময় আপনার শরীরে ওঁ এমনভাবে জড়িয়ে যাবে
না পারবেন আপনি ছাড়তে

না সেই প্রেম।



বেলাভূমি

সেইখানে আমরা বেশিদিন বাঁচতে চাই
যেখানে আমাদের
ন্যূনতম মূল্যটুকুও থাকে না

আর সেইখানেই আমাদের মধ্য কেউ কেউ
ঝিনুকের মতন পড়ে থাকে

বুকের ভিতর মুক্তা নিয়ে।



প্রিয়জন   

প্রয়োজন শেষে প্রত্যেকটা মানুষেরই

প্রিয়জন পড়ে থাকে

কারও কারও সঙ্গে তাঁদের কারও কারও দেখা হয়ে যায়
ভালবাসা হয়ে যায়

আঙুলের দূরত্ব কমতে থাকে

তারপর প্রয়োজন পুনরায় ঠোঁটে এসে ঠেকলে
কিছু মানুষ রোগী হয়ে যায়

আর প্রিয়জন ভেষজ ঔষধ।



ভালবাসা 

আমরা দু'জন দু'জনের দিকে তাকালেই
পৃথিবী থমকে দাঁড়ায়,
আগুন জ্বলে ওঠে বাতাসে

হৃদয় পুড়তে থাকে...

অথচ কী অদ্ভুত ভাবে বেঁচে আছি আমরা দু'জনেই
দু'জনের বুকে!


বিচ্ছেদ 

আমাদের ভালবাসার মাঝখান দিয়ে নিরক্ষরেখার মতন
বিচ্ছেদ চলে গেছে
আমরা দু'জনেই সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছি

কিন্তু উত্তর মেরু থেকে তুমি বরফের মতো গোলে যাচ্ছ

আর আমি দক্ষিণ মেরুতে বরফসমুদ্রের নীচে
তোমার প্রতীক্ষায়...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন