দোঁহা

অরূপরতন হালদারের গুচ্ছ কবিতা

 



একটি গোলাপ

অরণ্যের প্রাচীন ক্ষতরা এসেছিল
তোমার নখরাঘাত কেঁপে ওঠে
ছায়াপরবশ কেউ ফিরে এসে জলের কাছে পেয়েছিল
ইরাবান গাছেদের আলো, এই স্বাদ যে পাতাদের
সেইখানে পথের ধার, জননীরেখা অন্ধকার হয়ে এল
জাতিস্মর পেয়েছিল গভীর পুরোনো আলোর বাগান
পুরিয়া কল্যাণ ক্রমে আরও মৃত কোনো শহরের গান
আমাদের অর্থ ও অনর্থের বহু নিচে শুয়ে আছে
তার স্মৃতির অলিন্দ ঘিরে যাতায়াত বাড়ে ছায়াদের
গর্ভকালীন সময়ের নিচে শ্বাস আরও পরিহাসপ্রিয়
তারা কি জেনেছে কতদূর মন্থন, কালকূট?
হৃদয়ঘটিত আলো করবীর বাগানে পড়ে আছে
কাঁটার মুকুট হাসে দূরে ওই জ্বলে ওঠা শিরস্ত্রাণ দেখে
মানবী-পথ ভিজে গেল, তোমার বুকের ভেতর
অবদমনের হাড় জ্বলে সারারাত
তাহাতে একটি গোলাপ ঋদ্ধ


শিকার

নৃত্যের ফসিল এসেছে আবার, তুমি কি জায়মান বধির?
ফলের শাঁসে কি কি আশ্চর্য রয়েছে অথবা
সীমারেখা কোন মেঘ একটা প্রান্তীয় গাছের?
হাজার রাত্রির অন্ধকারে ওড়ে প্রত্ন জোনাকির সাধ
বাঁশবাগানের মাথায় চাঁদ আসে, দূরের কোনো সমুদ্রের  ভেতরে তুমি প্রাচীন অঙ্গার, পুড়ে গেছ তিমির –তিমিরে ছায়া পরিণত হল আমাদের–এইসব শব্দ কি নিঃশব্দ ঝড়ে ক্রমে মুছে গিয়ে একটি সমাধি কেবল ঢেউয়ের শীর্ষে পড়ে থাকে? পিয়ানোতে ছায়াপথ তোমার আঙুল কি দেখেছিল হারাকিরি কোনোদিন? ক্রন্দিত তারাদের ভেতরে ছুটে যাওয়া শব দেখেছিল আমাদের দেহ কাঁপে বহু শতাব্দী ধরে, বমনেচ্ছা ফিরে আসে বইয়ের পাতারা যে হনন ক্রমাগত সেইখানে অসীম বাকলে আমাদের ঘর, স্নায়ু থেকে শিরস্ত্রাণ ঝরে গেলে মাধবী এসেছে
শূন্য বাক্ আমি, কেবলই গেঁথে যাই অনন্ত হারপুনে তোমার


তক্ষক

ছায়ায় বিদ্ধ যতি, যতির পুরুষ আমাকে জিজ্ঞেস করে-চিহ্নের মায়া কতদূর পড়ে আছে তোমার শেকড়ে? আমি শুধু জানি গোলাপের ঋদ্ধ শবগুলি কাঁপে সারাদিন। আরও কিছু গান আছে, চুপ, ছেঁড়া ছায়াপথ ও এক স্বৈরিণী বাগান এসেছে অন্ধ বিতানের মতো, ছেড়ে গেছে তৃতীয় প্রহরে, তারপর শূন্য আমি। জলের পাহারা আঁকে একটি যাত্রা, রেখার সংকেত ছেড়ে সে আজ গর্ভমুখী, ওইখানে বিন্দুটি ক্ষণে ক্ষণে অমৃতসমান। রুহের বেদনা ঝরেছে প্রাচীনা
হরিণে; ছাই, শুধু ছাই রক্তবাহ ছেড়ে গেল, তোমার আদি নেই, অন্ত নেই, তক্ষক, পড়ে আছ রোদের অনন্ত জাঙালে। পাখি ওড়ে নির্জন বন্দরে, ভয়ার্ত মাছির চোখ ধীরে নিভে এল, নুনও অপরিণত আজ। রতির ভেতর শ্রাবণ কেঁদেছে কবে, একটি অসীম স্তবকে বিক্ষত, মৃত ষাঁড়টির মাথা পড়ে আছে। ডুকরানো ধ্রুবতারা ঘুমিয়ে পড়েছে আমার বাকলে।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন