দোঁহা

কৌশিক সেনের গুচ্ছ কবিতা

 


সোনাগাছি

এসো, মেঘের আলোকবৃত্তিয় পথে। মেঘে মেঘে স্থপতিকঠিন
স্নিগ্ধবাস, তাপলব্ধ প্রাণের আরাম।  পিতাবাস, পিতাস্বেদ,
পিতাঝড় যদি, মেঘের শিরায় শিরায় জমে ঘনীভূত শাপ

মাটির ব্যাপিকাপথ খুঁজি। সংক্রমণে ভরে যায় কাল।
ওষ্ঠরঞ্জনীর স্বাদে ভরে ওঠে মৃদু মৃদু আকালের পথ;
একমুঠো বীজ, শুধু বপনের বীজ চায় নুড়িপথ মৃত্তিকার ঘ্রাণে...

বিবিধ বিধান। তবু বিধাতার খঞ্জরে শানিত এ গ্রাম
এ গ্রাম কুমারীগাথা, রতিকাল পার হলে পর, কুয়াশায়
ঢাকা ঘাট, শোক জমে কবেকার অশ্বত্থতলায়।

এ কোন বেদিমূল বলো!  ভাঙাঘাটে বিলাব্ল ধুন,
মাটিতে প্রতিমা গাঁথা, আটচালা ভেঙে খানখান
আদিভাগ, আদিরূপ...মাগো, উর্বরা স্তনের সুডৌল!

তবু যোনি, সরোবরে কোকনদসম। তবু অস্তরাগ
পান্তাভাতের শোকে কাঁদে ঈশানীর জাঙ
পাতের দুধারে ওড়ে শাপিত সকল দাঁড়কাক।

বাড়াভাত, কাড়াভাত, ঝারাভাত – মেঘে মেঘে তারাদের ভাণ;
গণ্ডূষে ভরেছে ক্লেদ, মুহুর্মুহু নেমে আসে দাঁত
তোমার সোনার ত্বক নেমে গেলে বৃত্তের পরিসীমা খুঁজি।

নিবিড় তড়িতাহত। সাঁঝবেলা নিভে যাওয়া কালের প্রদীপ
তাপের আরতিকাল বহু বহুদিন। নেমে গেলে থরে থরে
মেঘ, রূপোলী মাছের কুল থেমেছে কি, থেমেছে কি শাপের প্রকোপ!

ঠোঁটের বিরহভাণ গলে গেলে আমিওতো পাতা হয়ে ঝরি!

 
নির্বাসন

মেঘের দু’পাশে হ্যারিকেনদুটি
কারা যেন জ্বালিয়ে রাখে,
কারা যেন ঘষে মেজে রাখে
পিতলের প্রদীপগাছাটি।

পর্ণোগ্রাফির প্রিল্যুড বাজছে এখনও
ন্যুড সিন শুরু হতে পারে
যে কোনো মুহূর্তেই!

হ্যারিকেন নিভে গেলে
মেঘ নেমে আসে
জানু থেকে জঙ্ঘায়
কার্ডস্ ছড়িয়ে পরে
দিকচক্রবালে।

এইতো সময়,
তোমাকে ছেড়ে আসি
মেঘভাঙা ক্যাসিনোয়!

 
প্রতিমা

বৃদ্ধি পাইতে পাইতে উত্তুঙ্গে উঠিল ফাতিমা
ক্ষতিবৃদ্ধি না হইলেও শ্বাস উঠিলে চৌদিকে
আলো করিয়া ঘুরপাক দেয় নাগরদোলা।
অজু করিতে করিতে কিয়ৎক্ষণ স্থির হইয়া
যায় প্রহর। বৃন্তের শ্রীবৃদ্ধি হইল বুঝি!  বুদ্ধির
লোপ পায়নি, জানি, তবে কলমায় সোহাগ
ভরিয়া উঠিলে কোলআঁচলে নাঙ লুকাইয়াও
শুদ্ধি হয়নি। স্বপ্নের আস্তরণে পালাগান
শুনিতে শুনিতে জাগিয়া উঠে বনবিবি।
আদ্যশ্রাদ্ধ শেষ করিতে করিতে বেলা পড়িলে
দু’ঘটি জল গড়াইয়া শুইয়া পড়ে অরণ্যের
দেবী। তখন হায়াশরমের তাল থাকেনা
কোনো। শিখরে চড়িয়া বসেন চটুলপ্রতিমা।

 
অযোনিসম্ভূত

শেষভাগ রেখে যায় পুটে, গুহ্যদ্বারে অলিকপ্রণয়
সম্ভাবনা জাগে অর্বুদে, পার্থিব মাতৃযোনি নয়।

লুপ্তপদ বেড়ে ওঠে ক্রমে, গুপ্তঘাতে অঙ্কুরিত বীজ
জঠরের নশ্বরতা ভুলে ঈশ্বরীয় আদিম খনিজ।

ঘাতে ঘাতে তপ্ত হয় ধাতু, গিরিখাতে রতিগুল্মলতা
স্বিয়সঙ্গে আত্মজ গণি, বাকি সব শুধু স্তাবকতা।

দ্বিজতেজে রক্তে বোনা ধান, রক্তবীজ বুনে রাখি খেতে
শক্ত হলে লিঙ্গ, বাড়ে মান। বীজ বোনা আপন ভিটেতে।

ব্যাথিত আকাশ জুড়ে শোক, প্রসব হয়েছে চূড়ামণি
জেনো সেও কুণ্ডলিনী তাপ, প্রজ্বলিত আদিপ্রেতযোনি।।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন