দোঁহা

অমিত মজুমদারের কবিতা

 


 
পাখিদের ভাষা বড়ই ক্লান্ত ছিলো সেদিন 

কথা বলার জন্য আমি একাই জেগে ছিলাম। বিধ্বস্ত রণভূমি 
অদৃশ্য জাদুর রূপকথায় কথা শোনার মতোও আমি একাই 

সামনে পাহাড়। পাহাড়ে গাছ। গাছে গাছে পাখিদের গ্রাম 
ঘুমন্ত গ্রাম থেকে ভেসে আসছিলো না সামান্যতম কথাবার্তা 
যেন নির্জন রাতে কয়েক ফর্মা শোকের হাভাতে অনুচ্ছেদ। 
সেইসব অনুচ্ছেদ নিজের ভাষায় প্রকাশ করার মতো শব্দ 
আমার বিশ্বস্ত কোনো অভিধানই সেই মুহূর্তে খুঁজে পায়নি। 

ভাষা ক্লান্ত হয়ে গেলে অপরাধ প্রবণতা বাড়তে থাকে দ্রুত 
আবার অপরাধ বাড়লেও অনেক নতুন ভাষা শেখা যায়। 
নীরব আর্তনাদের মধ্যে লুকিয়ে থাকে আঁটোসাটো বোতাম 
একটা খুলতে পারলেই পুরো উদোম হয় পিঠের কালশিটে। 
নিজের ভাষাটা জানা থাকলেও এখানে মৃত পাখিদের ভাষা 
শেখার জন্য কিছু অপরাধ নাকি করতেই হয় বলে শুনেছি। 

এই গ্রামে সব ধরণের অপরাধ অনেক আগেই হয়ে গেছে 
আমার জন্য একটুও অপরাধের জায়গা ওরা কেউ রাখেনি 
গোটা গ্রাম ক্লান্ত। আজ কারো মুখেই কোনো ভাষা ফুটবে না। 



পানশালার টেবিলে 

পানশালার টেবিলে মোচ্ছব হলে আমরা বোতল উল্টে ভাষা ঢালি 
গোটা বোতল ভাগ হয়ে যায় অগুন্তি দামি গ্লাসে। ব্র‍্যান্ডেড পেগ 
এরপর সেই ভাষা পেটে চালান হয়। ভাষার তাপমাত্রা বাড়তেই 
সে আবার পেট থেকে গুলিয়ে গুলিয়ে উঠে আসতে থাকে মুখে 
ঠিক সেই সময় আমরা গোপন সত্যি কথাটা বলতে শুরু করি। 

সুযোগ পেয়ে এমনই এক টেবিলে আমিও বসে পড়লাম একদিন 
টেবিল ঘিরে রাষ্ট্রের এক একটা প্রদেশ। নানা ভাষা নানা মত 
আমরা যেনো ভারতবর্ষ উল্টে গ্লাসে ভাষা ঢালছি আর গিলছি 
কে যে কার ভাষা গিলে ফেলছে উন্মত্ত অবস্থায় তার হিসেব নেই 
আমরা টলছি। টেবিল টলছে। বোতল টলছে। গোটা দেশ টলছে 

ঠিক সেই সময় আমরা যে সত্য কথাগুলো বলা শুরু করেছিলাম 
ভাষার নেশা কেটে যাবার পর তার কিছুই মনে করতে পারিনি। 






একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন