দোঁহা

রশীদ হারুণের গুচ্ছ কবিতা

 


সময়

১.
মাথার শিরায় দৌড়দিগন্তের চক্র-চিতা

অসীম ও সসীম  এ-জ্যামিতিক ঘড়ির গেলাসে জড়ো হচ্ছে পরিব্যাপ্তির শিল্পসমাজ—বলয়ের এম্পিথিয়েটার। আর দ্রুতগামী জ্যোতির্ময় প্যারাসুট থেকে পড়ে যাচ্ছে উল্কাসরণির ব্রিফকেস— ফুটন্ত নক্ষত্র—থোকা-থোকা বর্ষপঞ্জি। খোলো, এই সাটলদেহের উলুঠোঁট— শিশুবর্ণমালায় প্রতিসরিত ব্রহ্মাণ্ডের মাতৃমুখ। কোথাও হয়ত বেজে যাচ্ছে— করুণ নিঃসরণের ব্যথা—আতুর গোঙানি—রক্তলতা—মিলন হাড়ের ডাকবাদ্য। আর দূরে, বাক্সভর্তি তারাচক গাণিতিক অভিকর্ষে লিপ্ত। এটাই নিয়তি— ছাঁইঝড়ের উদ্গার! যোনির ভাঁটাতে পোড়ে নশ্বর যৌনকয়লা—যেন তালাশূন্য সম্প্রসারণ দপ্তর—

২.
তুমি চলে যাচ্ছো ধূম্রখেয়াদের বাইসাইকেলে—
ধূলির নিতম্বে জ্বলছে মাঠভর্তি জোনাকের দল

সূর্যের ডাস্টার এ-সব পূনর্লিখণ লুপ্ত রাখে!

কোথাও স্থিরতা নেই—লম্বা সাইরেন—
সৌরজরায়ূতে ভরে নিচ্ছে অগ্নির শাবক
কিছু আলো, কিছু মেধাঘড়ি গ্রহে-গ্রহে পড়ে থাকে
সুনীল স্তুপের জিরাফেরা নীলপাতা খেতে-খেতে হাঁটে

পান্ডুলিপির ঘোড়ার পাশে তুমি এক অনুষঙ্গ মাত্র—
জাগিয়ে রেখেছো গোপন ভ্রমণ, আর

বিস্ময় ছুরিকা কাটে নীলঘাস, আকাশে-আকাশে



কান্না

পদার্থের ভেতর যে সব সংখ্যাগুলো ঢুকে থাকে, আমি তাহাদের কান্না শুনি। একটি-একটি কান্না শূন্য থেকে অসীমের দিকে ধাবমান! প্রচুর বিতর্ক জমা হচ্ছে। প্রতিটি চোখই মুমূর্ষু আত্মার প্রতিধ্বনি মাত্র। ধরো, একটুকরো নুড়িপাথর ঘাসের কোমর ধরে বসে আছে আকাশ দেখবে বলে। তুমি তার চোখ দ্যাখো? রাত্রি তার ওপর প্রভাব রাখে সে প্রমাণ তুমি দেখছ না। পাথরেরও ঘুম পায়। কোলাহলপূর্ণ কিন্তু আপাতঃ নিরব, নিরবতা ধরে অসংখ্য অঙ্কেরা সংখ্যার সমুদ্র বানাচ্ছে। তুমি তার সমাধান জানো? সংখ্যারা মূলতঃ অশ্রুর বাগান। ঝড় চলে গেলে বাড়ন্ত ঘাসেরা পাথরের 'পর শুয়ে পড়ে চিবুক বিছিয়ে। দ্যাখো—

দার্শনিক সংখ্যাগুলো বিষণ্ণ ও প্রত্যুত্তরময়।

চাঁদ হামাগুড়ি দিচ্ছে—ঘাসের কপালে ছোট্ট আলো নীরব কুহকধ্বনি। হলুদ ও শাদার নিভৃতি জ্যামিতির টপোলজির গহীন পুস্তক দেখাচ্ছে। পঙতিগুলো শুয়ে আছে অগণন জীবনানন্দ দাশের মতো। আদ্র বনভূমি জড়িয়ে তোমার হৃদয় একটি ভূগোলের ভেতর কাঁদছে, তুমি কি দেখতে পাচ্ছ? বায়োগ্রাফি লেখার কৌশল বস্তুর অধিক কারও নেই। আর্তনাদের সংখ্যাসমূহ জাদুময়—একটি টাইম স্পেস—নিরন্তর। মৃত্যুলিপির ওপর বেড়েওঠা পৃথিবীর জারুলবাগান অবলোকন করেছ তুমি!

যখন বিরহরস ভেসে যায় বিহ্বল মেঘের দেশে—
তুমি শুধু চেয়ে থাকো কুয়াশা স্তনের দিকে...



গৌতম

সিদ্ধার্থ—
উপলব্ধির প্রতিজ্ঞা পড়ে আছে
বোধিবৃক্ষের তলায়

রেখেছ প্রাসাদে ২৯টি বছর
কোথাও—
আমার দুঃখ ও উদ্বেগ মোছেনা,

গৌতম—



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন