গার্গী
বয়ঃসন্ধির সময়ের মতো মেনোপজের সময়টিও বেশ সংবেদনশীল একটি সময়। সচেতনার অভাবে প্রায়শই perimenopause, menopause এর সময়, অবহেলিত থাকেন আমাদের কাছের প্রিয়জন। অথচ সেই সময় একটু সাহচর্য, একটু যত্ন এবং প্রয়োজন মতো ডাক্তারের পরামর্শ পেলে মেনোপজ পূর্ববর্তী, কালীন ও পরবর্তী উপসর্গ, জটিলতাগুলো হয়তো একটু ভালো ভাবে মোকাবিলা করাই যেত।
ভারতীয় উপমহাদেশে, সাধারণ চিত্র অনুযায়ী, মেয়েরা যত্ন দিয়ে থাকেন, কিন্তু যখন তাদের ‘বিশেষসময়’ যত্ন প্রয়োজন?
ধরে নেওয়া যাক, সেই মুহূর্তেও তাদের যথাযথ যত্ন নেওয়ার পর্যাপ্ত সচেতনতার ঘাটতি সমাজে রয়েছে। সেই সময় ‘কেয়ারগিভার’ কিভাবে মিউজিক থেরাপির মাধ্যমে ‘সেলফ কেয়ার’ নিতে পারেন আমরা বরং সেই বিষয়ে খানিকটা সচেতনতা গড়ে তুলি।
Perimenopause-অর্থাৎ, যা মেনোপজ শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত একটি পর্যায়, সাধারণ ভাবে ৪০ বছর বয়সের আশেপাশে শুরু হয়। মেনোপজ (৪০-৫০বছর বয়সের মধ্যে সাধারণ ভাবে) শুরু হওয়া পর্যন্ত এই পর্যায় চলতে থাকে। একটানা ১২মাস ঋতুচক্র বন্ধ থাকলে সেটা মেনোপজ এবং তার পরবর্তী সময় পোস্টম্যানোপজাল। এই বার্ধক্যজনিত প্রাকৃতিক বিষয়টির সাধারণ ভাবে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়না। কিন্তু বিভিন্ন শারীরিক-মানসিক উপসর্গ, এবং দ্রুত শারীরিক পরিবর্তনকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করে পরবর্তী পর্যায়কে সুন্দর করে তোলা যায় সেটা অনেকেই বুঝে উঠতে পারেননা।
সমগ্র পর্যায় জুড়ে যে যে শারীরিক ও মানসিক উপসর্গ স্বাভাবিক জীবনকে বিপর্যস্ত করে তোলে অনেকসময় সেই উপসর্গ গুলো হয়তো বেশ পরিচিতবলেই আমরা বিশেষ গুরুত্ব না দেওযার কারণে সমস্যা দীর্ঘমেয়াদি হয়ে ওঠে। একবার দেখা যাক কি কি সমস্যার সম্মুখীন এই পুরো সময়টা আপনি হতে পারেন কিংবা হয়তো আপনি এই মুহূর্তে সেই সমস্যার মধ্যে রয়েছেন।
শারীরিক ভাবে-
অনিয়মিত পিরিয়ড, অতিরিক্ত ব্লিডিং, হটফ্ল্যাশ, স্লিপ সাইকেল অনিয়মিত, ইনসমনিয়া, প্যালপিটিশন, দুশ্চিন্তা, ইসট্রোজেন লেভেল কমে যাওয়ার ফলে ভ্যাজাইনাল ড্রাইনেস, ইন্টারকোর্স এর সময় অস্বস্তি, মুড সুইং, ক্লান্তি, অবসাদ, মাসল কিংবা জয়েন্ট পেইন, দ্রুত ওজন বৃদ্ধি, ইউরিনারি সমস্যা ইত্যাদি।
মানসিকভাবে-
হরমোনাল ফ্লাকচুয়েশনের ফলে ব্রেনের নিউরোট্রান্সমিটার এফেক্টেড হতে পারে যার ফলে মুড সুইং, ইরিটেশন, ডিপ্রেশন, স্ট্রেস, অ্যাংজাইটি বেড়ে যাওয়া। মনসংযোগ কমে যাওয়া কিংবা স্মৃতি শক্তি কমে আসা।
মিউজিক থেরাপি কিভাবে মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে?
রিলাক্সিং মিউজিক, রিদিমিক ব্রিথিং প্র্যাক্টিস, স্ট্রেসের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং হ্যাপি হরমোন (এন্ডরফিন) এর মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। ক্যাথরসিস কে সহজতর করে তুলতে পারে মিউজিক। নিজের আবেগ এবং অনুভূতির উপলব্ধি সুনিয়ন্ত্রণ করার সাহচর্য সংগীত আপনাকে দিতে পারে।
এই সময়ে, বিভিন্ন ব্যথা, মাইগ্রেন, পেশী বা জয়েন্ট এর ব্যথা উপশমে সাহায্য করতে পারে। পেইন পার্সেপশনকে কমিয়ে সহনশীলতা বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করে মিউজিক। ঘুম সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার ক্ষেত্রে, শোবার আগে রিলাক্সিং মিউজিক গভীর, নিরবিচ্ছিন ঘুমের সহায়ক হতে পারে। মেনোপজ পর্যায়ে অনেকের ক্ষেত্রে কগনিটিভ ফাংশান ব্যাহত হয়, যার ফলে ব্রেন ফগ, ভুলে যাওয়া, মন সংযোগের অভাব দেখা যায়। এসব ক্ষেত্রে নিয়মিত থেরাপি সেশন কগনিটিভ ফাংশান ইমপ্রুভ করতে সাহায্য করে।
দিনচর্যায় করণীয় :
সকালে ঘুম থেকে ওঠার এলার্ম এবার থেকে কর্কশ আওয়াজের বদলে একটু মধুর কোনো মেলোডি হোক। সাত সকালে কর্টিসল লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং মন শান্ত রেখে দিনটা শুরু করার জন্য রিদিমিক ব্রিথিং প্র্যাক্টিস, চ্যান্টিং,ইত্যাদি দিয়ে শুরু করুন। যারা যোগব্যায়াম/ জিম করেন সেই সময়এর জন্য পছন্দের একটি গানের তালিকা তৈরী করুন (অবশ্যই লাউড কোনো music না ব্যবহার করাই ভালো)। মন খারাপের সময়, চেষ্টা করুন মন ভালো করে এরকম কোনো গান শুনতে। মন ভালো হয় এমন গানের তালিকা তৈরী করুন। প্রাত্যহিক কাজ গুলো এসময়ে অনেকের ক্ষেত্রে বিরক্তির কারণ হয়ে ওঠে। সেই সময় কোনো পজিটিভ মিউজিক ইনস্ট্রুমেন্ট কিংবা গান শোনার চেষ্টা করুন। গানের সাথে তাল মিলিয়ে নাচ কিংবা, নতুন কোনো ইনস্ট্রুমেন্ট শেখা অথবা ছেলেবেলার অভ্যাস ফিরিয়ে এনে আবার গান গাওয়া/ নিয়মিত চর্চা করায় নিজেকে অভ্যস্ত করার চেষ্টা করুন।
স্লো, রিদিমিক মিউজিক হার্ট রেট কমাতে, শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। প্রাত্যহিক জীবনে সেটা ভীষণ প্রয়োজনীয়। ঘুমোবার আগে ঠিক সকালের মতো রিলাক্সিং মিউজিকের সঙ্গে ঘুমোতে যান।
নিজের আয়ত্তের বাইরে যদি উপসর্গ দেখা যায়, অথবা নির্দিষ্ট কোনো দীর্ঘকালীন সমস্যার জন্য অবশ্যই সার্টিফায়েড মিউজিক থেরাপিস্ট এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
প্রাকৃতিক নিয়মে ঋতুদর্শন যেমন শুরু হয়, সময় চক্রের সাথে সেই নিয়ম পরিবর্তনও হয়। সেলফ কেয়ার রুটিনে মিউজিক থেরাপিকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারলে শারীরিক, মানসিক চ্যালেঞ্জ গুলো মোকাবিলা করার সহায়তা পাওয়া সম্ভব। প্রয়োজন একটু প্রস্তুতির। এই সময় একটু বাড়তি যত্ন এবং সচেতনতা, নিজেকে ভালো রাখার প্রচেষ্টায় মিউজিক থেরাপি, এবং একজন সার্টিফায়েড মিউজিক থেরাপিস্ট হয়ে উঠতে পারে আপনার বন্ধু। শুধু মাত্র এন্টারটেনমেন্ট হিসেবে নয়, মিউজিকের থেরাপিউটিক এফেক্ট এবং নিরাময় ক্ষমতা আপনাকে ঘিরে রাখতে পারে আপনার সংবেদনশীল মুহূর্ত গুলোতে। জীবন চক্রের পরিবর্তনে সংগীত সুন্দর করে তুলুক আপনার আগামীকে।