দোঁহা

কৌশিক সেনের কবিতা

 


ভাতেশ্বরী

ঈশ্বরীর ক্ষুধা পাইলে ছিপ লইয়া বসিয়া পড়েন পদ্মপুষ্করিণীর ঘাটে। তেচোখা মৎস্যের চক্ষু খুবলাইয়া লন আপন কোচরে। কিছুটা খান, বাকিটা চাখিয়া গুঁজিয়া রাখেন অমাবস্যার আসমানে। নিকানো আঙিনায় লিখিয়া রাখেন ক’টি অন্নপূর্ণার পাঁচালী, পঁচাভাতের আমানি গড়াইয়া দেন চন্দনচর্চিত উঠানে, রুখাচুলে জড়াইয়া লন পানকৌড়ির রক্তপালক। ঈশ্বরীর অধিক রাত্রে ক্ষুধা পাইলে আশ্চর্যমলম লাগাইয়া লন ঠোঁটের কষায়। জিভের টাকরায় ঝুলাইয়া রাখেন বনমোরগের ঝুঁটি, গুড়া গুড়া নক্ষত্রের রুটি সেঁকিয়া ভরিয়া দ্যান হাঘরে গহ্বরে। নালেঝোলে ভরিয়া তোলেন রূপনগরের কাঁথাকানি। ঈশ্বরীর ক্ষুধা চড়িলে মেঘ ঘনাইয়া আসে সাতমনি আষাঢ়ে। ধানের গরণে লাগিয়া থাকা স্তন্যে উপচাইয়া পড়ে তামাম হেমন্ত। পাতার মানতাসায় কবজি জড়াইয়া আলজিভে তুলিয়া লন অঙ্গুরিমাল প্রাণীদের। পাথরবাটিতে সাবুদানা ভিজাইয়া ডাক দেন দাঁড়কাকদের। গর্ভবতী কুকুরীদের জরায়ুতে বিছাইয়া দ্যান সুবাসিত শতরঞ্চি। সাপলুডো বা নিদেনপক্ষে ষোলোঘুটি না পাইলে মেঘ চাটিয়া সাফ করেন শতরঞ্চি হইতে।

ঈশ্বরীর ক্ষুধা পাইলে বাতাবিবনেও শৃগালের ডাক শোনা যায়!


ছাগী

দেহের অন্ধিসন্ধি থেকে গ্রাসের আশ্বাস রাখি। প্রভাবিত গাভীন ছাগী ও পঞ্চমুখী জবার বাগান। সাবলীল ঘোড়ার খুরের দাগ লেগে থাকে মন্দির চত্বরে। দেহের ঘ্রাণে ঘ্রাণে জাগ্রত হন নৃমুণ্ডমালিনী ঈশ্বরী। হাঁড়িকাঠ খুঁটে খায় নটমন্দিরের পাগলী। মাছি ওড়ে, ঠাকুমা রক্ততিলক পরিয়ে দেন নাতির কপালে। দুএক ফোঁটা অশ্রু ছলকে পড়ে ছাগীর বাঁটে।

হাঁড়িকাঠে এখনও কি উলুধ্বনি! শঙ্খ বেজে ওঠে মুহুর্মুহু। ব্যাব্যা ডাকে টলে যায় পঞ্চমুণ্ডের আসন। আষাঢ় ঘনায় নির্ভার অলাতচক্রে। তবে কি চন্দ্রকলা সম্পূর্ণ হয়নি এখনও! অর্ধভুক্ত চাঁদ ফেলে জঙ্গলে সেঁধিয়েছে রাহুকেতু। উচ্ছিষ্ট ছড়িয়ে পড়েছে তেপান্তরের এদিক সেদিক। ক্ষুধার বর্তুল আঁকড়ে ধরে ছাগীর স্বপ্ন।

কচি কাঁঠাল পাতায় ভরে উঠেছে বৃক্ষ। খৈল চুনির সাথে ইতিউতি ছড়িয়ে পড়েছে সালোকসংশ্লেষ। গর্ভদাগ কবেই উঠে গেছে লেংটির ভদ্রাসন থেকে। চরে বেড়াচ্ছে ছাগীর বাচ্চারা। মায়ের দুধ ছেড়ে খইলচুনি ধরেছে কেউকেউ। লাদিতে ভরেছে নাটমন্দির। ধর্ষিতা পাগলির পেট ফুলে আপেলগাছ। আর কিছুদিন পরেই গোটা কাশ্মীর নেমে আসবে গনগনে গর্ভগৃহে। সেদিনের আশায় জাবর কাটে ছাগি…




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন