দোঁহা

রহিত ঘোষালের গুচ্ছ কবিতা

 


অনুচ্ছেদ

বহুদূরের আকাশে দাবানল,
চিতা, সভ্যতার চিতা,
শেষ ওয়াক্ত,
এসো তুমি আমি চুপচাপ দাঁড়াই,
মুখ ন্যুজ্ব,
সীমাহীন অপরাধ তুলেছি ছবিতে,
পাঁচমাথায় দমচাপা চুম্বন,
গৃহবধূ প্রণাম করে, মরণপণ করে,
রূপকথার ঈশ্বর,
পাহাড়ি শ্লোক রক্ত পাশা তছনছ করে,
চিল-শকুনের ভূত শিরদাঁড়া-ঘাতক হয়,
সান্ধ্য উলঙ্গ শরীরে হাবুডুবু খায়,
ওখানে আমাদের দস্তখত-
যৌনঝড়-
ভাটিগান-
নাগপাশ-জগৎ বিনিদ্র থাক,
টর্চ হাতে আমরা মাঠ পার করি-
হাঁটু জঙ্গল, ভাঙা ডাকাত মন্দির,
ডালপালা ডিঙোই,
পরিত্যক্ত বাড়ি, মায়াচরিত,
দগ্ধ প্রহর গুনছে স্ফুলিঙ্গ,
উনোনে গুঁজে দাও আলেয়া,
দৃশ্য নিয়ে কাটিয়ে দেব বাকিটা জীবন
চোরাপথের মঙ্গল কামনায় আমরা
পরস্পর তমসা ঢিবির কাছে কিছু
অনুচ্ছেদ হয়ে থাকি



আমাদেরও কিছু চিৎকার আছে

রঙিন কাগজের চরকি
মনে করো তার ভেতরেও একটা চিৎকার আছে
যা আমরা কেউ শুনতে পাই না
আমাদের ভেতরের অনুরণণের মধ্যে
এক সুদূর-প্রসারী সংলাপ বাস করে
মর্ম-হৃদয়ের ক্ষত আপনা আপনি ঠিক হয়ে যায়

উত্তাল সমুদ্রে ভেসে চলে রণচণ্ডী বাতাসের দাপট
অতিষ্ঠ আগুনেয়গিরি মরে যায় 
নিরবে আমাদের চিতাভস্মের তলায় 

ডিঙিয়ে যাই আমরা জলজ্যান্ত সব সংসার,
হোঁচট খাই, শ্বাস ছাড়ি, সদ্যস্নাত বান্ধবীকে 
সোঁকোর কাছে শুষে নেই-
সে কথা দেয় সে আমার হেঁসেল ঠেলবে,
মুখের কাছে কাপ-ডিশ ধরবে,
মর্গের বেঞ্চিতে বসে থাকবে 
আমার লাশের 
অপেক্ষায়...

 

অবিশ্বাস্য স্পন্দনের মতো

যারা আত্মপ্রকাশ করবার সুযোগ পেয়েছে
কিন্তু হারিয়েছে শব্দ কিছুটা অজান্তেই
যারা ভুলে গেছে তোমার কথা নিজেদের
যাত্রা পথে
তারা তোমার হৃদয়ে অপেক্ষা করছে
একদিন উড়ে যাবে প্রজাপতি হয়ে

শুধু তোমাতেই অর্পণ করেছি দীর্ঘশ্বাস
শুধু তোমাতেই সঁপেছি  তব বিশ্বাস

আস্তে আস্তে গড়ে তুলেছিলাম আমরা আমাদের বাসা
ঠোঁটে নিয়ে খড়কুটো
তুমি তো চাঁদের আলোর মতো এক সম্ভাবনা

এই নিদারুণ গ্রীষ্মেও তুমি সম্পূর্ণ শুকিয়ে যাওনি 

তুমি ঘরে ফিরে আসতে ভুলে যাও প্রতিবার
অবিশ্বাস্য স্পন্দনের মতোই তুমি স্পষ্ট





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন