দোঁহা

রূপক চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা

 


১. 

যাও, পারলে

শীতের হিম আঙুলে 

হিরন্ময় রোদের আংটি পরিয়ে দিয়ে এসো।


ভালোবাসা চিরকালেই ভিখারি হয়ে থাকেতে চায়

নবান্নের দেশে। মাথায় চরে বেড়ায় নীলাভ হাঁস!


তাকে ঘরে এনে বসাও

শুশ্রূষা দাও উত্তাপ মাখানো কপালে।

দক্ষিণ জানালা খুলে দেখাও

বসন্ত এলেই

কি করে কোকিল জন্ম ফিরে পায় সমস্ত বৈরাগী পুরুষ! 


২.

শীত এলে আমরা ক্রোমোজম বদলে নিয়ে

চার দেওয়ালের উষ্ণতায়  শীতঘুমে যাই।


ভোরের কুয়াশা দ্রবীভূত হলে

ঢলঢলে রোদ পড়ে, পৃথিবীর পিঠে

যুবতী বরঙ ধানিজমি। সোনায় মোড়া গরব।


পাকা ধানের গন্ধ নিয়ে

মোনহর গোয়ালা ঘরে এসে 

বৌ'য়ের গালে চুমু খায়।

বৌ তখন পদ্মাবতী। সংসারটি পদ্ম পুকুর! 


বৌয়ের গায়ের থেকে বাঁশকাঠি ধানের গন্ধ পেয়ে

মনোহর 

ক্রোমোজম বদল করে না কোন দিন! 


৩.

লোকটা পুড়ছিলো। চিতার দহনে মৃত্যু উৎসব

এমন শীতকালেও।

আমরা তাসা পিটিয়ে, মদ খেয়ে

 আনন্দ করলাম। লুচি তরকারি শেষ করে

 কুলকুচি করলাম। পোড়া কাঠ বুকে নিয়ে

অসুস্থ নদীর শরীর তখন হিম হয়ে আছে।

পায়ে পায়ে উঠে এলাম নদী ছেড়ে, পাড় ছেড়ে,

নিজের শহর ও মানুষের ভীড়ে।

নাগরিকত্ব যেখানে উত্তাপ ছড়াচ্ছে 

স্বর্ণময়ূর হয়ে। 


ঘরে ফিরে, চতুর চিহ্ন গুলি গা থেকে মুছে ফেলে

সরল বারান্দায় আসি। চায়ের কাপ হাতে

বসে বসে নিজের ছায়ায় মানব জন্ম খুঁজতে থাকি!


৪.

তোমাকে হিম মঞ্জরি দেবো। পারলে,

এই গোটা শীতকালে খোঁপায় গুঁজে রেখো।


সম্পর্ক সাঁকোর নীচে এই ছোট্ট জল প্রার্থনা

কাঠের ডিঙায় সোনালী ডিসেম্বর বাইছে ওরা।

পশম জড়িয়ে শরীর সাজানো ফুটপাত

তুমি আমাকেই নির্বাচিত করো,

অন্তত এই শীত কালে

দুজন মুখোমুখি বসবো খোলা আকাশের নীচে। 


অপ্রস্তুত হাতে গুঁজে দেবো হিম মঞ্জরি 

তোমার বহুরাতের নক্ষত্র জড়িত খোঁপায়।


৫.

শোক আর শীতকাল পাশাপাশি হাঁটে।

প্রেমিক প্রেমিকা। হত্যা ও হত্যাকারী। 

হেঁটে হেঁটে 

দো- মহনার খাল পেরিয়ে

কাঠের সাঁকো পার করে

ছাতিম বনের শ্মশানে পৌঁছায়। 


হারু পিসির চিতার চারপাশে বন তুলসীর ঝোপ।

তুলসী মঞ্জরি। শিশিরে ভেজা থোকা থোকা হাসি।


হারু পিসি হেসে হেসে

শোক ভুলিয়ে দিলে শীতকালের!






একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন