১.
"অকলঙ্ক শশীমুখী,
সুধাপানে সদা সুখী,
তনু তনু নিরখি অতনু চমকে..."
তখন অনেক ছোট, তিন কি চার। নিবারণ চন্দ্র নার্সারিতে সদ্য হাতেখড়ি। বাড়ির ঠাকুর ঘরের ঝুলত বিবর্ণ ক্যালেন্ডার। দয়াল বস্ত্রালয়, স্টেশন রোড, ভদ্রেশ্বর। ক্যালেন্ডারে বড় অদ্ভুত এক ছবি।
চিন্ময়ী তারা শিশু ভোলানাথকে স্তন্যদান করছেন। তাঁর শ্রীমুখ জুড়ে সে এক অপার মায়াবী আলো, মাতৃকরুণায় টইটম্বুর। তিনি তখন মহেন্দ্র-জায়া নন, জননীস্বরূপা। সাক্ষাৎ মা।
মায়ের কাছে ছুটে যেতাম। কিছু বোঝার আগেই গুঁজে দিতাম মুখ স্তনাধারে। মা হাসতেন - "তুমি না এখন বড় হয়ে গেছ? এসব করতে আছে?" মায়ের কথা কানেও পৌঁছত না। বৃন্তে মুখ, আড়চোখে তাকাতাম ক্যালেন্ডারের দিকে। মা সবই বুঝতেন। বুকে জড়িয়ে ধরে বলতেন
- "দেবাসুর মিলে সমুদ্রমন্থন করলো, অমৃতের আশায়...কিন্তু তাতে উঠল হলাহল...ভয়ংকর এক বিষ...গোটা প্রকৃতি ছটফট করে উঠল বিষের জ্বালায়, সবাই ত্রাহি ত্রাহি করতে লাগল...তখন মহাদেব সেই বিষ নিজ কণ্ঠে ধারণ করে, নীলকন্ঠ হলেন...কিন্তু খোদ মহাদেবও দারুণ সেই বিষের জ্বালায় ছটফটিয়ে ওঠেন...তখন মা তারা তাকে দুধ খাওয়ান, ওমনি সব বিষ অমৃত হয়ে গেল..."
- "মা তারা কে, মা?"
- "তিনি দেবী পার্বতীর আরেক রূপ...দশমহাবিদ্যার একজন...
মা সুর করে আমায় 'অন্নদামঙ্গল' শোনান -
'নীল পদ্ম খড়্গ কাতি সমুণ্ড খর্পর
চারি হাতে শোভে আরোহণ শিবোপর...'
আমি অবাক হয়ে শুনি। আর অপলক তাকিয়ে থাকি সেই ক্যালেন্ডারের দিকে। পার্বতী শিবের স্ত্রী, তিনি কেন তাঁর মাতৃরূপে আবির্ভূতা হলেন, সে তত্ত্ব সার জেনেছি অনেক পরে। কিন্তু সেই মুহূর্তে ওই পুরনো ক্যালেন্ডার প্রথম কালীকথা শিখিয়েছিল, পরিচয় করিয়েছিল নিত্যাতারা, কামেশ্বরীর...
আমি আবারও মা-কে জড়িয়ে ধরি, মাতৃস্তন্যে মুখ গুজি, ঘ্রাণ নিই, মা হাসেন...আর আমি দেখতে পাই তাঁর বক্ষস্থল ফুঁড়ে আলো গড়িয়ে পড়ছে, আঁধারবিনাশী শুভ্রালোক, অমৃতসমান...
২.
'শুনেছি মা-র বরণ কালো,
সে কালোতে ভুবন আলো,
মায়ের মত হয় কি কালো,
মাটিতে রং মাখাইয়ে?'
তখন স্কুলে পড়ি। সিঙ্গুরে গেছি। ফুটবল ম্যাচ। ভদ্রেশ্বর থেকে সাইকেল চালিয়ে পৌঁছে বেজায় ক্লান্ত। টনটন করছে পা, খেলতে নেমে দেখি থরথর করে কাঁপছে। বল বাঁ দিকে মারি ডান দিকে যায়; ডান দিকে মারলে, ব্যাটাচ্ছেলে ছোটে বাঁ দিকে...এ কি আজব কারবার!
তিন গোলে হার। বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যে গড়াচ্ছে। গাঁয়ের এক বৃদ্ধমাতব্বর দাঁত বের করে বললে, "খেলায় তো হারলে, ডাকাত কালী না দেখলে আরো বড় হার..." ডাকাত কালী! সেটা আবার কী?
সেই প্রথম জানলাম সিঙ্গুরের প্রসিদ্ধ ডাকাত কালীর কথা, রঘু ডাকাত, বিশে সর্দার, সনাতন বাগদীদের মত দুর্ধর্ষ ডাকাতদের আরাধ্য...শতাব্দী প্রাচীন আটচালা মন্দির, একসময় নরবলি হতো, সারা গায়ে অশ্রুত ইতিহাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন স্বয়ং সিদ্ধেশ্বরী...
খেলার মাঠ থেকে সাইকেলে বড়জোর দশ মিনিট। দেখলাম তাঁকে। সে বড় ভয়ংকর...আমি এমন মাতৃমূর্তি আগে দেখিনি, গোল-গোল চোখ, রক্তাভ ওষ্ঠের পাশে বেরিয়ে আছে দাঁত...যেন সাক্ষাৎ গুহ্যকালী, তাঁর রূপকল্প ভয়ানক, গাঢ় মেঘের ন্যায় গাত্রবর্ণ, তিনি লোলজিহ্বা, চতুর্ভুজা, গলায় নরমুণ্ডমালা; হাস্যযুক্তা...দিনের বেলাতেই তাঁর চোখে চোখ রাখা যায় না, রাতের বেলায় মৃন্ময়ী মূর্তি পানে তাকানোও কল্পনাতীত...দেখা মাত্র সর্বাঙ্গে অদ্ভুত শিহরণ, যা আতঙ্ক, ভয় ও সম্ভ্রমের... অথচ কী অভূতপূর্ব তাঁর হাসি, যেন কালাকালের পার হতে অট্টহাস্য উঠে এসেছে মেঘনিনাদের মত, এবার আকাশভাঙা সহর্ষ বৃষ্টি নামবে...
'ওঁ খড়্গং চক্রগদেষুচাপপরিঘান শূলং ভুসূণ্ডিং শিরঃ
শঙ্খং সন্দধতীং করৈস্ত্রিনয়নাং সর্বাঙ্গভূষাবৃতাম্'
সিঙ্গুর থেকে সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরছে বন্ধুর দল। কেউ বিশেষ কথা বলছে না, সন্ধ্যে ঘনাচ্ছে পশ্চিমাকাশে...
ধিতারা পেরিয়ে আসার সময়, দেখি, বাড়ি ফিরছে কৃষক রমণীরা; কালো আদুর গা, সামান্য বস্ত্র তাদের শরীরে, হাতে বেতের ঝুড়ি, ধানের বস্তা, কোমরে গোঁজা হাঁসুয়া... নরম পিচের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে খিলখিল করে হাসছে তাঁরা, ঠেলা দিচ্ছে, ঠাট্টা-তামাশা ঠিকরে উঠছে; সাইকেলের বেল্ বাজার শব্দ শুনে ফিরে তাকায়, স্মিতহাস্যে...
কী অদ্ভুত মিল, কী অদ্ভুত সামঞ্জস্য...এই মুখ, এই চোখ, এই হাসি-ই তো দেখে এলাম একটু আগে... কী ভয়ংকর সুন্দর মাতৃপ্রতিমা...
গোধুলির আলো গায়ে মেখে হেসে উঠছে তাঁরা, অট্টহাস্য যেন; তার প্রতি ধ্বনি প্রতিধ্বনিতে মিশে আছে সম্মোহনী মন্ত্র...
আমি জানি, একটু প'রেই বেরিয়ে আসবে -
রক্তাভ, ক্ষুধার্ত দাঁত!
৩.
'পশিতের উজীর ধারা,
গলে মুণ্ডমালা
হেট মুখে চেয়ে দেখো পদতলে ভোলা
মাথায় সোনার মুকুট
ঠেকিছে গগনে
মা হয়ে বালকের কাছে উলঙ্গ কেমনে...'
কলেজের ফার্স্ট ইয়ার। বৈদ্যবাটি গেছি, এক পরিচিতের বাড়ি। বাড়িতে কালীপূজা, রক্ষাকালী। বহুদিনের পুজো, বন্ধুস্থানীয়ের পিতৃপুরুষের সময় থেকে, অঞ্চলে প্রভূত নামডাক, একসময় নাকি ও অঞ্চলে নরবলিও, এখন ছাগশিশু...ফলে বহু লোকের সমাগম, হইচই, ব্যস্ততা।
অথচ এসবের থেকে দূরে শামিয়ানার নীচে 'তিনি' বিরাজিতা; নিস্পলক, অতন্দ্র, মহামায়া...
এমন সময় বিচিত্র দর্শন কিছু মানুষের আগমন। রক্তকালাচ পট্টবস্ত্রধারী, মাথায় রক্ততিলক, মুখ ভর্তি দাঁড়ি, ভাটার মত চোখ, কাঁধে ঝোলা...রব পড়ল বাড়ির ভিতর - "মহারাজ এসে গেছেন! মহারাজ এসে গেছেন!"
'মহারাজ' যিনি তাঁকে দেখলেই ভয় হয়, বেশ ওজস্বী একটা ব্যাপার, গোঁফদাঁড়ির জঙ্গলের মধ্যে এক জোড়া চোখ আগুনের মত জ্বলছে, তাঁকে দেখেই সম্ভ্রমে পথ ছেড়ে দিলেন সবাই, জানা গেল খুব বড়মাপের তন্ত্রসাধক তিনি, সঙ্গে তাঁরই দুই চ্যালা।
সরাসরি মাতৃমূর্তির সামনে পৌঁছলেন তিনি। দু'বার "মা মা" বলে ডেকে মাটিতে লুটিয়ে, সাষ্টাঙ্গে প্রণাম। পুজো শুরু হল।
আমার অবশ্য সেদিকে মন নেই, বাড়ি প্রদক্ষিণ করছি, বিরাট বাড়ি, লাগোয়া পুকুর, বাগান, সারি সারি নারকেল গাছ, বেশ অবস্থাপন্ন বোঝা যায়...সময় বয়ে চলে...
এমন সময় পুজাপ্রাঙ্গনে বেজায় শোরগোল। বলির আয়োজন চলছে। টেনে হিঁচড়ে নিয়ে আসা হয়েছে ছাগশিশু, মাথাভর্তি তার সিঁদুর, সে কী আর্তনাদ! তার গলা ছাপিয়ে আরেক শিশুর কান্না, জানতে পারি বন্ধুটির ভাইপো, একরত্তি শিশু, তার খেলার সাথীকেই ধরে আনা হয়েছে, উৎসর্গের জন্য...
আমি স্থানুবৎ দাঁড়িয়ে, অবাক হয়ে দেখি একদল মানুষ, লোভার্ত চোখ, টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে ছাগশিশু...অন্য কিছু লোক আপ্রাণ সামাল দিচ্ছে ছোট্ট শিশুকে, সে এক অদ্ভুত প্রতিযোগীতা, সারল্য বনাম লালসার, সব ছাপিয়ে তারস্বরে বাজছে ঢাক, কাসরঘন্টা...
একসময় সব শান্ত হয়ে আসে, ছাগরক্তে ভেসে যায় দালান...দেবী প্রসন্ন হন...প্রস্তুত হয় মহাভোগ, হাতে হাতে বিলি...উপচে পড়ে ভিড়, মহার্ঘ্য নৈবেদ্য গ্রহণ চলে, গোগ্রাসে গলাধঃকরণ...
কিন্তু সেই শিশুটি, ছোট্ট ছেলেটিকে আর দেখতে পাইনি আমি উল্লাসমুখর প্রাঙ্গনে...
সেই শিশুটিকে খুঁজে চলেছি আমি, আজও...
৪.
'অভয়-পদ-কমলে,
প্রেমের বিজলী জ্বলে
চিন্ময় মুখমণ্ডলে
শোভে অট্ট অট্টহাসি...'
কলকাতা ছেড়েছি কয়েকমাস হল। রাজধানীর অস্থায়ী বাসিন্দা, অন্নসংস্থানের উদ্দেশ্যে। ঠাঁই নিয়েছি কালীবাড়িতে, ধর্মশালার এক চিলতে খাটিয়ায় পেতেছি সংসার...
ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার সময় 'তাঁকে' ডাকি না, সারাদিন শহরের এমাথা-ওমাথা চষে ঘরে ফিরি, একবেলা আধ পেটা খেয়ে মাথা থেকে ঘাম গড়িয়ে পড়ে, সারাদিনের ক্লান্তি সরিয়ে সিগারেট জ্বালাই, মন্দিরের দিকে তাকিয়ে প্রার্থনা করি -
"ফেলে এসেছি যাকে তাকে যেন হারিয়ে না ফেলি, তুমি তাকে দেখ মা..."
প্রতিদিন এই এক ধরাবাঁধা রুটিন, চাকরি খুঁজতে যাওয়া, ঘরে ফেরা, বাসিভাত খাওয়া ও মন্দিরে মাতৃপ্রতিমার সামনে নতজানু হই, প্রতিদিন...
কী আশ্চর্য! যে ফোন আসার আদৌ কথা ছিল না কখনো, একদিন সে ফোন আসে। যাবতীয় মামলা-মোকদ্দমার দফারফা...জানতে পারি, কালের অদৃষ্টের অদ্ভুত নিয়মে হারিয়েই গেছে সে...আর কোনওদিন ফিরে পাওয়া যাবে না...
দাউদাউ জ্বলে ওঠে মাথা। এত কষ্ট, এত কৃচ্ছসাধন, এত অভুক্ত যাপন...এত যে প্রার্থনা করি, মাথা ঠুঁকি, সবই কিনা বৃথা? সবই শুধুই ফাঁকি? মিথ্যা? প্রতারণা?
এমন দেবীর মুখদর্শন করাও পাপ...
ছ'মাস দাঁতে দাঁত চেপে থাকি, লুকিয়ে রাখি কান্না, মনঃস্তাপ, যাবতীয় হাহাকার...তবু মুখদর্শন করিনি তবু 'তাঁর', দাঁড়াইনি এসে মন্দিরে, গ্রহণ করিনি প্রসাদ, 'তিনি' আড়চোখে হেসেছেন, হাসুক যত খুশি, তবু তাকাব না ওই কালোমুখে...
তিনবছর পর, নব্যবিবাহিত এক দম্পতি মন্দিরপ্রাঙ্গনে এসে দাঁড়ায়, বধূটি গায়ে আঁচল জড়িয়ে ভক্তিভরে প্রণাম করে, আরতির তাপ নেয়, মাথায় ছোঁয়ায়...ঘুরে দাঁড়িয়ে তার স্বামীকে ডাকে...
মানুষটি একটু পাগলপারা, অদ্ভুতমুখ করে এদিক ওদিক দেখছে, কিন্তু মন্দিরে পা রাখছে না...মাতৃমূর্তির দিকে তাকাচ্ছেও না...
বধূটি আবারও ডাকে, এসো এসো, জোর করতে থাকে। একপ্রকার বাধ্য হয়েই মানুষটি মন্দিরে উঠে আসে। মাতৃপ্রতিমার মুখোমুখি হয়। চোখে চোখ রাখে।
'তিনি' তখনও হাসছেন, দিগ্বিদিক আলো করে, ভুবনভোলানো সেই হাসি...
এবার হেসে ফেলেন মানুষটিও...হো হো করে, নববধূ-টি চমকে ওঠে
সন্ধ্যের আরতি পর্ব শেষে এক বয়স্ক মানুষ মন্দিরের সিঁড়িতে বসে গাইছেন -
'এই সংসার ধোঁকার টাটি
ও ভাই আনন্দবাজারে লুটি
ওরে, ক্ষিতি জল বহ্নি বায়ু,
শূন্যে পাঁচে পরিপাটি...'
৫.
আদিভূতা সনাতনী,
শূন্যরূপা শশি-ভালী
ব্রহ্মাণ্ড ছিল না যখন,
মুণ্ডমালা কোথায় পেলি...'
অপারেশন থিয়েটার, ডাক্তার বেরিয়ে এলেন।
উদ্বিগ্ন যুবকের মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলেন, একটু দম নিয়ে - 'কনগ্রাচুলেশনস! ইটস্ আ বয়!
হঠাৎ করে চেনা জগতটাই যেন পালটে গেল, এত ব্যস্ত পৃথিবী, এত শব্দকল্পদ্রুম...এক মুহূর্তে শান্ত হয়ে আসে...যুবকের কাঁধে হাত রেখে অভয়বাণী - 'চিন্তা নেই, মা-ছেলে দুজনেই ভালো আছে...দেখে আসুন, ছোঁবেন না যেন।'
ইনকিউবেটরের সামনে দাঁড়ায় যুবকটি। সাদা তুলোর মত শিশু, টাওয়েলে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়ানো, নড়ার উপায় নেই...ছোট্ট ছোট্ট আঙুল, চোখ, নাক মুখের এক ভিনগ্রহ, এক অজানা ব্রহ্মাণ্ড...
ফর্ম্যালিটি শেষ করে, সে বাইরে এসে দাঁড়ায়। ফোন করে বাড়িতে দেয় সুখবর৷ তার পর মেইন গেট টপকে হাসপাতালের বাইরে৷ এই নোংরা, আবর্জনাময়, ক্লেদাক্ত গ্রহ'টাকে এত সুন্দর মনে হয়নি কখনও...বুক ভরে শ্বাস নেয় সে...চায়ের অর্ডার দেয়, পকেট থেকে সিগারেট বের করে গুঁজে দেয় ঠোঁটের ফাঁকে...
চায়ের দোকানের পাশে সরু গলি, বসার জায়গা, আর একটা ঘুপচি মন্দির। উঁকি দিয়ে দেখলে ভিতরে পাশাপাশি শিবঠাকুর, বজরংবলী আর দেওয়ালে...চারচৌকো দেওয়াল ঘড়ির পাশে ঝুলছে একটা বিবর্ণ ক্যালেন্ডার...বহুযুগ আগে স্মৃতির গলিঘুঁজিতে হারিয়ে যাওয়া সেই ছবি...
চিন্ময়ী তারা শিশু ভোলানাথকে স্তন্যদান করছেন। তাঁর শ্রীমুখ জুড়ে সে এক অপার মায়াবী আলো, মাতৃকরুণায় টইটম্বুর। তিনি তখন মহেন্দ্র-জায়া নন, জননীস্বরূপা। সাক্ষাৎ মা!
যুবক চমকে ওঠে, এ দৃশ্য তার পরিচিত, এ ছবি সে আগেও দেখেছে...তাঁর নিজের ছোটবেলার কথা মনে পড়ে, মনে পড়ে মায়ের মুখ, তাঁর কাছে শোনা কবেকার সেই গল্প - "নীলকন্ঠ মহাদেবও দারুণ সেই বিষের জ্বালায় ছটফটিয়ে ওঠেন...তখন মা তারা তাকে বুকের দুধ খাওয়ান, ওমনি সব বিষ অমৃত হয়ে গেল..."
দূরে কোথাও ঘন্টা বেজে ওঠে...মুহূর্তে বাসের আওয়াজ, ট্যাক্সির শব্দ, হইচইপূর্ণ রাস্তা ফুটে ওঠে, পথচলতি মানুষ ধাক্কা দিয়ে যায়, নির্বিকার যুবকটির গলা ধরে আসে...দু হাত জোড় করে কপালে ঠেকিয়ে অস্ফুট কণ্ঠে বলে ওঠে -
"মা!"
বিশেষ দ্রষ্টব্য ~ রচনায় উল্লিখিত গানগুলি সাধক রামপ্রসাদ, কমলাকান্ত ও ত্রৈলোক্যনাথ সান্যালের রচনা থেকে উদ্ধৃত ও সংকলিত।