দোঁহা

অর্ণব সামন্তের গুচ্ছ কবিতা

 

আচমকা শরৎ 

আচমকা শরৎ যখন অকালবোধনে ডাকে 
দ্রাঘিমা দাঁড়ায় থমকে লাজে রাঙা, অবাধ্য লাস্যে 
লালিত্যে ধুয়ে দেয় সমস্ত সংস্কার, আদি অকৃত্রিম জাগে 
ভুলে যায় সমস্ত জগৎ, কায়া, মায়া, ছায়াপথ 
কথার গভীরে কথা ডুবে যায়, ভেসে ওঠে অমল ভাসানে 
আবার নির্ভেজাল প্রলয়ে উদ্ভাসিত হয় অবাধ সৃজন 
সমস্ত চুরমার করে ঘটে অভূতপূর্ব নির্মাণ 
পদ্মপাপড়িগুলি ফুটতে থাকে ক্রমশঃ আদরে সোহাগে 
ঠোঁটে ঠোঁটে অস্ফুট প্রতিজ্ঞা আলোকবর্ষে হেঁটে যায় 
হৃদয়ে হৃদয়ে অলকানন্দা কবি ও কবিতা অসহায় ভাসে 
প্রাণে প্রাণ ঢেলে প্রাণাধিক মাতে স্বরবর্ণ উচ্চারণে , স্থাপনে 
আধফোঁটা অশ্রুশিশির জমা হয় দ্রাঘিমার নয়নে 
অক্ষাংশ থাকে না দূরে ওভারল্যাপে শুধু বিদ্যুচ্চমক বিদ্যুচ্চমক 
আচমকা শরৎ এসে দাবি করে , মায়িক সম্পূর্ণ তুচ্ছ
আয় আমরা উৎসের স্রোতে অমায়িক ভাসি 
এই মরণে, এই সমাধিতে ডেকে নিই জীবনের চেয়েও বেশি জীবন 
শিউলি সাদা ভাতের সুঘ্রাণে ম'ম' গেরস্থালি 
ওতপ্রোত অভিষিক্ত দ্রাঘিমা অক্ষাংশ ভুলে 
এককের গানে মুক্তিবেগের উড়ানে চলে অন্তর্কথন !



 ক্লদ মনের নারী

রেমব্রান্টের হলুদ আঁধারে ভাসে প্রাগৈতিহাসিক চোখ
ভাস্কর্য ছেনে ছেনে ভাবনাকে রূপ দেওয়া
লাবণ্য গ্যাছে গেরস্থালিতে বহুপদ ভোজন দিতে
লালিত বাৎসল্য পালিত পৌরুষ জ্যোৎস্নার ডানা ছড়ায় 
আগুনে পুড়েও আগুনের হাত থেকে পৃথিবী বাঁচায় 
প্রবহমান আগুন জেগে থাকে খননে খননে চমৎকার 
রেখায় লেখায় সেই বন্দিত্বের অদ্ভুত মুক্তি উড়ান 
ঢেউ ঢেউ চলকে চলকে পড়ে পানপাত্রের কানা থেকে 
নক্ষত্র সীমান্ত কাঁটায় ফুটে ওঠে কুসুম তার মধ্যে মন 
ক্লদ মনের নারী হয়ে সে সুখের শরশয্যায় আবহমান স্রোতস্বিনী!


পাগলির কিসসা 

পাগলি একইপ্রকার থাকে 
কূপমন্ডুকতাকে ভাবে সমুদ্র পিপাসা 
চৌকাঠে ঢাক্কায় ইগো , স্বতন্ত্রতা
অথচ চুরমার হয়ে চেরাপুঞ্জির বৃষ্টি হবার কথা ছিল 
নয়নে নয়ন পড়লেই গ্যালাক্সির 
গ্যালন গ্যালন আলোকসম্প্রপাত উথলায় 
মছ্ছকন্যা হওয়া তার হয় না 
ছেলেকে টিউশনে নিয়ে যায় , বরকে বিরিয়ানি দেয় 
দমকা হাওয়া সারা শরীর মন কাঁপায় 
তবু সে পাত্তা দেয় না, এক লাখি স্যালারিতে 
ভাবনায় স্যালাইন দেয়, নতুনভাবে বাঁচবার চেষ্টা করে 
কিন্তু নিজের কবর নিজেই খোঁড়ে 
কফিনে শেষ পেরেক নিজেই মারে 
চিতার মুখাগ্নি নিজেই করে 
প্রাণ দাও প্রাণ দাও বলে 
শবকে আঁকড়ায় আগুন আগুন ভালোবাসে 
যে আগুন তাকে বাঁচাতে পারত 
তাকে না ভালোবেসে যে আগুন ছাই করে 
তাতেই সমর্পণ করে নিজেকে 
তবু পাগলি ঘুরে ফিরে ঘুরে ফিরে 
সেই পাগলের দিকে ছোটে 
জীবনকে খুঁজে পেতে, নিজে আস্ত একটা জীবন হতে

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন