দোঁহা

শিশির আজমের গুচ্ছ কবিতা

 

 

দুপুরে কানন বালার বাড়ির সামনে বৃষ্টি

শীতকালটুকু চেয়ে নিয়েছিলাম আমি
ওদের প্রবন্ধপাতা থেকে
আর ১৩৭৫ টাকা মাইনে পকেটে নিয়ে ঘামছিলাম
আমার পাহাড়
আমি পারছিলাম না বয়ে বেড়াতে।

কারা
সূর্যকে পাহারা দেয়
আর
পরিত্রাণহীনের কাফেলায় পেছন পেছন হাঁটে?

নীল রঙের শেয়াল, ওকে আমি শেখাইনি কিছু,
'বৃষ্টির ভেতর খেলবো সূর্যটাকে নিয়ে,
আমি আর হাবা কয়েকটা নেকড়েছানা'
ও বলে,
'কুয়াশা আমার মা'--
নীল রঙের লেজ দুলিয়ে ও চলে যায়।

আমি বৃষ্টি দেখতে চেয়েছিলাম।
বৃষ্টিতে একটা গাড়ি
ভিজছিল,
ঘোড়া কোথাও ছিল না।

হালকা হয়ে আসে আমার পাহাড়।


তুষ

জোনাকির দেশে তুষঘর
হিম চাঁদ খড়পাতাহীন।
হীরের পিদিমে ঘুম গোণে
শিশু আর শীতার্ত পুরুষ।

তুষগন্ধে গৃহের গরিমা
উন্মেষিত-- ক্ষুধাপর্বে শিশু
ভরভর স্তনে আঁচড়ায়
নখ, দুধ মেখে আছে ঠোঁটে।

আর রাত নিচু হয়ে এলে
পুরুষ লুকোনো ম্যাচকাঠি
ঠুকে দেবে তুষের পাহাড়ে।

তুষপাহাড়ের নীল অগ্নি
গিলে ফেলে অভ্রপুরুষকে-
শিশু কিন্তু টেরও পায় না!

 
কালো ত্বকের নিচে আমি তেরো মাস

তার কালো ত্বকের নিচে আমি তেরো মাস
ঘুমায়ে ছিলাম
ভালবাসছিলাম নিজেরে
ঈর্ষা করছিলাম
ঘৃণা করছিলাম
নিজেরে
কুকুরের লাহান নিজেরে খামচাইতেছিলাম
রক্ত বারোইতেছিল
লাল
কালো ত্বকের নিচে তাজা লাল রক্তে
ঐটা
ঐ ভালবাসা
মিশে গেছিল তো


বিপজ্জনক প্রেম

এক মুহূর্ত থেমে, এবার ভাবো, আমার কবিতা
আর তোমার স্তনবন্ধনি
পৃথিবীকে
কীরকম ধোঁকা দিয়েছে।


সেক্স ম্যাক্সিমাম সেক্স মিনিমাম নো সেক্স

নিজের জরাজীর্ণ সরল ফুসফুসে হাত রেখে দেয়ালটা কোন্ দিকে তাকিয়ে রয়েছে
সেদিনকার সাঁতার না জানা এই জিনেটিক তরঙ্গদৈর্ঘ্যের দেয়াল
মহাদেশের বিশার চাদরে প্রয়োজনীয় নাড়িভুড়ির আস্তাবলে?
আমাদের এই সমতল ভূমিতে গাধা পাওয়া যায় না তাই ঘোড়াদেরই গাধা সাজতে হয়
ঘোড়ার পেটে ঘোড়া গাধার পেটে গাধা এই হয় শুনেছি
কিন্তু ঘোড়া আর গাধা --এর জিনসমন্বয়কারী গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নাম কী?
না কি বিষয়টা কেবল ডায়াসপোরিক পেরাডক্স
হাত কাঁপে না বলে শিশু পুরো বৃত্তটাই এঁকে ফ্যালে, বৃত্তটা তার বাগান,
আমাদের জিনেটিক ম্যাটেরিয়াল।
যুদ্ধটা চার্চিল থামাতে পারেন কিন্তু কেন থামাবেন?
গণেশ পাইন চাঁদ ভালবাসেন কিন্তু আঁকবেন কালো চাঁদ।
আসলে আত্মঅনুসন্ধানে মানুষের একেবারেই অরুচি আর আতঙ্ক
অথচ অন্যান্য সব প্রাণি এমনকি বস্তু সম্পর্কে মানুষ প্রায় সমস্তটাই জানে
তোমার তো বৃষ্টিতে ঘুন্নি লেগে যায়, সব গুলিয়ে যায়, পরে ভোগান্তি।
ভোগান্তি মানে ভোগান্তি-যেহেতু নিজেকে তুমি সৎ বুর্জোয়া হিসেবে বিবেচনা করো
আর মিশ্র কম্যুনিস্ট
এখন ব্রহ্মচারীদের ব্যাবহৃত এই টেবিলগুলোকে নিয়ে কি করা যায়
নোঙর করা সব টেবিল-স্বেচ্ছামৃত্যুনেশাতুর?
সঞ্চিত ব্যাথা ভুলে এরা তো সব মাংসের ঝাঁজে পাগল
আর জানালার এই পেট্রোলিয়াম কোম্পানির রাক্ষুসে পর্দাগুলো
নীলগাইয়ের বাস্তুপথে এঁকেছে ক্রুশ।
কোন আঁচড় রয়েছে থাকবে দেয়ালে জামরুলরক্ত সুইংসুইম
আর আইচক্রিম ঘসে দেয়া অনুতাপ
যা হারিয়ে যায় হারিয়ে যায় পারে না রান্নাঘরের টেরাকোটায়।






একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন