দোঁহা

দরজা


সোনালী জানা

কোলাপ্সিবলের শক্ত কাঠামোটা ঠেলে সরিয়ে দিতেই কী সুন্দর সেগুনকাঠের দরজা! নকশায় জলপরীর বিভঙ্গ। ঠিক তার ডানার নিচেই লক। চাবিটা ঘুরিয়ে ওই পরীর মতোই যেন ডানা মেলে ডাকলেন পর্ণা -"ভেতরে আসুন। এই আমার বাড়ি।"
ডানদিকে শু'ৱ্যাকে জুতো খুলে ম্যাডাম এগিয়ে গেলেন। পেছনে আমিও। মার্বেল-ফ্লোর, ঝকঝকে ওয়াল-পেইন্টিং। এসবে তখন একবারও চোখ বোলানো শেষ হয়নি,চমৎকার সোফাসেটটা দেখিয়ে বললেন-
" বসুন "।
তারপর যেন পরীর মতোই দ্রুত ভাসতে ভাসতে চলে গেলেন জানলার দিকে। ভারিপর্দা সরিয়ে খুলে দিলেন পাল্লা -"এইদিকটা ইস্ট। দারুন রোদ খেলে।"
যদিও আমাদের চল্লিশ পেরোনো মধ্যবয়সে সকালের নরম রোদ আর নেই। তপ্ত দুপুরের মতোই একঘেয়ে জীবন।সেই পোড়া-ঘা টুকু ঢেকে রেখেই বললাম -"নিচে নাকি উপরে থাকেন ?"
 "যখন যেমন ইচ্ছে ।"
" বাহ্! ইচ্ছের মধ্যে বেশ বৈচিত্র আছে। " 
বলেই দেখি,সামনের দেওয়াল জুড়ে পর্ণার ক্লোজআপ ছবি। হেসে উঠলাম-
" চমৎকার। রোজ সকালে উঠে তাহলে নিজের মুখই প্রথম দেখেন ?"
"একদম। তাতে একটা সুবিধাও আছে। অন্যকে দোষ দেওয়ার অজুহাতটা আর থাকে না। চলুন উপরে যাই ।"
ম্যাডামের সুবিধা অসুবিধার কথাগুলো ভাবতে ভাবতে উঠে পড়লাম।
সিঁড়ি তো নয়, যেন একটা ফটো গ্যালারি। তার মাঝে আপাদমস্তক দোল দিয়ে উঠে যাচ্ছে পর্ণা। আমার স্থবিরতা দেখে পিছন ফেরে -
"ওই যে,ওইগুলো ভাইজাগের। আর ওইটা তো বুঝতেই পারছেন, পুরী। এটা কোথায় বলতে পারবেন ?" জলের ঢেউয়ে ভাসতে ভাসতেই বলি -"আন্দামান। আপনি সমুদ্র খুব ভালোবাসেন না ?"
-"ভীষণ।"
ইতিমধ্যে দোতলার দরজা খুলে আহ্বান জানালেন - "আসুন। আমার অন্দরমহল।"
 পা রাখতেই নিজের ভিতরেও যেন একটা প্রশ্ন ধাক্কা দিলো -"আমরা কি সত্যিই অন্দরমহলে ঢুকতে পারি?"
উত্তর অনিশ্চিত। পর্ণা নিজের মতো করে একে একে দেখাচ্ছে,আমি দেখছি। একদিকের দেয়ালজুড়ে নানান বই। অন্যদিকে দেশি বিদেশি শোপিস। মুগ্ধ হয়ে বলি -"এতো কালেকশন? আপনি তো ভীষণ শৌখীন আর গোছানো মানুষ !"
পর্ণার মুখে সম্মতির ঝিলিক -
" আর আপনি?"
-"একেবারে উল্টো। বড্ড এলোমেলো বাউন্ডুলে। "
 -তারপর আমতা আমতা করে বলেই ফেলি -
" দুই বিপরীত মেরুর মধ্যে সম্বন্ধ। কেন যে আপনি রেস্ট্রুরেন্ট থেকে একেবারে বাড়ি দেখাতে নিয়ে এলেন ..?"

 পর্ণা ততক্ষনে মডিউলার কিচেনের মাঝখানে -
"চা না কফি?"
-"যা খুশি "!
-"বেশ কফিই করছি। আপনি নিজের মতো ঘুরে দেখুন।"

 যেদিকে তাকাই পর্ণার ছবি। যেন দশটা পর্ণা এক বাড়িতে। এভাবেও তবে একলা জীবনের সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া যায়? ভাবতে ভাবতেই আমার ছাপোষা মানসিকতা বলে ওঠে -"এতো বড়ো বাড়িতে একা থাকেন, ভয় করে না? "
কফি মগদুটো টেবিলে নামায় পর্ণা -"ভয় কে জয় করতেই একা থাকা। "
- কিন্তু পর্ণার চোখ যে বলছে অন্যকথা !
আর গৃহসজ্জা নয়, আমার দৃষ্টি এখন নিবদ্ধ ওই অদ্ভুত ঘন দুটি চোখে। যেন রহস্যময় এক দরজা। একবার খুলে ফেলতে পারলেই, আরও অপূর্ব সুন্দর কোনো হৃদয়সজ্জা...!

কফিমগটাকে মাঝখানে রেখে বসলাম। এক সমুদ্রের মুখোমুখি।

                     --------
Address :-
Sonali Jana
D/O-Gora Chand Jana
Vill-Roydanga -Rupayan
P. O.-Durgapur -1
P.S.-coke oven
Dist.-Paschim Burdwan
Pin-713201
West Bengal

Phone -7319265556
Mail id- jannasonali@gmail.Com





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন