দোঁহা

শব্দ-জব্দ

 


সুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়

–"স্যা--র!"
বিচ্ছুর দল আজ হঠাৎ হাজির তাদের প্রিয় হেড-মাস্টারমশাই সুবল বসু মহাশয়ের ঘরে। 
 –"বাংলার স্যার তো আসেন নি। আপনি চলুন স্যা-র! গল্প শুনব আমরা।"
উত্তরের অপেক্ষা না করেই স্যারের হাত ধরে টানাটানি শুরু করে ওরা। স্যার কে ভাল মানুষ পেয়ে খুব জ্বালায় বিচ্ছুগুলো। 
–"ওরে থাম! আমি বুড়ো-মানুষ! হাড়-গোড় ভেঙে ফেলবি নাকি!"
–"না স্যার আপনাকে যেতেই হবে!"
–"আচ্ছা বাবা আচ্ছা! 
চ-ল যা-চ্ছি!" 
একটু পরে হেডমাস্টারমশাই 
ক্লাসে প্রবেশ করেন।
ক্লাস এক্কেবারে শান্ত। প্রমাদ গোনেন তিনি। 
–"কিসের ক্লাস যেন বললি তোরা?" 
–"বাংলার স্যা--র!"
গদগদ হয়ে সবাই বলে ওঠে। 
–"হুম্! 
আচ্ছা বল তো দেখি 'আ মরি বাংলা ভাষা' কি সূচক বাক্য?"
প্রশ্ন শেষ হবার আগেই উত্তর এসে যায়। 
–"নিন্দা-সূচক স্যা--র!"
–"তা বাবা! কি করে বুঝলি তোরা?"
–"আজ্ঞে স্যার এই বাক্যটিতে বাংলা-ভাষাকে মরে যেতে বলা হচ্ছে!"
উত্তর শুনে  হেডমাস্টারমশাই চেয়ার থেকে পড়ে যান আর কি!
–"ওহ্ কি বুদ্ধি রে তোদের মাথায়! রাতের বেলায় জানালার ধারে মাথা রেখে একদম ঘুমাবি না কিন্ত!"
–"কেন স্যার?"
–"বুদ্ধি পালিয়ে যাবে যে!"
–" কিন্তু ঠাকুমা তো রেগে গেলে দিন রাত আ-মোলো-যা, আ-মরণ বলতে থাকে!" 
বোঝানো দায়! অব্যয় নিয়ে বেশী সময় আর ব্যয় করেন না তিনি। 
উঠে গিয়ে বোর্ডে লেখেন-
'থাক না বলব না কথা'। 
–"কেন স্যা--র? কি করেছি আমরা?"
সবাই বলে ওঠে। 
–"তোরা বাক্যটি উল্টোদিক থেকে একবার পড় তো দেখি!", স্যার বলেন। 
–"আরে স্যা--র!  
আপনার তো দারুন বুদ্ধি! উল্টোদিক দিয়েও তো একই কথা লেখা আছে! আর একটা স্যা--র!"
তিনি লেখেন-
'সীমার মাসী'/ 'ইরা, রাই'
'দেব দে'/ 'ইভার ভাই'। 
–"আরে বাঃ! কি মজা!"
শব্দের খেলায় খুব উৎসাহ পায় সবাই। 
তিনি লিখে যান, 'সে হেসে হেসে'/ 'ছেলে খেলা খেলেছে'।
লেখাটি দু'দিক থেকে পড়ে আনন্দে হাততালি দিয়ে ওঠে ওরা। 
–"চল এবার আমরা ধাঁধার খেলা খেলি!" মাষ্টারমশাই ছড়া কাটেন, 
–"শব্দগুলো উধাও হঠাৎ, লেখার ফাঁকে দেখি/ উল্টে দিলে পাল্টাবে না থাকবে মানে একই--
বল দেখি কে শব্দ উধাও করে ? তোদের পেন্সিল-বাক্সেই কিন্তু আছে সেটা।"
–"এ তো খুব সহজ স্যার! 'র-বা-র'। সামনে থেকে বা পিছন থেকে পড়ো না কেন এক থাকে।"
একটু ভেবে উত্তর দেয় ওরা। 
–"সাবাস! দেখলি তো নিজেরাই কেমন পেরে গেলি!"
বাহবা কে না পেতে চায়! উত্তর দিতে পেরে মহাখুশি হয় ওরা।নিজেদের অজান্তে ছোটরাও প্যালিনড্রোমের খেলায় সামিল হয়ে যায়। স্যার ভাবেন একটু হলেও পথে আসছে বিচ্ছুর দল। 
–"তাহলে বল বাংলা ভাষা নিয়ে কত মজার খেলা খেলতে পারি আমরা। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা, আমাদের গর্ব। 'আ মরি বাংলা ভাষা' প্রশংসাসূচক বাক্য, মনে থাকবে তো? 
–"হ্যাঁ স্যা--র।" 
–"যাক মাথায় ঢুকেছে তোদের!"
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন হেডমাস্টারমশাই। 
–"কিন্তু স্যা--র একটা প্রশ্ন ছিল!"
এক বিচ্ছু হঠাৎ বলে ওঠে। 
–"উফ্! আবার কি প্রশ্ন?" 
–"বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। পিতৃভাষা কেন নয় স্যা--র?"
প্রশ্ন শুনে বাকিরাও চেঁচাতে লাগে-
–হ্যাঁ স্যা-র! কেন নয় স্যা--র??"
হঠাৎ একটা কাগজের উড়োজাহাজ এসে স্যারের গায়ে লাগে।
কেউ একজন হঠাৎ বলে ওঠে, "চল রে! স্যার খেলাচ্ছলে পড়া শেখাচ্ছেন! শব্দ দিয়ে জব্দ করছেন আমাদের।"
সবাই হৈ-হট্টগোল শুরু করে। ভাগ্যিস্ ঘন্টা পড়ে যায়! হেডমাস্টারমশাই হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন। ভেবেছিলেন 'সমাস' নিয়ে আলোচনা করবেন। নাঃ! উলুবনে মুক্তো ছড়িয়ে কোনো লাভ নেই। আর বেশিক্ষণ ক্লাসে থাকলে উভমুখীসম নিজ-নামটি ভুলে যাবেন তিনি।
–"এখন কিসের ক্লাস?"
–"ভূগোলের স্যা--র।"
 –"সবাই চুপ করে বোস তোরা। এই ধাঁধাটার যে সমাধান করতে পারবে তাকে কিন্তু পুরস্কার দেব আমি। কালকের মধ্যে উত্তর চাই।" 
যাবার আগে শেষ চেষ্টা করে যান। বোর্ডের পাশে টাঙানো মানচিত্রটা দেখে আর একটি ধাঁধা লিখে দিয়ে যান–
'জল বিনা নদী মাটি বিনে দেশ/পৃথিবীকে ছোট করে সাজিয়েছ বেশ'।। 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন