অন্বেষণ
আজকাল খুব গরম পড়লে
বাড়ি ফিরতেই দক্ষিণের বারান্দা থেকে
এগিয়ে আসে অল্প ভিজে হাওয়া
আমাদের ভাড়াবাড়ির লোডশেডিং-সন্ধেগুলোয়
তোমার হাতের হাতপাখা
যেমন মুখেচোখে শান্তি মাখিয়ে দিত
কোনও রোববারে
ভেজা চুলে হাওয়ায় বসলে
বিলি-কাটা আঙুল বুলিয়ে
বাতাস এলোমেলো শোনায়
চেনা মিঠে গান,
'দত্তবুড়ি পান সেজেছে এলাচদানা দিয়ে'
শুনতে শুনতে আমার চোখভরা ঘুম তখন
একখানা কোল খুঁজতে চায়
কোন কোনদিন একা
সংসারী কাজ সেরে
ভাত বেড়ে অনাবিষ্ট গরস মুখে তুলি
সাদাকালো ছবির
ধূপকাঠি-ধোঁয়াটুকু সেসময়ে
এঁকেবেঁকে অবয়ব নেয়
নি:শব্দে পাশে এসে বসে
আর বলে
'আর দুটো ভাত নিবি কিন্তু।''
অষ্টপদী’র সংসার
আমার মা’কে কখন কবিতা লিখতে দেখিনি
সেই যে একটি দুটি ‘আয় ঘুম যায় ঘুম’
অথবা ‘আগডুম বাগডুম’
প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে বংশ পরম্পরায়
মা’রা শিখে এসেছে
সন্তান জন্ম দেওয়ার পর থেকে – এটুকুই শুনাছি।
এছাড়া দু’চোখ লাল করে পেঁয়াজ কুটে
কুচো মাছ লাল করে ভাজতে ভাজতে
সেলাই মেশিনে পাজামা’র ফাটল জুড়ে
তিনি হয়ত কোনও কবিতা ভাবেন নি।
কখনও
বিকেলে তড়িঘড়ি গা ধুয়ে
চা-জলখাবার তৈরী করতে গিয়ে
কবিতা চিন্তা করতেন কিনা জানা নেই।
মা’র কোনও দেরাজ-আলমারিতে পাওয়া যায়নি কবিতার বই।
অথচ হাতে-বোণা আমাদের সমস্ত শীতপোষাকে
মা’র উল্ট-সোজা ঘর গোণায়
রয়েছে খুঁটিনাটি অন্তমিল।
আর তার হেশেলের সুগন্ধ থেকে রাত বিচানার পাতা চাদরে
টান টান থাকতো
পয়ার-চর্যাপদে ভ্রান্তিহীন ক্লান্তিহীন মাত্রার হিসেব।
