দোঁহা

রূপক চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা

 


জল মানবের গান

১.
জলচরিত লিখেছো দিগন্তে বসে
ভিজতে চাইনি,তবু ডুবিয়ে দিলে দহন।
উপুড় নদীর পিঠে নৌকা ভ্রমণ আঁকো
রাখো গ্রামীণ কথা, কাঠবাদামের বন!


২.
ট্রেন ফেলে গেছে  মেঘলা স্টেশেন 
চোখের তারায় ঈশানকোণের আলো।
একটি পাহাড়, ছোট্ট নদী, সম্পর্কে সেতু
দূর দূর গ্রাম, সব ঝাপসা হয়ে এলো।


৩.
এ শহর কোনো কালেই প্রেমিক ছিল না,
ল্যাম্পপোস্ট একলা ভিজেছে রাতভোর।
লাল চায়ের চুমুক থেকে মুখ তুললেই দেখি
সুপুরি বাগান জুড়ে টলটলে চিবুক খানি তোর!


৪.
আহত পুরুষটিও কালিদাস স্পর্শে যক্ষ হয়
লেখনীর আগে আগে ঘোলাজল ছুটছে প্রান্তর।
মেঘের শিরস্ত্রান খুলে নেমে পড়ো হে যুদ্ধবাজ
আজ শৈশব ফিরছে ঘরে,গায়ে জরিতে আঁকা জ্বর।


৫.
বাঁকুড়া গামী বাস। যুবক শাল আর সেগুনে
ভীড় করে আছে পথ, পথের মায়াটি আঁকা হোক।
যাও চৌকাঠে আলো নিয়ে দাঁড়াও শ্রাবণী,
ভাঙা সাইকেলে ঘরে ফিরছে, ঝাপসা হওয়া লোক!


৬.
নৌকা নেই। জনহীন ফেরিঘাট। জলবান্ধব 
কোন কালে এসে ঠিকানায় রেখেছে দুই তীর।
দিনরাতের আয়নায় লজ্জিত পরকীয়া এঁকে
ব্রজসুন্দরী টিপ পরে, যমুনা হয় কিশোরী শরীর! 



৭.
অনেক রাতে বৃষ্টি থামে। ভাঙা চোর মেঘে 
শিশু চাঁদ হামাগুড়ি দিয়ে পার হয় ডুলুং এর টিলা।
ব্যালকনিতে রাতজাগা মানুষটি ক্রমেই কালপুরুষ
নদীর বুকে চিতাকাঠ ভাসে। শোক আজ বড্ড একলা।


৮.
অমোঘ শাড়ি ঝুলে আছে। ব্যালকনি থেকে
দূর অনন্তের নীচ। যেখানে শহর পেতেছে কোলাহল। 
বৃষ্টি অক্ষর গুলি তার ওপরে লেখা হয় একে একে
বিদ্যাপতি জানেন, কোথায় কাঁদন,কোথায় নষ্ট কাজল।


৯.
কৃষ্ণভাবে মেঘ ওড়ে ঘননীল নভে
রাধাভাবে খুধা এসে বসে পড়ে পিঁড়িতে একাকি।
জল যন্ত্রণায় ভেসে ওঠে সাজানো বাসর
বলোহে প্রণয় পুরুষ, আর কতো জলকেলি বাকি!





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন