দোঁহা

শ্যামাশিস জানার কবিতা


 

মহাচক্র 

আমার কোনো সৃষ্টি নেই,
তোমারও কোনো জন্ম নেই, প্রিয়,
তবু রক্তের মতো নক্ষত্র ঝরে—
শূন্যতার পিঠে,
অসীম সম্ভাবনার অদৃশ্য বীজের শব্দ—
বাতাসে ভেসে ওঠে,
অশ্রুর ভেতর জন্ম নেয় পতাকা
আর তোমার কণ্ঠে গর্জে ওঠে ভাঙা রুটির দাবী

আমরা একে অপরের ছায়ার ভেতর বসে আছি,
যেন নিরীশ্বরতার বিস্মৃত কোলে—
পদ্মাসনের শান্ত জলে দু’টি অনন্ত প্রতিচ্ছবি
যেখানে ঈশ্বরেরা অনুপস্থিত,
এক রক্ত নদী জেগে আছে—
শ্রমিকের শিরায় কিংবা প্রেমিকার চোখে

আমাদের মধ্যে বেঁচে নেই কোনো নির্ভরতা
শুধু এক শূন্য আলিঙ্গন,
যেখানে দুঃখও ফুলের মতো প্রস্ফুটিত হয়
মাটির ভেতরে বীজ অগ্নিকণার মতো ছড়িয়ে পড়ে

আমরা জেনে গেছি
মহাপ্রলয় এলে সমগ্র ভেঙে পড়বে—
তোমার অনন্ত অন্ধকারে,
যেভাবে নদী ফিরে যায়
নিজের সমুদ্র-মায়ের কাছে,
একদিন ভেঙে যাবে সব সাম্রাজ্য
সমস্ত শাসক ভস্ম হবে,
আমাদের নীরব দেহ থেকে
উঠে আসবে মানুষের ভবিষ্যৎ ধারণা 

এভাবেই আমাদের মিলন ও বিচ্ছেদ,
আলো ও অন্ধকারের এই নিরবচ্ছিন্ন নৃত্য
চিরকাল অভিভূত করে রাখবে পৃথিবীকে
যেন ভালোবাসাই একমাত্র অবিনাশী প্রলয়


আকাশলীনার প্রতি

পৃথিবীর জিভে যেভাবে লেগে থাকে মেঘের স্বাদ
তেমনই এক গোপন আস্বাদ লিখে যাই তোমার চোখে
আমি তাকিয়ে রয়েছি অনন্ত আকাশের গভীরে,
সেখানে এক অলীক মাছ রঙিন বেলুন নিয়ে উড়ে যায়—
অন্ধকার থেকে আলোর দিকে

আকাশলীনা, তোমার চোখে আঁকা কত ভুল
এই নির্জন বনাঞ্চলের পথে ছড়িয়ে আছে—
জোৎস্না মাখানো বিস্মিত বনফুল,
এই পথ গুগল ম্যাপের ভুল রাস্তার মত
যা দেখিয়ে নিয়ে যায় এক অজানা শহরে
যেখানে ভুল বলে কিছু নেই
যেন এক বিকল্প ইতিহাস
তার অনিশ্চিত অ্যালগোরিদমের অভিধানে
একাকী দাঁড়িয়ে আছি নিজের সামনে

এইসব প্রতিচ্ছবি যেন ড্রয়ারের ভেতরে— 
হঠাৎ জেগে ওঠা একটি পুরানো সেলফোন,
যার স্ক্রিনে ভেসে আছে একটা নামহীন কবিতা,
সে শ্বাস নিচ্ছে, আবার ভালোবাসতে চাইছে
তার প্রতিটি শ্বাসে জন্ম নিচ্ছে এক হিরণ্ময় নীরবতা

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন