দোঁহা

সৌম্যাদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা

 

ভয়ার

সকাল বেলা খাচ্ছি গিলে হিসেবমতই ভয়ের ডায়েট

ডাক্তারেতে বলছে ডেকে কমাও এবার গত্তি গায়ের

হাফ গ্লাসময় ফলের জুসে, ভয়ের কুচি কচলে নিও

সুগার ফ্রিতেই বন্দী থাকুক, সাহস চামচ নিন্দনীয়

মাখছি হাতে ভয়ের গরাস, ট্যালট্যালে ডাল কাপের হাফে

শাওয়ার হয়ে ভয়ের ধারা ধরছে ঠেসে প্রবল ঠাপে

দারুণ ভয়ে চোখ নামিয়ে সেঁদিয়ে থাকি অটোর কোণে

দুনিয়া জুড়ে ভয়ের তাড়স দেখছি ঘনায় মুঠোর ফোনে

ভয়ের ভারে অর্ধনত অফিস গামী সফেদ কলার

ভয়ের চোটে ওয়েষ্টে লো হচ্ছে আমার নীচের তলা

বসের গাজন গাচ্ছি ভয়ে মই ও ময়াল কক্ষে

বগবগিয়ে ভয়ের ঢেঁকুর চোঁয়ায় গলায় বক্ষে

ফিরছি রাতে ভয়ের গলি অন্ধকারের ধুকপুকে

আধমরা এই মধ্যজীবন ঘাই মেরে যায় ভয় সুখে

ঘুমের আগে ভয়ের মাজন, প্রমোদ, কমোড-কম্পন

স্বপ্নে এসে আঙ্গুল শানায় ভয়ের জগঝম্প

ভয়ের শরীর জাপটে ধরে পিছল ঢালে শীঘ্রপতন

ভয়ের ঘরে ঘোর কাটে না গন্ধে ভিজে নেশার মত

দৈনন্দিন আদান প্রদান ভয়ের জীবন সঙ্গী

তাই গর্ভে ফিরি আপন করে ভয়ের ভ্রুণ ভঙ্গী

 

অন্ত্যেষ্টি

মুরগির গলা আর পেতে রাখা বঁটির চকচক

এর মধ্যে কতটুকু আর শ্বাস আছে বলো?

কতক্ষণই বা কথাদের অনর্গল প্রগলভ স্রোত

বেঁধে রাখে নৈঃশব্দ্যর দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন?

রাগে ফেটে পড়া হয়না! আপোসের অম্লশূল

জমা রাখা কতগুলো কায়েমী কিস্তির খাতে ?

কত কম খাওয়া গেলে শুধু সংখ্যা হওয়া যায় ?

আর কত লাভে বেচা কেনা দধীচি’ পাঁজর?

অদৃশ্য বুকচাপা আর কতো পাথরকে পিষে

কবিতারা হাঁটি হাঁটি, ক্রমে ক্রমে চড়াই উতরাই ?

এই সব প্রসঙ্গাতীত প্রশ্নের শব বাহী পথে

আমি আজো উড়ো খৈ, শব্দের খুচরো কুড়াই ।



বলা বলি

মুঠো ভর্তি নীরবতাকে বললাম

উড়ে যাও...

তারা উড়ে গেল রোদের পায়রা হয়ে।

বুক পকেটে খিদে কে বললাম

বয়ে যাও...

যেন ধোঁয়ানো ভাতের সাথে আধসিদ্ধ ডিম।

আস্তিনে মৃত্যু কে বললাম

চিরজীবী হও...

তাই পলাশের লাশে উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখে গেল।

মোজায় সুখকে বললাম

উপহার দাও...

চিলেকোঠা ঘরে ধুলো মাখা মেলার বেহালা।

শেষে কলজের শব্দকে বললাম

ছুঁয়ে যাও...যেখানে,

কবিতার জন্মদাগ ইতস্তত লেগে আছে বিচ্ছেদের ধানে ।

 

উষ্ণতার খোঁজে

বাসনার অতৃপ্ত খই

ছুটে যায় অন্তরীক্ষে

ফিরে আসে পার্থিব টানে।

সেই ক্ষোভে পয়সারা

নগদে ছড়িয়ে পড়ে এখানে ওখানে।

ঠিক যেন দেশ ভাঙা যৌথ পরিবার

দুঃখের উদযাপন শেষে

অবধারিত কাঠের আধারে

আংরা হয়ে পঞ্চভূতে

মেদ মাংস ষড়রিপু মিশে যেতে পারে।

নিশ্চিত জেনো

সমুদ্র ছেঁচে শুক্তি নেবার মত

এখনো কারো আগ্রহী হাত

নাভির উষ্ণতা ঘিরে ফুটবে আবার।

 


 



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন