দোঁহা

সুনির্মল বসুর কবিতা

 


যদি সত্যিকারের ভালোবাসা খুঁজে পেতে চাও

কখনো কখনো অন্যের উপর রাগ অভিমান করা মিথ্যে মনে হয়,
পৃথিবীতে কে কবে কার রাগ অভিমানের মূল্য দেয়,
সংসার ক্ষেত্রে ভালোবাসা যখন নির্বাসনে যায়,
তখন রাগ অভিমানের কোনো মূল্য থাকেনা,
পায়ের তলায় মাটি না থাকলে, মানুষ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে,
তার চেয়ে খোলা নীল আকাশের নিচে দাঁড়াও,
আদিগন্ত বিস্তৃত খোলা সবুজ মাঠে এসে দাঁড়াও,
পদ্ম দীঘির পাড়ে খোলা ঝিলের উপর সাদা বকের
ওড়াউড়ি দ্যাখো,
সাদা জ্যোৎস্নায় জামরুল গাছের তলা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে তুমি নিশ্চয়ই ভালোবাসার পৃথিবী খুঁজে পাবে,
দোলনচাঁপার বন পেরিয়ে তরমুজ ক্ষেতের সীমানা ছাড়িয়ে কদম ফুলের বনে হাঁটতে হাঁটতে তুমি ঠিক একদিন ভালবাসার আশ্চর্য ভুবন ফিরে পাবে,
অরণ্য পাখির গানে মুখরিত আকাশ একদিন তোমাকে নিরবচ্ছিন্ন ভালোবাসার প্রদেশে নিয়ে যাবে,
শুধু একটু ধৈর্য থাকা চাই, শুধু একটু ভালোবাসা উজাড় করা চাই,
স্বার্থপর পৃথিবীর যা তোমাকে কখনো ফিরিয়ে দিতে পারেনি,
প্রকৃতি তোমাকে দুহাত ভরে সবকিছু ফিরিয়ে দেবে,
তুমি শুধু একটু অপেক্ষা করে থাকো।


 
কান্নার সিম্ফোনি

ব্যর্থ প্রেম গাথা গুলো গাছের কান্ডে লেখা থাকে, রাত গভীরে কান্নার সিম্ফোনি বাজে, কেউ কি সে কান্না শোনে, ঝিরিঝিরি বাতাস বয়ে যায়, অনাহারী মানুষ নীরবে কাঁদে, রাত ঘুমায়, চাঁদ ঘুমায়, রাতের আকাশ চেয়ে দ্যাখে,

বিনে মাইনে চাকরানীর মতো যে গৃহবধূটি সংসারের জন্য হাড় কালি করে ফেললো, লাঞ্ছনা-গঞ্জনা ছাড়া তার কপালে কিছুই জোটে না,

নদীর ঢেউ সেই নীরব কান্নার কথা জলের অক্ষরে লিখে রাখে,

ট্রেনের চাকার উপর যে হকার নিত্যদিন ফেরী করে,
তার ঘাম রক্ত ও অশ্রুপাতের কথা মনে রাখে একমাত্র সমান্তরাল রেললাইন,

হবুচন্দ্র রাজার গবুচন্দ্র মন্ত্রীর দেশে অপরাধী‌ রাজ পোশাক পরে ঘোরে, ভিখারীর অভিসম্পাত তার গায়ে লাগেনা,

পাকা সড়কে সভ্যতার গাড়ি ছোটে,
ঐতিহাসিক সময়ের দিনপঞ্জী লেখেন,
কবি জীবনের কথকতা লিখে যান,

সময় সব দ্যাখে, সময় সব মনে রাখে,
মানুষের অনন্ত না বলা ব্যথা বোবা কান্নায় গুমরে
মরে,

কাঠবাদাম গাছ শিরীষ বন এই কান্নার শব্দে দুলে ওঠে, হেমন্তের পাতা ঝরার রাতে বাতাসে শিশির ঝরে,

কুয়াশার আস্তরণে মানুষের কান্নার শব্দ শোনা যায়
না,

মানুষ কাঁদে, মানুষ বড় কাঁদে,
রাতের অরণ্য পাখি ডানা ঝাপটায়।












একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন