দোঁহা

দেবব্রত রায়ের কবিতা

ঘরকা মুরগি...

 ঘরকা মুরগি ডাল-বরাবর, কথাটা কি প্রথম ইভ ভেবেছিল নাকি, আদম

নিষিদ্ধ-ফল খাওয়ার পরও, পাখিদের কিচিরমিচির, হরিণ, বাঘ, সিংহের দৌড়াদৌড়ি, হালুম-হুলুম এমনকি, জ্যোৎস্নার জোয়ার-ভাটা পর্যন্ত, জ্বর-মুখের সেই পাউরুটি আর ভেলিগুড়, ভেলিগুড় আর পাউরুটি মার্কা বাংলা-সিনেমার ফুলশয্যার দৃশ্যেই আটকে আছে
 
একটা মুখস্ত-পাঠশালার বই আর কতবার পড়া যায় 

আঠারো-শতকের অ, আ-কে, আজও কি পাঁচফোড়ন দিয়ে সাঁতলানো আলু-চচ্চড়ির মতো করেই লিখতে হবে
                            আর 
একটা চন্দ্রবিন্দুর ফিগার লেটুসপাতাসহ কি মাধুরি অথবা, ক্যাটরিনা হয়ে উঠতে পারে না

পুরানো সিলেবাসের কিচির-মিচির এবং হালুম-হুলুম-রোদ-ছায়ার ম্যাড়ম্যাড়ে ডুয়েলে, একটা মলাট-ছেঁড়া স্বপনকুমার পর্যন্ত নেই    যে সেসব,   সকালে একটু আলু-কাবলি, বিকেলে দোপেঁয়াজা কিংবা, ভেলপুরি হয়ে উঠবে 
                                      এবং  
    আপেলের মতো, আধখাওয়া-চাঁদ আকাশ থেকে নেমে এসে টুকরো-টাকরা হলিউড-বলিউডি নাচা-গানা এবং আহ্ণিক গতির সঙ্গে ঘুরে-বেড়ানো সাইকেলের ক্লান্ত প্যাডেলদের কপালে ঘুমের চুমু দিয়ে যাবে

                            কিন্তু 
সেসব কোথায় কি , পান্তাভাতে ঘি কিংবা, সন্ধ্যাবেলার চামেলিরা পর্যন্ত, স্বপ্নে এক-আধদিনও হারমোনিয়াম বাজাতে বসে না 
                         
এ-রকম থোড়বড়িখাঁড়া-ডাল-ভাতের কমপালশন থেকে শুধুমাত্র, কবিতা লিখব বলেই, অর্থনীতি নিয়ে ভর্তি হয়েছিলাম 

কারণ মানি-ট্রানজাকশন, রিসিপ্‌ট & পেমেন্ট, ব্যালেন্সশিট..., একসময় ঘরকা মুরগি হয়ে উঠলেই, কবিতার খাতা, পক্ষীরাজ ঘোড়া হয়ে ডানা মেলে 

বিভীষণের চৌদ্দপুরুষ-বৃত্তান্ত এত-যে ক্ষীরের মতো গামলা-গামলা পুরু ডাল হয়ে উঠল তবু্ও, মীরজাফর...সিরাজউদৌল্লা একই ট্রেনের সিটে আধা-আধি পাছা রেখে, আজও একটা বিড়িতেই ভাগ করে সুখ-টান দেয়



লাটাইয়ের মতো বুক

একটা মশলা-মুড়ির ঠোঙা ঘিরে উড়ে বেড়ানো-জলতেষ্টা আর সাত-দিনের ঘামে ভেজা-রুমালের সামনে 
একবাটি পায়েস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সকাল-বিকেল কমপ্লান খাওয়া নিউটাউন 

যদিও পায়েস এবং জলতেষ্টার নাড়ি টিপলেই বোঝা যায়, বাটির ওপাশে রক্ত-জল মোছা রুমালটা বুদ্ধ নয় এবং দেখ আমি বাড়ছি মাম্মি, ছায়ার টাওয়ারগুলোও সুজাতা 

                           কারণ 
পায়েসের বাটিতে বক-পাঁতির বদলে ডুবসাঁতার কাটছে পানকৌড়ি, জলপিপি রঙের অন্ধকার   
                                এবং      
               ছায়াগুলোও, খুব স্যাঁতসেঁতে 
                আর 
একটা কুম্ভকর্ণ-হাঁয়ে গিলে ফেলছে ঘাসফড়িং-প্রজাপতি রঙের ছেলেবেলা 
বাটির কানাশিতে, যখন যেমন, তখন তেমন-হাওয়ায়, কোমর দোলাচ্ছে টুকলি-জন্মের লোটা, কম্বল, চিমটেরা

আকাশ, মেঘেদের হাওয়ায় আঁচল ওড়ানো ঘুড়ির ঘর-গেরোস্থালিতে, লাটাইয়ের মতো বুক খুব কম পুরুষেরই দেখেছি  

ফুচকার নাভিতে হাত রাখলে, ঠোঁটের চুম্বন-রেখায় যারা লক্ষ্মণখড়ির দাগ টানে, তারা তাজমহলের জ্যোৎস্নায় শুয়েও, মেঘ, তারাদের শরীরের গন্ধের বদলে,  সাতজন্মের ভেপুন্দা-গন্ধই,   
                  চিবোতে ভালোবাসে

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন