দোঁহা

কৌশিক সেনের কবিতা

জাদুকরী 

 ক্ষমা করো, মুষ্টিক্ষেত জেগে ওঠে সুষুম্নার আঘাতে।যা ছিল ক্ষয়িষ্ণু সুখ, মেলে ধরি, হেলে ধরি নিয়তির অমোঘ প্রভাতে। কি নেই বলো, এই বিখন্ড জীবনে! পুষ্টিকর খাদ্য, সুধা, নারীসুখ অপর্যাপ্ত তো ছিলনা কখনও! তবে কেন এই বিষাদের কোমলগান্ধার!
 

নেমে আসি। এই শ্বাপদসঙ্কুল অরণ্য, পাখীদের
কলকাকলিতে। পুষ্পচয়নে অতিবাহিত করি রেশমজরির সকাল। মালিনীর পা থেকে তুলে ফেলি বিষাক্ত কাঁটা। শুশ্রূষায় নিরাময় করি যন্ত্রণার।  বরদায়িনি প্রতিমার দক্ষিণহস্ত থেকে বয়ে নিয়ে আসি কাঙ্ক্ষিত সমৃদ্ধির আশ্বাস।

 তুলে ধরো তবে, তোমার অলৌকিক জাদুদন্ডটি। শেষহোক তবে, এই আদিম উঞ্ঝবৃত্তির জীবন। অমোঘ কুণ্ডলিনী জেগে উঠুক সামান্য অছিলা। মন্ত্রবলে কুয়াশা কেটে যাক এই গভীর গিরিখাতে। রাতের শাসন থেকে মুক্ত হোক সূর্যালোক। এসো, মুঠো খুলে ধরি এই নিমীলিত ঝর্ণার জলে!




ধূমাবতী

নিঃসঙ্গ মেঘের ভেতর তোমার ধুম্রবাথান। রাঢ় উপত্যকার মাটি লেগে থাকে খড়ি ওঠা গায়ে, মাইয়ে, জাঙে। রাতের বেলা মশা কামড়ালে ধুনো জ্বেলে দিই খাটিয়ার পায়ার কাছে।  খরিশের মত আকাশে পেঁচিয়ে ওঠে ধোঁয়া। আমিও জেগে উঠি পোষ না মানা রিরংসায়!

 মেঘে মেঘে কেটে গেছে কবুতর দুপুর। কোকিল কেঁদে ফেরে আকাশে। শরীর বাঘ মানতে চায়না আর।  ভাদ্দরের কুত্তা যেন!
মুথা ঘাস ছিঁড়ে চিবিয়ে নিই খানিক। ওধারে কিছু নেই জানি, তবু ফিরে চাওয়া। বুকের ছাতিতে ফসল ফলবে না জানি, তবুও হৃদয়সিদ্ধ এই ফসলের অধিকার!

 শাওন কেটে গেছে। গাঙ শালিখের ডাকে ডাকে ভরে ওঠে ময়ূরাক্ষীর চর। প্লাবন আসেনা এখানে। মাঝে মাঝে দুলে ওঠে আশশ্যাওড়ার বন। পেটভর্তি মানুষ নিয়ে দুলে দুলে চলে যায় দূরপাল্লার বাসটি। নিভৃত চরের ধুলোধোঁয়ায় আকণ্ঠ গঞ্জিকাসেবন, চিরায়ত বাসরযাপন।
 

কুয়াশা নয়। এ বোধহয় শব্দভেদী বাণের দেশ। কুটিকুটি কাগজের টুকরো লেগে থাকে লরির খালাসীর অঙ্গে অঙ্গে। দূর থেকে ডাক দিয়ে যায় লবঙ্গরঙের পসারিণী। ধুনোর গন্ধে রাত নামে অশ্বত্থতলায়। ধোঁয়ার সাথে কথোপকথন সাঙ্গ হলে পিশাচসিদ্ধা নদীটিকে উল্লম্ব খাড়া করে রাখি নদীর শিয়রে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন