অঞ্জলি
ঘরের ভিতর একলা পড়ে থাকি,
বাইরে তখন বাদলরাতে একটি দুটি পাখি
বিষম ঝড়ে সমস্বরে গানের দুটি কলি
গাইছে কেবল এবং তাদের দু পায়ে অঞ্জলি
কেয়াপাতার মেঘের থেকে পড়ে।
ঘরের ভিতর ঘরে
ঠিকরে আসে বজ্রমাতাল অবাঞ্ছিত আলো
এবং মাথায় নৃত্য করে পুরাকালের ঝালর।
আমিই তখন আষাঢ় মাসের কবি,
আমিই তখন বিরহাতুর পরবাসের কবি
এই প্রবাসে বৃষ্টিব্যাকুল রাতে,
ছিন্নহৃদয় বিপর্যয়ের একাকী তল্লাটে।
এদিক ওদিক গাথার নোলক যেদিকে চোখ রাখি,
বাইরে তখন একটি দুটি পাখি
গাইছে নিবিড় বাদলপ্রিয় অরণ্যানী গান,
তাদের গায়ে অঝোর ধারাস্নান,
তাদের ঠোঁটে গানের দুটি কলি,
বরুণ, তাদের পায়েই দিলাম অমূল্য অঞ্জলি।
সম্ভবামি
আদিম অভিশাপ বারুদমাখা দিনে
অসুখী পৃথিবীর বিনাশ চায়।
বিষম আঁধারের দুহাতে পরিপাটি
মানুষ খেলা করে এবং আজ
যখন ধূসরতা রঙিন পালকের
অঙ্গে বাসা বাঁধে। সুউচ্চ
গোপন পর্বত শতধা করে ভাসে
উপত্যকা জুড়ে আতঙ্কের
বাষ্প। তবু কেউ বলার মত নেই।
ক্রূরতা কড়া নাড়ে। শুরুর শেষ!
মাটির দানা ওড়ে? নাকি এ বারুদের
তীব্র নেশাতুর প্রলয় নাচ!
তখনই ঝলকাবে বিজলী উন্মাদ!
খরস্রোতা এক লাভার স্রোত
পাহাড়ি বুক চিরে কপিধ্বজ হয়ে
আসবে ভুঁয়ে নেমে অরোধ্য।
দোয়াব ভেসে যাবে শাণিত দাবানলে,
পোড়াবে পৃথিবীর শপ্ত রূপ।
পোড়াবে শতকের তিমির ইতিহাস
এবং যারা ছিল অলক্ষ্যে।
এ মহাচক্রের অন্ত নেই কোনো
যখনই ধমনীর প্রাচীন বিষ
উঠবে জেগে হয়ে কালীয় নাগ। আদি
বসুন্ধরা হবে শ্রী কৃষ্ণের।