দোঁহা

দেউলিয়া দেউল



অচিন্ত্য ব্যানার্জী 


মন, মন্দির খোঁজে আরাধ্য ঈশ্বরের সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য। তাই, ভক্তি আর ভক্তের ভিড় সর্বদাই লেগে থাকে মন্দির চত্বর জুড়ে আর লক্ষ লক্ষ ভক্তের লক্ষ্য, শুধুই মন্দিরে গর্ভগৃহ।
তবে মন্দিরের ভিতরের 'ভগবান' বা 'খোদা' নয় , বরং বাইরের 'খোদাই' আমায় বরাবর টানে গ্রাম বাংলার নানা মন্দির চত্বরে। যত্নহীন অমূল্য সব রত্ন হাতছানি দেয় বারবার।

আসলে গ্রামবাংলার আনাচে কানাচে এমন বহু মন্দির-দেউল আছে যারা আজ দেউলিয়া। অন্তর্জলী যাত্রার জরাজীর্ণ 'ঘাটের মরার' মতোই যারা শুধু অপেক্ষা করছে মৃত্যুর। গা ভর্তি অলংকারের অহংকার মিশেছে মাটিতে। বিষ্ণুপুরের মতো বিশালত্ব বা ব্যাপ্তি না থাকলেও, আজও গ্রাম বাংলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা এই সব মন্দির অবাক করে দেয়। স্তব্ধ করে দেয় কোনো এক পথের বাঁকে বা মাঠের ধারে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে থেকে।

দেবতা না থাকলে দেবালয় যে গুরুত্বহীন, এই টুকু প্রমাণের দায় নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই মন্দির গুলোর সংরক্ষণের কোনো দায় নেয়না সরকার...দরকার বোঝেনি গ্রামবাসীও। তাই কোথাও এই সব মন্দির আজ ব্যবহার হয় গোয়ালঘর হিসেবে। কোথাও বা গুদাম হিসেবে পাট অথবা তিল রাখার। তিল তিল করে ভেঙে পড়া এই মন্দির গুলোকে তুলে দাঁড় করানোর কোনো উপায় না পেয়ে তুলে রাখার চেষ্টা করলাম ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য, ক্যামেরা বন্দি করে।

বাংলার চালচুলহীন দোচালা, চারচালা, আটচালা হয়তো একদিন অ্যাকচুয়ালি না পেলেও, এইভাবেই ভার্চুয়ালি পাবে আগামী প্রজন্ম।
 
 
 
 চাঁপাডাঙ্গা,হুগলী
(স্থাপত্য ~ চারচালা )
প্রাচীন মানুষের মগজ থেকে বেরিয়ে আসা ভাস্কর্য...আর, আধুনিক মানুষের মগজ থেকে বেরিয়ে আসা গোবর দিয়ে সাজানো এক দেওয়াল...ঐতিহ্য আর আধুনিকতার আশ্চর্য মেলবন্ধন।


 
দশঘরার বিশ্বাস বাড়ির অবিশ্বাস্য
দেওয়াল...টেরাকোটা, পঞ্চরত্ন গোপীনাথ মন্দির , দশঘরা, হুগলী।


 

দশঘরার বিশ্বাস বাড়ি, টেরাকোটা, পঞ্চরত্ন গোপীনাথ মন্দির, দশঘরা, হুগলী
 

 
আঁটপুরের বিখ্যাত রাধাগোবিন্দ জিউ মন্দিরের একটা ছোট্ট টুকরো। যুদ্ধ থেকে অশ্বারোহন , কামান থেকে বন্দুক। হিন্দু পুরান...মুসলমান বাদশা...ইউরোপিয় কি নেই! এই একটুকরো ফলকে।
 


 
দেউলিয়া দেউল...স্থাপত্য : আটচালা। জয়নগর, তারকেশ্বর, হুগলী।



 
ছয় শিবমন্দিরের তিনটি। স্থাপত্য : আটচালা। রাধানগর, খানাকুল, হুগলী।



সাত দেউলিয়ার একটি...দেবালয়টি নাগর রীতির শিখর মন্দির। বাংলার নিজস্ব চালা, রত্ন ও দালান রীতির বাইরে এই শিখর (বা রেখ) রীতি। আসে ওড়িশা থেকে। তবে নাম সাত দেউলিয়া হলেও দেউল অবশ্য একটিই। বাকি 'দেউলিয়া' হয়ে গেছে অনেক আগেই। সাতদেউলিয়া গ্রামটি বর্তমানে পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারি পঞ্চায়েত সমিতির নিমো-২ গ্রামপঞ্চায়েতের অধীনে অবস্থিত।





এদের প্রেম ভেঙে পড়েনি আজও...একদিন শুধু, ওদের হিংসে টুকু ভেঙে পড়ল, এদের ওপর..




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন