দোঁহা

প্রদীপ ঘোষের কবিতা

 


আক্ষেপ
 

একটি কাঁকর দানার উপস্থিতি ও অসহ্য। সকলের এমনই
আহ্লাদী নজর, অহো ভাগ্য। এই ধরো না, শীতের নরম
রোদে মা ঠাম্মি দিদুন, নিদেন দাইমার হাতে বেবি অলিভ
অয়েলে অপত্যের মাসাজের মতো। পরে তে, দয়িতার
স্তনে ব্যথা না লাগে এমই আলতো আঙুলে আশ্লেষের
ছোঁয়ায় পূর্ণ অবয়ব। আর তো আর, আগুনের প্রলেপে
ইস্পাতের কাঠিন্য! তাও তখন উপভোগ্য। এটা ভেবে,
একি কম কথা? শুরুতেই যদি এমন, পরিণত জীবন না
জানি আরও কতো অনুপম, সুন্দর। সব, সবেতে-ই,
কোমলতা হারিয়ে এমনকি রঙ পাল্টে যাওয়া, সব অম্লানে
মেনে নিয়েছি। যেদিন তুমি ঠোঁট ছুঁয়ে দিলে? সার্থক
জনম মাগো। অঙ্গরাগে নিযুত বিজুরি ! থিরথির কাঁপন,
শিরশির সেকী শিহরণ ! তনুমনে স্যাক্সোফোন, বিউগল
বেজে উঠেছিল অনির্বচনীয় আনন্দী শীৎকারে।

শেষতক ! প্রয়োজন শেষে অস্তিত্বটাই মিটিয়ে দিতে
মাটিতে ফেলে অ্যডিডাস, বারবেরি, ফাইলা-র, স্টিলেটো
হিল কিংবা শু'তে পিষে দিতে চাইলে। একদা ভালোবাসার
জনেরা আমার। ইচ্ছায় অনিচ্ছায় পথচলতি ছোট বড়
আর যারা! সকলে, সক্কলে। মাটির-ই তো! তবু মাটিও
আমায় আপন করে নেবে না আর। 

শতধায় নির্বান্ধব জীবনে কাকে কাকে দোষ দেব বলো তো আমি -
                      মাটির চায়ের ভাঁড়?

 

 ভ্রমে ভ্রমর

ঘুম ঘুম চাঁদ, নিশি ভোর ভোর...
বেনেবউ ডাক দিয়ে যায়, ইস্টিকুটুম ইস্টিকুটুম
হায়! ও মেয়ে এখনও তন্দ্রা ভাঙ্গেনি তোর?
দেখ নিকষিত হেম, বিলুপ্তির পথে
লক্ষ তারার অতন্দ্র প্রহরা
জানিস না বুঝি!
ব্রহ্মমুহূর্তে কড়া নাড়ে কারা?

দুয়ার খোল অভিমানীনি,
অভিমান বুঝি তাঁরও হয়নি
ওলো ও সর্বনাশী! তুই বেহুলা না অহল্যা,
বিরহানলে বুঝি সে ও পোড়েনি?

কত মুখ হারিয়ে যায়,
কত মায়াফুল ঝরে
আয়ুষ্কালে দেখেছি উন্মুখ স্বপ্নরা কি নিদারুণ,
কতই না বিরহী মুখ ফিরে ফিরে বিলীন
দৃষ্টির অগোচরে।

নির্বাপণে আগুনের হাহাকার,
নিভু নিভু, ছাই ছাই রঙ
এ জীবন বুঝতে দিলো কোথায়,
ঈশ্বরী হে ! তোমার ভড়ং ?

জীবনে নিরাসক্ত,
তবুও মধুকর উজানে ফুলের খেয়া বায়
ভ্রমে ভ্রমরের ইতিউতি খোঁজ, সেই পারিজাত এর -
               জানো সন্ধান কোথায় ?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন