দোঁহা

অতিমারী, ‘গর্ভধারিণী’ – উদযাপন!


অমর্ত্য বন্দ্যোপাধ্যায়

প্রথম শোয়ের পর বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব শুভাশিস খামারু সহাস্যে লিখে পাঠালেন, “প্রথম শো বলে বিশ্বাসই হচ্ছে না, নির্ঘাৎ দশ থেকে পনেরো নম্বর! প্রথম শো’তেই এমন নিখুঁত অভিনয় – এতখানি বোঝাপড়া! অবিশ্বাস্য।” এতটুকুও অত্যুক্তি নয়। প্রায় দশক পেরনো নাটক দেখার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, বেশ কিছু নাটক যেমন দেখেছি, তেমনই বেশ কিছু পরিচিত-অপরিচিত নাটকের প্রথম অভিনয় দেখারও সুযোগ ঘটেছে। আদৌ কখনও কোনও নাটকের একেবারে প্রথম অভিনয়েই এমন সুনিপুণ, এতখানি সাজানো একটি উপস্থাপনা দেখেছি বলে তো মনে পড়ছে না। সাধুবাদের চেয়েও কিছু বেশি প্রাপ্য ‘গর্ভধারিণী’র। সেজন্যই কাগজকলমের শরণাপন্ন হয়েছি।
 
অতিমারি-পরবর্তীতে নাটক-সিনেমার জগতে দর্শক ফিরবে কিনা, সেই নিয়ে কমবেশি সকলেই চিন্তায় ছিলেন। সিনেমার চেয়ে নাটকের ক্ষেত্রে ভাবনার পরিমাণটাও ছিল বেশি, কারণ সিনেমার তবুও বা ওটিটি ইত্যাদি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। নাটকের যে পরিসর, তাকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে নিয়ে যাওয়াটা কার্যত অসম্ভব। ঈশ্বর করুন, কোনোদিনও যেন এমনটা না দেখতে হয়। সেই পরিস্থিতিতে বিগত কয়েক মাসে, কয়েক সপ্তাহে, কলকাতার নাট্যমোদী দর্শক, নাট্য-নির্দেশক, প্রযোজক, কলাকুশলীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ অনেকটাই কমাতে সক্ষম হয়েছে। নাট্যোৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে একাধিক দলের, একাডেমি ও অন্যান্য মঞ্চে পূর্ণ প্রেক্ষাগৃহে দর্শকদের আগমনও শুরু হয়েছে। এমনই এক পরিস্থিতিতে গত ১২ই জুন, রবিবাসরীয় দুপুরে পৌঁছিয়ে গিয়েছিলাম একাডেমি প্রাঙ্গণে, ‘গড়িয়া কৃষ্টি’র প্রযোজনায় সমরেশ মজুমদারের উপন্যাস ‘গর্ভধারিণী’র প্রথম মঞ্চায়নের সাক্ষী থাকতে। উপন্যাস, এবং বিশেষত ‘গর্ভধারিণী’র মতো একটি বিশালায়তন উপন্যাসের নাট্যরূপ কিভাবে সম্ভব এই নিয়ে গড়-দর্শককুলের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকতেই পারে, থাকাটা বোধহয় অস্বাভাবিকও নয়; কিন্তু ইতিপূর্বে এই বিষয়ে ‘গড়িয়া কৃষ্টি’র মুনশিয়ানা দেখেছি বলেই এক্ষেত্রে আমার অন্তত ভয়ের চাইতেও আগ্রহ এবং উৎসাহের ভাগটিই বেশি করে পড়েছিল। ইতিপূর্বে ‘তুঙ্গভদ্রার তীরে’, ‘মাধুকরী’ ও ‘কালপুরুষ’এর মতো তিনটি সার্থক ও সুবৃহৎ উপন্যাসের মঞ্চায়ন দিয়ে যে ‘কৃষ্টি’ নাট্যদলের নাট্যমঞ্চে আগমন, উপন্যাসের নাট্যরূপ তৈরীর ক্ষেত্রে তারা যে রীতিমতো একটি ধারাবাহিকতা ও আত্মবিশ্বাসের পরিচয় দিয়ে এসেছে, তা বলাই বাহুল্য। ধারে-ভারে-বয়সে ‘কৃষ্টি’ এখনও ‘সিনিয়র’ না হয়ে উঠলেও, ‘প্রতিশ্রুতিবান’এর বদলে তাদেরকে এখন থেকেই নিঃসন্দেহে ‘প্রতিভাবান’ বলা চলে, এবং সে বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতেও তারা সম্পূর্ণ ভাবে প্রস্তুত বলেই বিশ্বাস রাখতে চাই।
 


‘কৃষ্টি’র পূর্ববর্তী দুটি প্রযোজনা, ‘মাধুকরী’ ও ‘কালপুরুষ’ মঞ্চে দেখবার সুযোগ হয়েছে। ‘তুঙ্গভদ্রার তীরে’ দেখেছি ডিডি বাংলার টেলি-নাটকের অনুষ্ঠানে। একটি নাট্যদলের যে অভিনয়গত, নির্দেশনাগত এবং কৌশল-নৈপুণ্য-ও-মৌলিকতাগত যে বিবর্তন, এই ‘কৃষ্টি’ দলের ক্ষেত্রে তাকে খুব কাছ থেকে সময়ানুসারে দেখার সুযোগ হয়েছে। নিঃসংকোচে বলতে পারি এই দল প্রতিটি পরবর্তী নাটকে নিজেদেরকে আরও খানিক উপরে তুলে নিয়ে গিয়েছে, আর সেই দিক থেকেই ‘গর্ভধারিণী’ এখনও অবধি এই দলের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রযোজনা। নির্দেশক সিতাংশু খাটুয়া (পেশাগত ক্ষেত্রে যিনি গুরুগম্ভীর(?) অধ্যাপকও বটে), তাঁর আদিগন্ত খোলা মনের খোলসটুকুর ভিতরে, যে কোনও উপন্যাসের এক সার্থক নাট্যায়ন তৈরীর যে অসাধারণ ক্ষমতাকে সযত্নে লুকিয়ে রাখেন, না দেখলে পরে তা বিশ্বাস হওয়ার নয়। ‘মাধুকরী’র কিনা নাট্যমঞ্চে উপস্থাপন! ‘গর্ভধারিণী’রও কিনা নাট্যরূপ! তাও আবার এমন একেকটি মেদহীন, সুচারু প্রযোজনার মাধ্যমে। ‘মাধুকরী’ দেখতে এসে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছিলেন ঔপন্যাসিক বুদ্ধদেব গুহ স্বয়ং। ‘গর্ভধারিণী’র মঞ্চে কলাকুশলীদের ও নির্দেশক সিতাংশু বাবুকে অকুন্ঠ সাধুবাদে ভরিয়ে দিয়ে গিয়েছেন পরিচালক গৌতম ঘোষ। কিভাবে সম্ভব হলো এসব?
 
‘গর্ভধারিণী’র প্রথম স্ক্রিপ্ট পড়া হয়েছিল ডিসেম্বরে, ২০২১এর শেষে। মে দিবসেই নাটকটিকে মঞ্চে আনার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু নানা ব্যক্তিগত কারণে, ব্যক্তিগত শোক-আঘাত, কোরোনা’র তৃতীয় ঢেউ, এই সবকিছুকে মিলিয়ে এই নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে অবশেষে গত ১২ই জুন, একাডেমি অব ফাইন আর্টস মঞ্চে। কলাকুশলীদের অভিনয় এবং নিয়মিত তাদের নাটককে নিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছানোর যে অদম্য ইচ্ছে ও প্রয়াস, তারই মাধ্যমে প্রথম শো’তেই পূর্ণ প্রেক্ষাগৃহে মঞ্চস্থ হয়েছে ‘গর্ভধারিণী’, আনুমানিক ২ ঘন্টা ১৫ মিনিট সময়ের এক বিস্ময়কর উপস্থাপন। নিজস্ব মুনশিয়ানাতে নাটকের প্রথমেই ছোট ছোট কয়েকটি দৃশ্যের মাধ্যমে নির্দেশক পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন উপন্যাসের মূল চার চরিত্র, আনন্দ, সুদীপ, জয়িতা ও কল্যাণের সঙ্গে। এরপরেই নাটক পাড়ি দিয়েছে নেপাল-সীমান্তে। একাডেমির কাঠের মঞ্চে নেমে এসেছে আস্ত এক কাঞ্চনজঙ্ঘার প্রোজেকশন!
 


 এখানেই এবার আলাদা করে দু’এক কথা বলতে চাইব। এমন বৃহদাকৃতি এক উপন্যাসের সার্থক নাট্যায়ন, এই দিক থেকে তো এই নাটক বিশেষ উল্লেখযোগ্য বটেই; কিন্তু এছাড়াও আরেকটি বিশেষ বিষয়ে এই নাটক সাধুবাদের চেয়েও বেশি কিছুর দাবি রাখে – তা হলো নাট্যমঞ্চে প্রযুক্তির ব্যবহার। স্বীকার করতে সংকোচ নেই, নাট্যমঞ্চে প্রযুক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমি নিজেও ব্যক্তিগত ভাবে একটু ছুঁৎমার্গের দৃষ্টি নিয়ে চলি। হয়তো বা নাট্যমঞ্চে আবার কেন বা প্রযুক্তির অনুপ্রবেশ ঘটবে, এই নিয়ে বেশ একটু ব্যক্তিগত মানসিক বিরোধ রয়েছে আমার। তার কারণও হয়তো, বিগত বেশ কিছু বছরের নাট্যদর্শনের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি – মঞ্চে প্রযুক্তির অতিরিক্ত ও অপরিকল্পিত ব্যবহারের ক্ষেত্রে কলকাতার বেশ কিছু সেরা নাট্যদল এমন (নি)দারুণ একেকটি উদাহরণ রেখে গিয়েছে, যে ‘তাত্ত্বিক পরিসরে মানসিক বিরোধ’ ক্রমশ ‘প্রযুক্তি’ শব্দটি শুনলে পরেই ‘ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে কার্যত এক আতঙ্কে’ পর্যবসিত হতে পেরেছিল। ‘পেরেছিল’, এমনটাই বলা উচিত। কারণ প্রক্ষেপণ ও প্রযুক্তির ব্যবহারে একেবারেই আলাদা উচ্চতায় নিজেদেরকে নিয়ে যেতে পেরেছে ‘গর্ভধারিণী’। কৃতিত্ব প্রাপ্য অভিজ্ঞান খাটুয়ার, সিতাংশু খাটুয়ার কনিষ্ঠ পুত্র, বর্তমানে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেক্যানিক্যাল এঞ্জিনিয়রিংয়ের ছাত্র এবং একই সঙ্গে নাট্যকর্মী ও অভিনেতা। ‘গর্ভধারিণী’র আশ্চর্য নিখুঁত প্রজেকশনের ব্যবহার, আলো-ছায়ার কারিকুরিতে নেপাল-সীমান্তের কাঞ্চনজঙ্ঘার একেকটি দৃশ্যপট অনায়াসে মঞ্চে তুলে আনা, বিশেষ করে সূর্যাস্ত ও গোধূলির একেকটি মুহূর্ত, এক কথায় স্তব্ধ করে দেয়। কল্যাণের মৃত্যুদৃশ্যে প্রজেকশনের ব্যবহার গায়ে কাঁটা ধরাবে, নিশ্চিত করে তা লিখতে পারি। এ ছিল এক মুগ্ধতার সফর।
 


 পরবর্তীতে আসব সঙ্গীতের বিষয়ে। বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ প্রবুদ্ধ রাহার দ্বিতীয় প্রজন্ম প্রত্যয়ের হাতেই ছিল ‘গর্ভধারিণী’র সঙ্গীত নির্মাণের দায়িত্ব। পড়াশোনার কারণে বিদেশে থাকতে হয়, তারই উপরে আবার অতিমারির দাপট। ‘গর্ভধারিণী’র সঙ্গীতের প্রায় পুরোটাই তাই নির্মিত হয়েছে সুদূর আয়ারল্যাণ্ডের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে, এবং আশ্চর্য দক্ষতায় প্রত্যয় সুর বুনতে গিয়ে তাতে মিশিয়েছে ভারতীয়, নেপালী এমনকি আইরিশ গানের মূর্চ্ছনাও। আন্তর্জাতিক তো হয়েইছে, কিন্তু তার চেয়েও বেশি করে যা প্রয়োজন ছিল – নাটকের আবহটিকেই বিশেষ করে নাটকেরই একটি আলাদা চরিত্র করে তোলা, সেই কাজেও প্রত্যয় ২০০% সক্ষম বলে মনে করি। নেপালী ভাষাতে গান যেমন এসেছে, তেমনই এসেছে দৃশ্যকল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে মরমিয়া একেকটি সুর। কেবল দৃশ্য নয়, শ্রাব্যের দিক থেকেও ‘গর্ভধারিণী’ একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে।
 
তিনটি যে বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাইলাম, উপন্যাসের নাট্যায়ন, প্রযুক্তির ব্যবহার ও সঙ্গীত – স্রেফ এই তিনটি বিষয়েই ‘গর্ভধারিণী’ যে নৈপুণ্য দেখিয়েছে, তার মাধ্যমেই যে তারা একটি অসাধারণ উপস্থাপনা কলকাতার দর্শককুলকে উপহার দিয়ে ফেলেছে সে বোধহয় আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু ‘গর্ভধারিণী’র কৃতিত্ব যে কেবল এখানেই ফুরানোর নয়। অভিনয়ের দিক থেকে চার মূল চরিত্রে অভিনয় করেছে যথাক্রমে আর্য দেব ওরফে ঋক (সুদীপ), সপ্তর্ষি রায় (কল্যাণ), অভিজ্ঞান খাটুয়া (আনন্দ) ও গান্ধর্বী খাটুয়া (জয়িতা)। এছাড়াও অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন যথাক্রমে আম্রপালি মিত্র, মিঠু চক্রবর্তী, কাজল শম্ভু, প্রদীপ দাশগুপ্ত, ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী, সঞ্জীব সিংহ, সুব্রত বর্মন, গোপাল বসাক, শান্তা রায়চৌধুরী, অর্ণব বসু, অদ্বৈতা নারায়ণ প্রমুখ। ছোট্ট একটি চরিত্রে অল্প সময়ের জন্য হলেও মঞ্চে এসেছেন স্বয়ং সিতাংশু খাটুয়া। আলাদা করে এঁদের অভিনয় বিশ্লেষণে যাওয়ার আগেও যেটা বলা প্রয়োজন, এত বড় একটি প্রযোজনার প্রথম অভিনয়ে, এমন অনসম্বল এতজন চরিত্রের মধ্যে, এমন নিখুঁত বোঝাপড়া সত্যিই অকল্পনীয়। এরই মধ্যে মিঠু চক্রবর্তী, ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী, সঞ্জীব সিংহ, সুব্রত বর্মন প্রমুখেরা নাটকের প্রয়োজনে একাধিক চরিত্রে অভিনয় করেছেন – কিন্তু ক্লান্তি দূরে থাক, কোথাও এতটুকুও হোঁচটের অবকাশ নেই কোথাও। আশ্চর্য সাবলীলতায় নাটক এগিয়েছে যেন বা তেল চকচকে নতুন রোলস রয়েসের আভিজাত্যে। কোথাও এতটুকুও ভাঁজ নেই, উচ্চকিত অভিনয় নেই, দুর্বলতা নেই। শুভাশিস খামারু’র কথার সূত্র ধরেই সন্দেহ প্রকাশ করতে ইচ্ছে হয়, “আদৌ এটা প্রথম অভিনয় ছিল তো!”
 
আর্য দেব, সপ্তর্ষি, গান্ধর্বী ও অভিজ্ঞান, চারজনেই অভিজ্ঞ, বয়সের দিক থেকে কমবেশি অভিজ্ঞতা হলেও, প্রত্যেকেই নিজেকে ছাপিয়ে যেতে চেষ্টা করেছে। সুদীপ হিসেবে আর্য, জয়িতা হিসেবে গান্ধর্বী, নিজেদের অভিনয়কে উপস্থাপন করেছে দুর্দান্ত সাবলীলতায়। আলাদা করে এই চারজনের বিষয়ে বলতে গেলে তা কেবল কথা বা উচ্ছ্বাসেরই পুনরাবৃত্তি করা হবে। প্রত্যেকেই প্রত্যেক চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলেছে নিখুঁত বাস্তবতায়। সুদীপের কমেডি অভিনয়, আনন্দের গাম্ভীর্য, নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিসর থেকে উঠে আসা কল্যাণের আত্মদ্বন্দ্ব ও তারই ভিতরে ভিতরে এক অদম্য সাহসের বিস্তার, প্রতিটি ক্ষেত্রই যেন বা উঠে এসেছে একেবারে সমরেশ মজুমদারে উপন্যাসের পাতা থেকেই। ‘গর্ভধারিণী’ জয়িতা ওরফে দ্রিমিদ, (এর আগে যে অভিনয় করেছে ‘মাধুকরী’র কুর্চি চরিত্রে অথবা ‘কালপুরুষ’এর ঊর্মিমালায়) আবারও প্রমাণ রেখেছে তার দক্ষতার। মঞ্চ জুড়ে এই চারজনের অভিনয় ও বোঝাপড়ার জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। পার্শ্বচরিত্রে আম্রপালি মিত্র, মিঠু, কাজল শম্ভু (‘মাধুকরী’তে তাকে দেখেছিলাম ঠুঠা বাইগ্যার চরিত্রে) এঁদেরও প্রত্যেকের অভিনয় উল্লেখের দাবি রাখে। নেপালী আঞ্চলিক ভাষায় সংলাপ রচনারও অনেকটা ভার নিয়েছিলেন মিঠু চক্রবর্তী, যেমনটা শোয়ের শেষে জানালেন স্বয়ং নির্দেশক, কোরিওগ্রাফি বা অঙ্গ-সঞ্চালনার বিষয়ে কাজল শম্ভুর অবদান, এই সমস্ত কিছুকে নিয়েই ‘গর্ভধারিণী’র উদযাপন! এছাড়াও সময়ে সময়ে প্রচারের কাজে কলম ধরে সহায়তা করেছেন প্রলয় চক্রবর্তী, সঙ্গীত প্রক্ষেপণে ছিলেন কল্যাণ সরকার, আলোকসজ্জাতে সৌমেন চক্রবর্তী, রূপসজ্জা মঃ আলি, পোশাক পরিকল্পনা গান্ধর্বী খাটুয়া, মঞ্চ নির্মাণে নীল কৌশিক; এই নাটক আদতে চূড়ান্ত ভাবে সফল এক ‘টিমগেম’এরই সার্থক, বাস্তব উদাহরণ।

 


এই উচ্ছাস থেকেই লিখতে চেয়েছিলাম ...
 
প্রথমত আমাদের প্রত্যেকের যৌবনকালের রক্ত গরম করে দেওয়া উপন্যাস ‘গর্ভধারিণী’র এমন এক মঞ্চায়ন, থাক না সেখানে চশমা-আঁটা কড়া ক্রিটিকের বাচনভঙ্গি, আমরা বরং উদযাপন করি নাট্যমঞ্চে উঠে আসা যৌথখামারের উদযাপন! হয়তো বা এভাবেই একদিন সম্ভব হবে তারই বাস্তব রূপ! সেই থেকেই তো নাটক নিয়ে মাতামাতির সূত্রপাত। দ্বিতীয়ত অতিমারি-পরবর্তীতে বিভিন্ন পরিসরে ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত নানা চাপ, চিন্তা, মনোকষ্ট, মানসিক বাধা – এই সবকিছুকে অতিক্রম করেও বাংলা নাটক ফিরে এসেছে, সে ফিরে আসতে চাইছে এমন একেকটি উপস্থাপনার মাধ্যমেই। প্রত্যেক নির্দেশক, প্রত্যেক অভিনেতা, প্রত্যেক কৌশলী জান লড়িয়ে দিচ্ছেন ‘এভাবেও ফিরে আসা যায়’ এই শ্লোগানকে প্রমাণের নিমিত্তেই। একাডেমিতে আলো নিভছে, পর্দা সরছে। শুরু হচ্ছে উদযাপন। নাটকের নয়, জীবনের। যে জীবনের মূল মন্ত্রই হলো সৃষ্টি, সৃজন – যে সৃজনেরই বার্তা বয়ে আনে ‘গর্ভধারিণী’, এই গর্ভেই একদিন জন্ম নেবে যৌথখামারের স্বপ্নলোক, সেই ইউটোপিয়ার ভাবনাকে বুকে নিয়েই তো আমাদের নাট্য-উদযাপন!
 
[আগস্টে একাডেমি মঞ্চে আবারও ফিরবে ‘গর্ভধারিণী, আবারও পূর্ণ প্রেক্ষাগৃহের অপেক্ষায় থাকব! এভাবেই এগিয়ে চলুক নাট্যসৃজন, নাট্যআন্দোলন, সবকিছুই!]

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন