পুজো সংখ্যা
তোমাকে আজ পুজো সংখ্যার কভারে দেখলাম। আগের থেকে অনেক বেশি সপ্রতিভ। বেদুইন সাজে নাকের উপর তিলটা যেন কোনো উড়ালপুল ভাঙার অপবাদে কোনো রিক্সা চালক যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পেয়ে সাজা ভোগ করছে। এ নিমিত্ত স্নায়ুবিক উত্তেজনা সামলে তুমি প্রতি রাতে পুলিশ স্টেশন যেতে ডায়েরি লেখাতে, কারণ তো একটাই শুনেছিলাম যে, প্রতি রাতে হাইওয়ে থেকে নাকি তোমার সিঁদুর কৌটো চুরি হয়ে যেত!
এত বছর পর তোমাকে এভাবে, এই সাজে দেখব কখনো ভাবিনি, জানো! এত লালপেড়ে রং মলাট জুড়ে কে দিল বলো! প্রচ্ছদ শিল্পী কি তোমার গর্ভভাঙার গল্প জানে? নাকি দু'একটা সিঁড়ির কথা বলে টোপ দিয়েছিলে? তোমার কপাল থেকে নাকে সিঁদুর ফেলার কাহিনি সমস্ত অবিবাহিত ফুটপাত থেকে শুরু করে আমি পর্যন্ত জানতাম। তবে কি সেই জানা নিয়েই পুজো সংখ্যায় এমন ভাবে আড়চোখে তাকিয়ে আছ যদি কেউ ধরে ফেলে বলে?
তোমার ঠিকানায় কতবার পুলিশ কে খোঁজ করতে দেখেছি, তারা নাকি কাদের যেন ধরে ফেলেছে। তুমি তাদের শনাক্ত না করলে ওদেরও যে নিস্তার নেই। এদিকে তুমি ঠিকানাবিহীন! কোন নাবালক আলোর কাছে ঠাঁই নিয়েছ! যে তোমাকে লুকিয়ে রাখার সাহস এভাবে চড়া দামে পৃথিবীকে বিক্রি করতে পারে!
এখন আমি জুয়োখোর পুকুর পাড়ে বসে পাতিহাঁসের পালক কুড়িয়ে বিক্রি করি। তবু এই পালকেরও এত রং নেই জানো! তবে কি আমিও জুয়ো তে হেরে গেলাম! তোমার পা দিয়ে মঙ্গলঘট উল্টে দেওয়ার শব্দ নিয়ে একটা কবিতা লিখেছিলাম হাইওয়েতে বসে। সেই লেখাটা এবারের পুজো সংখ্যায় ছাপা হয়েছে। তুমি পাতা উল্টে না পড়লেও একবার পুলিশ স্টেশনে এসো। তুমি তাদের শনাক্ত করে যাও...
মিউজিক্যাল চেয়ার
উৎসর্গ পত্রে তোমার নাম নেই দেখে, কবিতার বই-এর প্রথম পাতার মতো চুল খুলে দিলে লাইব্রেরি হলের টেবিলে। যত উইপোকা শ্যাম্পুর গন্ধে পুরনো আলমারির গোয়েন্দা গল্পের ভিতর থেকে নেমে আসছে। একেকটাকে একেকরকম দেখতে কোনোটা সত্যজিৎ, কোনোটা শরদিন্দু, কোনোটা শার্লক হোমস, কোনোটা সুনীল, কোনোটা নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়-এর মতো, আবার কোনোটা সেই তার মতো দেখতে, যে ক্লাসে ঠিক তোমার পিছনের বেঞ্চে বসে বাঁধাচুল থেকে লালফিতে টেনে খুলে দিয়ে অন্যের নামে দোষ চাপাত
তোমার সারা শরীর কিলবিল করছে শব্দে। যে শব্দটা সাধনা ছেড়ে ময়ূরের সব থেকে রঙিন পালকটা খুলে নিয়ে তোমার খোঁপার কাছে এসে চুপটি করে বসে আছে আজ, তাকে তুমি বখাটে বালক বলে মস্করা করে বয়সের দোহাই দিয়ে উড়িয়ে দিলে
এদিকে লালদুর্গ থেকে তোমার চুলের ক্লিপ উদ্ধার করে এনে যে মিশরের পিরামিড সাজাল, যে তোমার অহংকারকে হন্যে হয়ে নক্সশালবাড়ি থেকে খুঁজে এনে দিল, তাকে তুমি এই টেবিলের পাশে একটা চেয়ার দিয়ে বসিয়ে রেখো। কারণ, পাতার পর পাতা উল্টে যখন দেখবে প্রতিটা চরিত্র উইখেকো, তখন শরীর থেকে শব্দরা নেমে মিউজিক্যাল চেয়ার খেলা শুরু করে দেবে...