দোঁহা

মৌসুমী মণ্ডল দেবনাথের কবিতা



উৎসব

একটুকরো সাদা মেঘের সংকেতে শেষ হয়ে যায় আমার বৃষ্টিকাল। ঘুমের মধ্যে দেখি, কী এক নিঃস্ব সন্ধেয় অদ্ভূত আঁঁধারে পশ্চিমে হেঁটে যাচ্ছেন জীবনানন্দ! একটি ট্রাম মৃত মানুষের আত্মাদের নিয়ে সূর্যের সাথে সাথে ঢলে পড়ছে সেই রাতেরই ঠিকানায়। প্রেম নেই ...প্রেম নেই...অবুঝ এই পৃথিবীতে। উৎসবের গেটে সেজে উঠেছে পদ্ম কাঁথার সাজ, এলোমেলো কাশবনের গায়ে মরা নদীর দীর্ঘশ্বাস...একটি আঠেরো বছরের মেয়ে অ্যালিস মহাকাশে যাবে লাল তারার আলো আনতে। সে এখন ব্লু বেরি ক্ষেতের শ্রমিক...একলা দেশের দুর্গা মেয়ের গ্লাভসে আঁকা মহাবিশ্বের মায়া। কেউ জানে না, কেউ জানে না কেন কিছু মানুষ আঁধারে সমর্পিত প্রাণ...উৎসব আঁকতে আঁকতে এঁকে যায় আত্মহত্যা। আর কতো শতাব্দী জুড়ে মৃত্যুর কবিতা লেখা হবে! গর্ভগৃহের বাইরে ফোঁটা ফোঁটা শিশির পড়ছে...কারা যেন কোরাস গাইছে জীবন চেয়ে চেয়ে...


 এক জ্যামিতি বাক্সভরা জোনাকি

মেয়েরা যখন কবিতা লিখতে বসে
ছেলেরা ভুলতে থাকে সংসারের সীমানা
তাদের চোখের সামনে শুধুই ভেসে ভেসে ওঠে
নদী-রং যোনি, গোধূলির মতো ঠোঁটের নকশা।
মেয়েদের নরম ঘাসে ঢাকা স্তনবৃন্তে জেগে থাকে
শতাব্দী প্রাচীন গিরিশিরার পথে ছুটে যাওয়া
চেঙ্গিস খানের অশ্ব খুরের নীল নীল দাগ...
তারপর হঠাৎ করে বয়ে আসা মেঠো লিলুয়া বাতাসের সঙ্গে উল্টো লড়াই করতে থাকে যুদ্ধবাজ সেনার মতো। হুংকার ছেড়ে মেয়েদের লেখা কবিতার পংক্তিদের
ভাসিয়ে দিতে চায় ভীষণ গভীর নিম্নচাপের সমুদ্রে...
তবুও আমার মনে হয় প্রতিটি সকালে দুপুরে ও রাত্রে,
মেয়েরা যখন তখন কবিতা লিখতে বসে।
আর তাদের দেহ থেকে গলে গলে পড়তে থাকে
পৃথিবীর যাবতীয় স্নেহপদার্থ ও মায়াময় হৃদয়...
তাদের মশলা মাখা আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে জেগে ওঠে
হলুদ ধানের ক্ষেত, পটলপাতার ঝিরঝিরে ঢুলুনি
এলাচবনের গন্ধ বিভোর ভোর,
ভালোবাসতে বাসতে জং ধরা হাতে এঁকে নেয় নীলকণ্ঠ পাখির রঙিন পালক,
আর ভাতের গন্ধমাখা কবিতার খাতা হাতে মেয়েরা ফিরে আসেন, গ্লাসে গ্লাসে অমৃত ঢেলে দিতে,
ঘরের পাশটিতে বয়ে যাওয়া প্রিয় বারান্দায়।
ভুলে যায়, রাতভর পাশের ঘরটিতেই চলছিল
তার ক্লান্ত শরীরের অ্যানাটমি, ফুটেছে ব্যথার মুকুর।

মেয়েরা ভাবে এ-বছর কাশফুল ফুটলে
ডানাদু'টো পরে একদিন ঠিক চলে যেতে পারবে ব্রহ্মাণ্ড পেরিয়ে কোথাও
আসলে এইসবই মেয়েদের কবিতার কথা।

নাকের নথে দিনের আলো যখন পিছলে পড়ে,
মেয়েরা গাছে গাছে পাখিদের সংসার দেখে বেড়ায়,
শুকনো পাতা কুড়িয়ে এনে রাঁধতে বসে
দেয়ালে সেলাই করে রাখা বাক্য পড়ে
হুশ করে জ্বলে ওঠে, "সংসার সুখের হয় রমনীর গুণে"...
রক্তে যেন ছুটছে তখন বুনো ঘোড়ার দল
তাড়াতাড়ি মাছের ঝোলে লঙ্কাদাহন করে।

শরীর জুুড়ে বেড়ে যাওয়া অ্যানিমিয়া নিয়ে
প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড ফুলে ওঠা পুরুষের বিছানায় বসে
জাগিয়ে তোলে জীর্ণ একটি কবিতার খাতা,
লিখে ফেলেন তারা, সমূহ দাবানলের কথা
ও এক জ্যামিতি বাক্সভরা জোনাকির কথা...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন