দোঁহা

অশনি সংকেতঃ ইরান থেকে বলছি

 

প্রচ্ছদ. মরজানে সতরপির 'পার্সেপোলিস'

অমর্ত্য বন্দ্যোপাধ্যায়

অশনি সংকেত। সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা।
অশনি সংকেত। ইরানের আকাশ।
অশনি সংকেত। ভারতবর্ষ।

লাল-কালো-ধূসর মেঘেদের আকাশ। মেঘেরা উড়ে বেড়াচ্ছে। আকাশজোড়া সেই ঘন, গম্ভীর হয়ে ওঠা অলীক চাঁদোয়াতেই, বারংবার-যেন বা ছিন্নবিচ্ছিন্ন, তীক্ষ্ণ ও সূচাগ্র হয়ে বিদ্যুৎ জ্বলে উঠতে চাইছে। আকাশ কাঁপিয়ে সেই গর্জন ভেসে আসছে। গুমরিয়ে উঠতে চাইছে কেউ, যেন বা ফেটে পড়তে চাইছে প্রাগৈতিহাসিক কিছু শক্তির উৎসেরা হঠাৎ। আমার মহম্মদ বুয়াজিজির ইতিহাসকে মনে পড়ছিল। আমার আরব বসন্তের সময়কে মনে পড়ছিল। আমার মনে ভারতবর্ষের ভবিষ্যৎকে নিয়েই তখন আশঙ্কার মেঘ ঘনিয়ে উঠতে চাইছিল। আমি অবাক চোখে কেবল, সামাজিক মাধ্যমের পর্দাতে, সেই ছবিটিকেই বারংবারে ভেসে উঠতে দেখেছিলাম।

লম্বাধরণের একটা বাঁশ বা কাঠের দণ্ডের উপর, কেউ যেন বা কোনও ভাবে বেঁধে রেখে দিয়েছে, সদ্য কেটে নেওয়া একগুচ্ছ লম্বা চুলের একটি সমষ্টি। পতপত করে সেই গুচ্ছটি উড়ে চলেছে। আশ্চর্যেরও আশ্চর্য এক বেপরোয়া মনোভাবকে জাহির করতে চাইছে। বুয়াজিজি থেকে মাহশা আমিনির ইতিহাস। অজান্তেই একেকজন হঠাৎ, কিভাবেই বা যেন আস্ত একেকটি সম্প্রদায়কে, তেমন কোনও প্রস্তুতি ছাড়াই -উজ্জীবিত করে তুলতে পারে।

২০১০ সাল। ফলবিক্রেতা, তিউনিশিয়ার শিক্ষিত বেকার মহম্মদ বুয়াজিজির ফলের গাড়িটিকে পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছিল। বুয়াজিজিকেও হেনস্থা করা হয়। দেশজুড়ে দীর্ঘসময়ের একনায়কতন্ত্র, ও তার ফলে এক চূড়ান্ত অর্থনৈতিক দুরবস্থা, এমন একটি পরিস্থিতির ভিতরে তিউনিশিয়ার জনগণ তখন ক্রমশই অন্ধকার থেকে অন্ধকারে তলিয়ে যেতে যেতে কোনও মতে ভেসে থাকতে চেষ্টা করে চলেছিল। এই সময়ে দাঁড়িয়েই বুয়াজিজির ঘটনা। তার ফলের গাড়িটিকে পুলিশ বাজেয়াপ্ত করার একদিন পর, বুয়াজিজি প্রকাশ্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করে। ঝলসে যাওয়া অবস্থায় হাসপাতালের কেবিনে কিছুদিন বেঁচে থাকলেও, তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। সেই বিক্ষোভই ক্রমশ হয়ে ওঠে নাগরিক অভ্যুত্থান। দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন তিউনিশিয়ার রাষ্ট্রপতি ও একনায়ক আবেদিন বেন আলি ও তাঁর সহযোগী পার্শ্বচরেরা সবাই। সূচিত হয় আরব বসন্তের উদযাপন। তিউনিশিয়া থেকে, বিপ্লব ছড়ায় মিশরে, লিবিয়াতে ও শেষ পর্যন্ত সিরিয়ার মাটিতে একনায়ক আসাদ-বিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। পশ্চিমি দেশগুলির অভ্যন্তরীণ কলকাঠি নাড়ার কারণে শেষ অবধি সিরিয়ার আন্দোলন ক্রমশ এক মর্মান্তিক গৃহযুদ্ধে পরিণত হলেও, মিশর ও লিবিয়াতে একনায়ক মোবারক ও গদ্দাফির অপসারণ ঘটে। ফলবিক্রেতা মহম্মদ বুয়াজিজিই আরব বসন্তের প্রথম উদযাপক। মাহশার নামটিও কি তাহলে ইরানের আকাশে আজ তেমনই এক ইতিহাস হয়ে উঠতে চলেছে?

মাহশা আমিনি, ২২বছরের এক তরতাজা যুবতীর উপাখ্যান। হিজাব অবধি সে পরেছিল। নীতি-পুলিশের তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই হিজাবের ফাঁক দিয়েও নাকি একগাছি চুল কোনও ভাবে তার মুখের উপরে, হিজাবের বাইরেটায় এসে পড়েছিল। শরিয়ত আইনে এ নাকি এক ভয়াবহ অপরাধ! এমন উত্তেজনাকর, উসকানিমূলক বহির্বাস পরে মেয়েরাই যদি এভাবে বাইরে বেরুতে শুরু করে, তাহলে পরে আর সচ্চরিত্র, ঈশ্বরতুল্য পুরুষ প্রতিভূরাই বা কেমন করে নিজেদেরকে সংযত রাখবেন? হাজার হোক, তাঁরাও তো দিনের শেষে মানুষ! এমনটাই আধুনিক ইরানের আইন মনে করে থাকে। এতদিন অবধি হিজাব অথবা মহিলাদের পোশাকবিধি নিয়ে যতখানিও না বাড়াবাড়ি ছিল, সেগুলির সবটাই ছিল মৌখিক, নীতিগত অথবা বেসরকারি অথচ অঘোষিত সরকারি নিষেধাজ্ঞার মতোই। জানতে পেরে অবাক হয়ে গেলুম, কিছুদিন আগে অবধিও ইরানের রাষ্ট্রপতি যিনি ছিলেন, সেই মেহমুদ আহমদিনেজাদ, যাঁকে কিনা নির্বাচনী প্রচারের সময়ও নির্বাচনে জেতবার পরেও, পূর্বের কিছু বক্তৃতা ও পরে সংবাদমাধ্যমের প্রচারের উপরে ভিত্তি করে, কিঞ্চিৎ পরিমাণে হলেও আধুনিক অথবা প্রগতিশীল বলে কেউ কেউ ভেবেছিলেন, সেই আহমদিনেজাদের হাত ধরেই ইরানের মেয়েদের পোশাকবিধির বাড়বাড়ন্ত ও সেই সবকিছুকেই আইনি গণ্ডিতে বেঁধে ফেলার এই যে প্রচেষ্টা, তার সূত্রপাত। রাজতন্ত্র পেরিয়ে বিপ্লব এলেই যে, সেই বিপ্লব সবসময়ে জনমুখী হয়ে ওঠে না, মানুষের কথা বলে না-আজকের ইরান তারই সবচেয়ে বড় উদাহরণ।

১৯৭৯ সালে রুহোল্লা খোমেইনির নেতৃত্বে শাহ রাজবংশের পতন ও ইসলামিক বিপ্লব, নারীমুক্তি থেকে সমাজমুক্তির ইরানে এক অদ্ভুৎ অন্ধকারকে নামিয়ে এনেছিল। আশির দশকের আগেকার ইরানে মেয়েরা যে স্বাধীনতার উড়ান শুরু করেছিলেন, খোমেইনির বিপ্লব সেই উড়ানকে মুখ থুবড়ে মাটিতে নামিয়ে আনে। উদার, উন্মুক্ততা থেকে মেয়েদের শরীর ও মনের উপর নিশ্ছিদ্র অন্ধকারকে নামিয়ে আনা হয়। বেসরকারি নীতি-পুলিশি ও ধর্মীয় মৌলবাদের দাপটে পাশ্চাত্য পোশাকে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে শুরু করা ইরানের মেয়েদের উপর আবারও নেমে আসে হিজাব, নিকাব, বোরখার অন্ধকার। প্রতিবাদ সে সময়েও হয়েছিল। সেই সময়েও হিজাব উড়িয়ে, চুল কেটে, নিকাব পুড়িয়ে তেহরানের রাস্তায় বিক্ষোভে নেমেছিলেন ইরানীয় মহিলারা। সেই বিপ্লব পরে ক্রমশ থিতিয়ে যায়। কিন্তু নিয়মিত ব্যবধানেই ইরানের মেয়েরা শরিয়ত আইন অথবা অন্ধ ইসলামিক নিয়মকানুনকে জাতীয় জীবনের উপর চাপিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে নিজেদের প্রতিবাদ জানিয়ে এসেছে। কিন্তু দিন যত গিয়েছে, প্রথমে রুহোল্লা, পরে আয়াতোল্লার সরকার অন্ধকার থেকে আরও অন্ধকারের অভিমুখেই ইরানকে ঠেলে দিতে চেয়েছে।

কিয়ারোস্তামি অথবা বাহমান ঘোবাডির দেশ, শিরিন ইবাদি অথবা জাফর পানাহির দেশ বড় পরিশ্রম করে, বড় কষ্টের সঙ্গে চূড়ান্ত মৌলবাদের বিপরীতে এক অসম লড়াইতে জমি ধরে রাখার চেষ্টা করে চলেছে। মাহশা আমিনি সেই লড়াইয়েরই শেষতম শহীদের নাম।

…একটু ভুল হয়ে গেল বোধহয়। মাহশা-সহ আরও বেশ কয়েকজনকে নীতি-পুলিশের কর্মীরা গ্রেপ্তার করার পর পুলিশি অত্যাচারের কারণে মাহশা অসুস্থ হয়ে পড়ে। শেষ অবধি সে গভীর কোমায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। তিনদিন পর হাসপাতালে আমিনির মৃত্যু হয়। সরকারি তরফে আমিনির মৃত্যুর কারণ হিসেবে বলা হয় তার হৃদযন্ত্রে কোনও সমস্যা ছিল। মাহশার পরিবারের তরফে এই বক্তব্য অস্বীকার করা হয়েছে। কিন্তু মাহশাই এই লড়াইতে শেষতম শহীদ নয়। মাহশার মৃত্যুর পর ইরান জুড়ে যে বিপুল নারীমুক্তি সংগ্রাম গড়ে উঠতে পেরেছে, সরকারি তরফে খোলাখুলি ভাবে সেই আন্দোলনকে যেনতেন প্রকারেণ দমনের নির্দেশ জারি করা হয়েছে। আন্দোলন তাতেও থেমে থাকেনি। ৫০জনেরও বেশী মানুষ, শিশু-নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এই আন্দোলনের কারণে-তাঁরা পুলিশ অথবা সরকারি আইনরক্ষকদের গুলিতে, অথবা অন্যান্য অস্ত্রের দ্বারা নিহত হয়েছেন। বাহমান ঘোবাডি প্রমুখ বিশিষ্টজনেরা খোলা চিঠিতে মাহশা আমিনির মৃত্যুর ঘটনার বিষয়ে সরকারি অবস্থানের কড়া নিন্দা করেছেন। ইরান তবুও জ্বলছে। এই লেখার সময় অবধি সেই বিপ্লব বা সেই আন্দোলনের তীব্রতা এতটুকুও হ্রাস পেয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে না। বহুকাল, বহুমাস, বহুযুগ ধরে সঞ্চিত হয়ে আসা পূঞ্জীভূত ক্ষোভ, হাহাকার, অপমানেরই যেন বা বারুদ-বিস্ফোরণ ঘটছে আজ। মাহশাকে ইরান গ্রহণ করেনি, আশ্রয় দিতে পারেনি-আজ গোটা ইরান তাই মাহশারই জন্য পথে নেমে এসেছে।

অশনি সংকেত। এই বিক্ষোভ ইরানের খোমেইনি-পন্থী, ইসলামিক সরকারের অস্তিত্বের সুমুখে দাঁড়িয়ে আদতে এক ভয়ঙ্করতম অশনি সংকেতেরই সমতুল। যে কারণে ইরানের সরকার তুমুল দমনপীড়নের মাধ্যমে এই আন্দোলনকে থামিয়ে দিতে চাইছে। কিন্তু ইরানের বিদ্রোহিণীরা এক ইঞ্চিও জমি ছাড়তে নারাজ। তেহরানের রাস্তাতেও খোমেইনির খবরদারির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের শ্লোগান উঠেছে। তাঁকে দেশ ছেড়ে পালানোরও পরামর্শ দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা একেকজন। ক্রমশই তীব্র হয়ে উঠেছে খোমেইনির বিরুদ্ধে ক্ষমতা ছাড়ার আওয়াজ। এর বিপরীতে আমার এখন ভারতবর্ষের অবস্থা দেখেও ক্রমশই চিন্তিত হয়ে পড়তে ইচ্ছে হচ্ছে। ২০১৪ সাল থেকে আমরাও, সংখ্যাগুরু রাজনীতির মোহের ফাঁদে পা দিয়ে, প্রলুব্ধ হয়ে যে ‘জনগণের সেবক’কে মসনদে এনে বসিয়েছি, আমাদের দেশেও অমনিতরো হিন্দু পোশাকবিধি চালু হওয়াটা, বোধ করি স্রেফ সময়েরই অপেক্ষা কেবল। আমরাও ভেঙে যাচ্ছি। আমরাও যে পিছিয়ে যাচ্ছি খুব।

ইসলামিক ‘বিপ্লব’ হোক, অথবা ‘নয়া ভারত’এর আহ্বান। মৌলবাদী, অনুদার, অত্যাচারী, ফাসিস্ত, একনায়কপন্থী কোনও সরকারকে, যে কোনও কারণেই পৃথিবীর যে কোনও দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে, কোনও সময়েই সমর্থন করা চলে না। যে সমস্ত আদর্শ মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে, যে শাসনে ব্যক্তির আচার-আচরণ, পোশাক, বিশ্বাস ইত্যাদিকে রাষ্ট্রের মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রণ করা হয়, বিপরীতধর্মী অথবা বিপরীত চিন্তার যে কোনও অস্তিত্বকেই সমূলে বিনষ্ট করার বিষয়ে উঠে পড়ে চেষ্টা করা হতে থাকে, আমি সর্বোতভাবে তার বিরোধিতা করি। আজীবন কেবল সেইটুকু অধিকার নিয়েই নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখতে চাই।

ইরানের মানুষ পথে নেমে এসেছে।

সত্যকারের বিপ্লব সিন্থেসাইজ করা যায় না, ল্যাবরেটরিতে অঙ্ক কষতে কষতে তার ঘটনাপ্রবাহকে আগে থাকতেই হিসেব কষে নেওয়া চলে না। মাহশা আমিনি আরেকজন মহম্মদ বুয়াজিজি হয়ে উঠতে পারবেন বা পেরেছেন কিনা, সেই প্রশ্ন এখানে অবান্তর। আজকের বক্তব্য কেবল সংক্ষেপে এইটুকুই, ইরানের আন্দোলন আবারও সারা পৃথিবীর নারীসমাজ, নারীর অস্তিত্বরক্ষার লড়াইকে বেশ কয়েক কদম এগিয়ে দিতে চলেছে। আগুন, লাঠি, গুলি, কাঁদানে গ্যাস, অথবা পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর, সেই সময়ের অত্যাচার- কোনও কিছুই মনুষ্যত্ব ও মানবতার জন্য এই লড়াইকে দমিয়ে দিতে পারেনি।

মাহশার মৃত্যুর পর থেকেই, আড়ালে-আবডালে-সঙ্গোপনে এবং ভীষণ ভাবে প্রকাশ্যে, প্রত্যক্ষেও-এক নতুন ইরানের বিষয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু হয়ে গিয়েছে। এই বিপ্লব আজ শুদ্ধি ও মুক্তির আগুন নিয়ে আসুক। প্রতিজন শহীদ, অত্যাচারিত, অসুস্থ, অসহায় মানুষ, আমাদের উদ্বুদ্ধ করেছে। ফাসিবাদ হোক অথবা ধর্মীয় মৌলবাদ, মানুষের প্রতিবাদ একদিন না একদিন ঠিকই বিষম হয়ে ফেটে পড়তে পারত। আজ দক্ষিণপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই, ধর্মীয় অথবা রাজনৈতিক মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াই, মানুষের অধিকারের জন্য, সমানাধিকারের জন্য লড়াই-সারা পৃথিবীতে ঢেউ তুলতে শুরু করেছে। সংশ্লিষ্ট সেই সমস্ত দেশের সরকার যদি বা এখন থেকেই যথেষ্ট পরিমাণে, এমন প্রসঙ্গে সক্রিয় ও সজাগ হয়ে উঠতে শুরু না করে, সমস্যাসমূহকে মেটানোর চেষ্টা না করে, তাহলে এক চরম অরাজক অবস্থা ও বিপুল এক ক্ষোভের বিস্ফোরণ-ভিন্ন সেই সব দেশের মানুষের কাছে তাঁদের প্রতিবাদকে ব্যক্ত করার ক্ষেত্রে আর কোনও মাধ্যম বা আর কোনও উপায়ই তখন আর অবশিষ্ট থাকবে না। এখন আমাদের সকলেরই বোধহয় ভবিতব্য তাই। আমরা বুঝে গিয়েছি, শেষ লড়াইয়ের সময় আসন্ন।

এই লড়াই আমাদের আত্মবিশ্বাস যোগায়। আমাদেরকে উদ্বুদ্ধ করে। আমরা প্রত্যেক আগুনের সম্মুখে গিয়ে দাঁড়িয়ে জোড় গলায় চিৎকার করে বলতে চাই, “এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না…” এই অন্ধকারাচ্ছন্ন বধ্যভূমির পরিবেশ, আমার দেশ না।

ইরানের মেয়েরাই আজ আমাদের প্রতিবাদের পথ দেখিয়েছে। এই লেখা শেষ করতে করতে ইউটিউবে কিছু গান শুনছিলাম। শুনছিলাম সেই ফাসি-বিরোধী বেলা সিয়াওয়ের গান। সেই গান আজ হিন্দিতে অনূদিত, অনূদিত সিংহলীতে, আর আজ তা ইরানে প্রচারের জন্য ফারসিতেও অনূদিত হতে পেরেছে। হিজাবের হুমকির বিরুদ্ধে, পশ্চিমি পোশাকে সজ্জিত হয়ে, ইরানের মেয়েরা এখন বেলা সিয়াওয়ের সঙ্গীতে শ্লোগান তুলেছে। সঙ্গীত অথবা বিপ্লবের, আদতে যে সত্যিই কোনও বিশেষ রঙ হয় না। কেবল মানুষই পারে মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে।

ইরানের নারীমুক্তির আন্দোলনে, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মাহশার জন্য যখন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মানববন্ধন গড়ে ওঠে, আমাদেরও তখন এই শেষ কথাটিকেই আরও একটিবারের জন্য বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়। তাঁর রচনাতেই তিনি বলে গিয়েছিলেন,

“মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ,” আমরা প্রত্যেক একনায়কের বিপরীতে, তাঁদেরই অন্ধ সাম্রাজ্যের বেড়াজাল চিরতরে ভেঙে চুরমার হওয়ারই মুহূর্তের প্রতীক্ষা করে থাকতে চাই। ইরানের আন্দোলন তেমনই এক মুহূর্তের সম্ভাবনাকে উজ্জ্বল করে তুলেছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন