দোঁহা

তমোঘ্ন মুখোপাধ্যায়ের কবিতা

  

প্রচ্ছদ. মরজানে সতরপির 'পার্সেপোলিস'

 জরাকাল
 

[উৎসর্গ: মাহসা আমিনি (২২ জুলাই, ২০০০ – ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২)]

‘You only have to look at the Medusa straight on to see her. And she’s not deadly. She’s beautiful and she’s laughing.’
                                                           —Hélène Cixous,  “The Laugh of the Medusa”


প্রিয় অ্যাটিস! খোজা সরলমতি অ্যাটিস! বিবাহ-মুহূর্তে মা কিংবা প্রেমিকা স্মরণে
কী জগৎ-পাগল দশায় কেটে ফেলেছ পুংগোলকের যুগল! দ্যাখো, সিবেলি ক্রমশ
মাটির ভেতর মাটি, জলের ভেতর স্রোত; সেই থেকে কিম্পুরুষের ঢোল
বাজছে শকটে শকটে...প্রিয় অ্যাটিস! খোজা সরলমতি অ্যাটিস! আমি তোমায়
ছুঁয়েছি নাকি পাইন গাছের ছালে আঙুল নড়াচড়া করে—টের পাই না—এখন নিজেই
নিজের কোঁচকানো দুধের দিকে জিভ বাড়াই, চোখ লোপাট হওয়া বুড়ো দ্রষ্টা,
সর্পমিথুনে লাঠি ঠুকতেই শাশ্বত প্রতিষ্ঠার শিরশ্ছেদ শুরু, আর সেই যে
ঘোর কেটে গেল, আর যোষিৎ পুরুষ আলাদা করতে পারি না। শুধু দৃশ্য, অন্ধকারে
মাতৃবিছানায় ছেলে নিংড়ে যাচ্ছে ধ্বজা কিংবা করপাস স্পঞ্জিওসাম, শুধু দৃশ্য,
ভুল অস্ত্রে ভুল পিতার বধ, শুধু দৃশ্য, টাইপিস্ট যুবতীর মধ্যে ব্রণ অধ্যুষিত যুবক
নিত্যকর্মের ফোয়ারা ফেলে হারিয়ে গেল কোথায়...
এত হরিৎ দৃশ্যের ভেতর গুটিয়ে থাকতে থাকতে করোটি নরম হয়ে আসে। যা দেখি তা
সাধারণের ধারণার তলানিতে আশ্চর্য পদ্ম, যা বলি তা মৃত্যু পরবর্তী গানের মতো পাথুরে।
সুতরাং একা, সুতরাং আবার সর্পমিথুনে অন্ধের যষ্টি তুলে সজোরে ঠোক্কর—
অষ্টম বৃত্তের চতুর্থ বলজিয়ায় মাথা অতীতের দিকে ঘুরে স্থির।
কোন ভবিষ্যৎ নিয়ে এত রহস্যময় লীলা? এখন শুধু কালো প্রেতের
স্মৃতিচারণার ভেতর দু’পা এগোই তো তিন পা পিছিয়ে যেতে থাকি...
 
কেন নারী প্রসঙ্গে মিথ্যা আওড়ানোর ফূর্তি পেয়ে বসেছিল? অ্যাটিস! প্রিয় অ্যাটিস!
পুংগোলকের যুগল থেকে উপড়ে ফেলা যায় এত ভবিষ্যৎবাণীর মোহ?
সিবেলির কাঠবাদাম গাছের নীচে আমায় উপুড় করে রাখো; বুঝি মাটির ভেতর মাটি,
শিকড়ের ভেতর শিকড়, বুঝি সময় যা প্রবাহ, সময় যা খণ্ডের ঊর্ধ্বে, আমি তার
আগাপাশতলা গিলে নিতে নিতে নিজেই ভোগ...tempus edax rerum...
কোন হার্মাফ্রোডাইটের মুখের দিকে তাকিয়ে তুমি ডেকে ফেলছ, “বাবা!”
কোন হার্মাফ্রোডাইটের মুখের দিকে তাকিয়ে তুমি ডেকে ফেলছ, “মা!”
কোন হার্মাফ্রোডাইটের শিশ্ন দৈব প্রেরণায় খসে গেছে বলে তোমার
বীভৎস ইচ্ছা তার স্নানদৃশ্যের স্বপ্নে তাড়িত হয়ে হস্তচালনায়?
অথচ গোলক কেটে ফেলার পর তোমায় পাইন গাছের চেহারায় ফিরে আসতে দেখে
চুরাশি লক্ষ জন্মের গা-গোলানি মুহূর্তে মুখ টপকে বেরিয়ে যেতে চাইছে;
সিবেলির মন্দিরের ভেতর এত যৌনপ্রশম মূর্তির মাঝে তুমি একা নারী হলে
টাইপিস্ট যুবতীর কানে কানে আমি ফিসফিস করতাম—
HURRY UP PLEASE ITS TIME
HURRY UP PLEASE ITS TIME...

অ্যাটিস! খোজা সরল অ্যাটিস! যুবতীটিকে ছাড়ো। ব্যথা লাগছে ওর। বলতে পারছে না।


Je dis qu’il faut être voyant se faire voyant.
Le Poète se fait voyant par un long, immense et raisonné
dérèglement de tous les sens.

সেই কালো ইন্দ্রিয়বিপর্যয়ের শব্দগুলি স্মরণ করো, স্মরণ করো
বসন্ত-নির্বোধের হাড়জ্বালানো হাসি। চোখ, কান, মুখ উল্টে যেতে থাকে,
উল্টে যেতে থাকে স্মৃতি ও নখ। কে ফিলোমেলা? কে নাইটিঙ্গেল?
কে প্রক্‌নে? কার চিৎকারের অনুবাদে তুমি, তোমরা শুধু গান শুনতে পাচ্ছ?
শুধু গান, শুধু সুরের ভেতর অথৈ বিশ্বাসঘাতক পাঠক!— আমার প্রতিবিম্ব—
ভাই আমার!—টেরিয়াসের বিকট শিশ্নের ওপর নাইটিঙ্গেল ঘুমিয়ে যাচ্ছে, দ্যাখো!
অ্যাটিস! খোজা সরলমতি অ্যাটিস! ধর্ষণের অনুপুঙ্খ সেলাই শুরু...বোন দিদির কাছে
বার্তা পাঠাচ্ছে লুকিয়ে। দিদিটিও ক্রমশ আবাবিল, গানের পাশে বসে থাকা নিয়তি।
কে ফিলোমেলা? কে নাইটিঙ্গেল? এই আশ্চর্যে বসন্তে
আমি, বুড়ো দ্রষ্টা, যাকে দ্রষ্টা হতেই হত, দেখছি বসন্ত, দেখছি নিষ্ঠুরতম মাসগুলির
টকটকে লাইল্যাক; কোকিলের কোকেইন চিৎকার নাকি ভোর থেকে আগুন
দেখতে দেখতে ফিলোমেলার কাটা জিভ গাছের আনাচকানাচে “হে রাত্রি, আঁধারমথ”
জপ কোন জাদুবলে ছড়িয়ে দিচ্ছে বুঝে উঠব, ঠাওর করতে পারছি না।

জলবেশ্যাদের পাশে যতক্ষণ চিৎ হয়ে শুয়ে থাকি, ততক্ষণ আলো।
জলবেশ্যাদের পাশে যতক্ষণ গুজব ও রটনা, ততক্ষণ ধ্যান।
জলবেশ্যাদের দালালি করা ফিচেল সুন্দর বালক পাছা-গলুইয়ে বসে বিড়বিড় করছে—
সংসারী হওয়ার কত মজা!
সংসারী হওয়ার কত মজা!
আমি, বুড়ো দ্রষ্টা, এখনও ভুতুড়ে স্তন দিয়ে ঘুরে বেড়াই; চোখ মেরে চলে যায়
নাগরে ভরপুর নৌকোর পর নৌকো। ক্রমশ দৃশ্য ভেবে ফেলার ক্ষমতা
হারিয়ে যাচ্ছে যেন, এখন যা দেখি তা সাধারণের চোখেও সাধারণ,
জানলার এক্তিয়ারেও জানলা, যা আওয়াজ জাগাই তা না তো হয় ধ্রুব,
না হয় একমাঠ ধান।
নিসর্গের বুকে, কল্যানীয়া মাদাম সোসস্ট্রিস, হাড় বাজানোর কাউকে আমরা খুঁজে পাইনি!
মাঠভর্তি তাস ফড়ফড় করে ভাসতে থাকে হাওয়ায়। না, কোনও ডুবন্ত নাবিক নেই,
একচোখো বণিক, আদরিনী বেলাডোনা, চাকার ঘূর্ণন কিচ্ছু নেই—শুধু
অবশ্যম্ভাবী নাইটিঙ্গেলের প্রজন্মের পর প্রজন্ম, ফিলোমেলার পর ফিলোমেলা
তাস মুখে নিয়ে উড়ে যেতে থাকে। এই অদ্ভুত উড়াল দেখতে দেখতে শেষরাতে
প্রথম জলবেশ্যা বলে ওঠে—মৃত্যু এই...
দ্বিতীয় জলবেশ্যা বলে ওঠে—সম্ভোগ এই...
তৃতীয় জলবেশ্যা বলে ওঠে—আগে মরলিনি কেন, মুখপুড়ি!
চতুর্থ জলবেশ্যা ঝাঁঝিয়ে ওঠে—করলে করো, না করলে ফোটো!
সেই ব্রণ অধ্যুষিত যুবকটির মুখ মনে পড়ে, মনে পড়ে অভ্যাসই শেষ সত্যি।
টাইপরাইটারের ওপর মেয়েটির অভ্যাস, মেয়েটির ওপর ছেলেটির অভ্যাস;
নিয়মমাফিক যা কিছু তা শেষ অব্দি বাস্তবিক ও থিতু, সর্পমিথুনে লাঠি ঠোকা
যেহেতু অভ্যাসের ব্যতিরেক, তাই পোশাক খুললেই জিভ ঝুলে পড়ে
নিজের কোঁচকানো দুধের ওপর; আমিই আমাকে প্রসব করেছি যেহেতু,
যেহেতু আমিই আমাকে বীজ ও সম্ভাবনা দিয়েছি, মা কিংবা প্রেমিকা স্মরণে
মৃত্যু ছাড়া অন্য কোনও প্রার্থনাভঙ্গির চিন্তা মাথায় আসে না...
ভোর পেরিয়ে গেল দিন, আর জলবেশ্যাগুলি বুকে, পেটে লাখ লাখ নাইটিঙ্গেল বসিয়ে
কী স্থির গলায় বলে উঠল— Le soleil ni la mort ne se peuvent regarder fixement!

অ্যাটিস! খোজা চঞ্চলমতি অ্যাটিস! আমার অন্ধত্বে, শোনো, অক্ষৌহিনী ফিলোমেলা
হাঁ করছে হঠাৎ। গান এই...


বহু প্রসঙ্গের ধারাবাহিক আলোচনার পর আমি দৃশ্য মুছে দিতে চাইছি।
শিখতে চাইছি নাচ। এই জরাজীর্ণ শরীর আশ্চর্য হালকা ইদানীং। যে-কোনও লোকের
আশু বিপদ আঁচ করেও আমি আর মুখ খোলার সাহস জাগাতে চাই না।
নাচ যা স্ট্র্যাভিন্সকি’র বসন্তপ্রথা ধীরে ধীরে গিলে নিতে থাকে, নাচ
যা ততক্ষণ শক্তি যতক্ষণ নির্বাচিত কন্যা সামান্যতম নাড়ি সঞ্চালনেও পারঙ্গম।
একটু পরেই মাটিতে লুটিয়ে পড়বে দেহ, দামামা বেজে উঠবে চারপাশে,
আর উর্বরতা যা জমিকে হিংস্র ও দ্রষ্টাকে ভিখিরি বানিয়ে ছাড়ে,
আর উর্বরতা যা ওসিরিসের মাথা শস্যজটলার সাথে মাটিতে গুঁজে দেয়,
তাকেই পবিত্র বোকা পার্সিফলের পা ভেবে ধুইয়ে দিচ্ছে অনুতপ্ত কান্ড্রি।
বড়ই আজগুবি স্বপ্নজগতের মধ্যে নড়াচড়া করছি আমরা।
Zum Raum wird hier die Zeit.

পূর্বসূরিদের ছায়া আহ্বানের প্রকল্পে ফুল-সুন্দর মেয়েগুলি ঘুরে ঘুরে নাচছে।
নির্বাচিত মেয়েটিকে পৃথকভাবে দেখার চেষ্টা কোরো না।
যতক্ষণ এই দলগত নাচ চলতে থাকে ততক্ষণ সুখ, ততক্ষণ রিপু,
পূর্বসূরিদের ছায়াগুলো দূর থেকে অপেক্ষা করে ততক্ষণ।
বেঙা পেতল না অপরিণামদর্শী শূন্যের লোভে এই ছন্দোবদ্ধ পাক খাওয়া?
দল খসে যাচ্ছে ধীরে ধীরে, নির্বাচিত মেয়েটিকে ঘিরে পূর্বসূরিদের ছায়াসমূহ
হইহই করছে। এর ভেতরে নাচ চালিয়ে যাওয়া সহজ নয়; এর ভেতরে
যে-কোনও অঙ্গ ভুল গতিবেগে ছিটকে যেতে পারে, যে-কোনো গোড়ালি
খুবলে খেতে পারে ভাদ্রলুব্ধকদের দাঁত। অথচ মেয়েটির সমাহিত মুখের দিকে
চোখ গেলে কী যে তৃপ্তি হয়! (আমি, অন্ধ বুড়ো দ্রষ্টা, কীভাবে দেখি তা
জিজ্ঞাসার পাপ কোরো না। শুধু বোঝো, যা তুমি জানো, যা তোমার বোধ,
যা তোমার নরক ও উপাসনাকক্ষ, যা তোমার বিদ্যা ও দৃষ্টি, তা বহুদিন পেরিয়ে এসে
এই অমোঘ দৃষ্টিহীনতায় আমার বসবাস। যা তোমরা দ্যাখো, তা অতিক্রম
করে দেখার যন্ত্রণা সহ্য করতে পারি বলছ চোখ আর কাজেই আসে না।)

প্রিয় অ্যাটিস! খোজা প্রগল্‌ভ মহাভক্ত অ্যাটিস! দ্যাখো নাচ
নিভে আসছে ধীরে ধীরে।
কোথায় পূর্বসূরিদের ছায়া?
কোথায় পাথুরে মুখের পুরোহিতদের উদ্‌গীথ?
শুধু ভাসলাফ নিজিন্সকির উরু চিরে বেরিয়ে আসতে থাকা
হাজার হাজার নাইটিঙ্গেল মেয়েটিকে ঘিরে গেয়ে উঠছে—
Mors vincit omnia
Mors vincit omnia
নাচবুদ্ধি দিয়ে কতটা ঘিরবে আর? এই সত্যি ঘিরে ফেলা যায়?


যা ঘিরে ফেলা যায়, তা এই মৃদুমন্দ হরিণ-মাংস, ভণ্ড দাঁতগুলি
উল্লাসে কাঁপতে কাঁপতে হাড় মজ্জা সব খাচ্ছে। অ্যাটিস! যতবার তোমায়
পাইন গাছ ভেবে হাত রাখতে যাচ্ছি বাকলে, ততবার দাঁতে
জড়িয়ে যাচ্ছে হরিণ-মাংসের তন্তু, শিরশিরে হাওয়া বইছে চারপাশে;
হাওয়ায় কাদের ফিসফিস—অ্যাক্টিয়ন... অ্যাক্টিয়ন...

যা উগড়ে ফেলা যায় তা এইমাত্র উল্লাস ও মদ সহযোগে উদযাপিত
ব্যাধমাংসের রূপান্তরিত ড্যালা, অথচ সমবেত উদগারের মুহূর্তে
কেন মাথার মধ্যে অপাপবিদ্ধা আর্টেমিস স্নানে নেমে বিহ্বল করে দিচ্ছে আমাদের?
কী খেলাম আমরা? হরিণ, না মানুষ? মানুষ, না দৃশ্য?
অথচ দৃশ্য তো মুছে ফেলতে চেয়েছি চক্রাকারে। পেট অব্দি পৌঁছালেই তাকে
“বাতাপি! বাতাপি!” ডাক দেবে সারিবদ্ধ হরিণ...এই তবে শেষ আমিষ ভক্ষণ?
কিন্তু এই বুড়ো দ্রষ্টার তো আরও বহু কিছু ছুঁয়ে দেখার ছিল!
প্রজন্ম শেষ হয়ে গিয়ে আর এক প্রজন্ম, রাস্তা শেষ হয়ে গিয়ে আর এক রাস্তা,
জল শেষ হয়ে গিয়ে অবিমিশ্র sang d'un Poète...

এম্যেয়াস অভিমুখে হাঁটতে হাঁটতে আমাদের বমিভাব নিভে আসছে ধীরে।
যে উত্থান অবশ্যম্ভাবী অথচ বিস্ময়কর, পুনরাবৃত্তি অথচ বিনির্মাণ,
তাকে ছুঁতে গেলে হেঁটে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনও রীতি স্থায়ী নয়।
আর পাশাপাশি গা-ঢাকা ছায়াব্যক্তিটি (যাকে যতবার স্পর্শ করতে যাই, আঙুল
বরাবর সূর্যমুখীর শিকড় কেঁপে ওঠে) হেঁটে হেঁটে কতদূর যাবে?
দূরত্ব শেষ পর্যন্ত বৃত্তের প্রেত, প্রেত চিরকাল দূরত্বের বৃত্ত। গমন অভিসারী।
শেষে ছায়াব্যক্তি থেকে ছায়া সরে গেল...
এরপর দৃশ্য নিয়ে যত বিরোধ সব মিথ্যাচার। অন্ধত্বে আলো গাঢ় হতে থাকে,
পোশাক খুললে কোঁচকানো স্তনগুলি শুশ্রূষার দিকে হেলে যাচ্ছে—দেখি।
নরকবিহ্বল স্বপ্নগুলোর নীচে এলোপাথাড়ি সহোদর চোখেরা হাউহাউ করে ওঠে—
Non ragioniam di lor, ma guarda e passa

প্রথম দৃশ্য: সর্পশিরোমণি যুবতী
দ্বিতীয় দৃশ্য: সর্পশিরোমণি
তৃতীয় দৃশ্য: যুবতী

না, আমরা ত্রাসে পাথর হইনি কেউ। অপাবৃতা যুবতীর মাথাভর্তি সাপ আবিষ্কারে
আমাদের মুখ শিথিল হয়ে আসে আনন্দে। নতজানু উপশম ভিক্ষায়
অ্যাটিস! খোজা সরলমতি অ্যাটিস! নাচপ্রজ্ঞা ফিরে আসার শব্দ প্রক্ষালন করছে ভোর।
আমি, বুড়ো ঘাটের মড়া দ্রষ্টা, চোখের ভেতর অজস্র সমান্তরাল চোখ জাগিয়ে
উরগ-ধ্বজায় বিস্রস্ত চুলের পির‌্যুয়েট দেখছি...পেট চিরে হরিণ বেরিয়ে গেল অবশেষে!

 কেউ পাথর হয় না, যা জঙ্গম তা আরও জঙ্গম হতে থাকে অন্ধকারে;
লাগাম পোড়ানোর মাঠে অশ্বপ্রবণ চোখ সংজ্ঞা অতিক্রম করে (অবলীলা এই)...
সর্পশিরোমণি যুবতীর মুখের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ, প্রতিধ্বনি কাঁপে—
I AM CINNA THE POET,
I AM CINNA THE POET.

অ্যাটিস! খোজা পাইনবৃক্ষ অ্যাটিস! বুড়ো দ্রষ্টার মৃত্যুমুহূর্তে বিচলিত হোয়ো না।
স্থির উদ্ভিদের মতো সিদ্ধান্তে নামো—
পাথরের ওপর পাথর: মানুষ কোথাও নেই।
বায়ুর ওপর বায়ু: মানুষ কোথাও নেই।
সময়ের ওপর সময়: মানুষ ছিল না কখনও।
Zum Raum wird hier die Zeit

Erbermen! Erbermen!



ঋণ:
  ১. Ovid, ‘Metamorphoses’
  ২. T. S. Eliot, ‘The Waste Land’
  ৩. Charles Baudelaire, ‘Flowers of Evil’ ( ‘Les Fleurs du mal’)
  ৪. ‘নরকে এক ঋতু’, আর্তুর র‌্যাঁবো; লোকনাথ ভট্টাচার্য অনূদিত
  ৫. Jean Cocteau, ‘The Blood of a Poet’ (‘Le Sang d’un Poète’)
 ৬. Igor Stravinsky,  ‘Le Sacre du Printemps’ (‘The Rite of Spring’)
 ৭. উৎপলকুমার বসু, ‘কবিতা সংগ্রহ ১’
 ৮. Richard Wagner, ‘Parsifal’
 ৯. William Shakespeare, ‘Julius Caesar’
 ১০. Dante Alighieri, ‘The Divine Comedy (Inferno)'
 ১১. La Rochefoucauld, ‘Moral Reflections or Sententiae and Maxims’ (‘Reflexions ou Sentences et Maximes morales’)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন