অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়
সকাল বেলায় লেখাপড়া করতে বসে ষষ্ঠ শ্রেণীর পড়ুয়া ছেলেটি তাঁর মা’য়ের উদ্দেশ্যে হঠাৎ বলে ওঠে-মা, দুটো টাকা দেবে?
কেন রে? কি করবি টাকা নিয়ে? মায়ের অবাক প্রশ্ন।
একটা পতাকা কিনবো। আজ স্বাধীনতা দিবস, ১৫ই অগাস্ট যে। বাড়ির ছাদে লাগাবো। সবাই লাগিয়েছে
স্বাধীনতার মানে জানিস ?
হ্যাঁ, জানি স্কুলের গৌরাঙ্গ স্যার বলেছেন।আমি যখন লেখাপড়া শিখে খুব বড় হব, চাকরি করবো দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়াবো তখন আমি স্বাধীন হবো।
কিন্তু বৃষ্টি পড়ছে যে!
তাতে কি হয়েছে? গুড়ি-গুড়ি বৃষ্টি। আমার পতাকা ভিজবে না। ওটা পলিথিন কাগজ দিয়ে তৈরী।
সেদিন পতাকা লাগাতে গিয়ে ছেলেটি সেই যে ছাদে গেল আর ফিরলো না। বৃষ্টি ভেজা ছাদের এক কোনে এক হাত দূরত্বে রাস্তার পোলের সঙ্গে বাঁধা বিদ্যুত চালিত তারটাকে টানতে গিয়ে সেদিন ছেলেটির অকাল মৃত্যু হয়েছিল। কেউ ঘুনাক্ষরেও জানতে পরেনি। বেশ কিছু সময়ের পরে যখন খোঁজ পড়েছিল তখন দেখা গেল জলে ভেজা শরীরটা ছাদের এক কোনে নেতিয়ে পড়ে আছে আর শরীরটা দিয়ে ধোঁয়া নির্গত হচ্ছে। পতাকাটি তখনও হাতের মুঠোয় ধরা। মা গিয়ে যে কোলে তুলে নেবেন তারও উপায় ছিল না । এই সংসারে স্বেচ্ছায় জীবনের মায়া ত্যাগ করা যে বড়ই কঠিন।