আধেকজান
পর্ব ৫
৬.
চোখ লেগে গিয়েছিল কখন যেন উদ্দালকের। এক অপার্থিব সুর যেন জাগিয়ে দেয় তাকে। চোখে লেগে থাকা ঘুমঘোর আর সুরের মায়ায় সে প্রথম চটকায় বুঝতে পারে না সে কোথায়। যদিও সে ক্ষণ ক্ষণস্থায়ীই, যেহেতু তার নজরে তখন নামাজরত সরফরাজের প্রণামভঙ্গি। তবুও সে আপাতত নিজেকে মসজিদ থেকে ভেসে আসা ভোররঙা সেই সুরে নিজেকে ডুবতে দেয়। এ সুর কি ভৈরবী? জানে না সে। যেমন সে জানে না ভোরের প্রথম এ নামাজকে ফজরের নামাজ বলে, যা জেনেছিল পরে সে সরফরাজের কাছে, যেমন জেনেছিল মাগরিবের নামাজের কথা কাল সাঁঝে। শিক্ষিত-আধুনিক সরফরাজ শুধু এই নামাজটুকুই রাখে। অন্য নামাজের সময় সে পায় না জীবিকার ব্যস্ততায়।
প্রথমে উদ্দালক ও সরফরাজ, পরে অনন্য ও রমেশ মসজিদ থেকে স্নান সেরে আসে। ততক্ষণে আশাকর্মীটিও এসে পড়ে তাদের আশ্বস্ত করে। বিভিন্ন দলের বুথ এজেন্টরাও এসে পৌঁছায়। করোনা কারণে সবাই-ই মুখোশধারী। আশা-মেয়েটি সবার হাতে স্যানিটাইজার স্প্রে করে। পাঁচটা বেজে গেছে। মক পোল শুরু হয় এবং বিনা ঝামেলায় শেষও হয়। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে উদ্দালক, যেহেতু মেশিন বিগড়নোর, ফলত ভুলভাল ফল প্রসবের চোরা আশঙ্কা তার মনে থেকে গিয়েছিল, কেননা সরকারি মাহাত্ম নামক ঈশ্বরীয় ছায়া এ কার্যক্রমে সদা সর্বত্র লেপ্টে থাকে, থাকেই।
উদ্দালকের ভাবনাকে ছিঁড়ে বাইরে একটা কোলাহল জেগে ওঠে। কৌতূহলী সে কান খাড়া করলে এমনই কলহশব্দ জেগে ওঠে,
--আঝ দু-কুড়ি বচর ধরি আমি ফাস্টো ভোট দি আসতেচি, তুই সিদিনকের পোলা বললিই হল?
--বাহ চাচা! আমি ঝি সব্বার আগি সি আঁধার থাকতি লাইন দিছি!
--বললিই হল? ই আধলা তবে কিসের ঝন্যি? আমি বলে কাল রেতের টেইমে আধলাখানা এখেনে রেইখে গেচি! সব মানুষি সাক্কি দেবে। পুছ কর...
পেছনের লোকজন একসাথে হৈ-হৈ করে—এ আব্বাস চাচাকে ছেড়ে দে। ওটা উর জম্মের হক। চাচা মাটি লিলে তু না হোক ফাস্টো ছাপ্পা মারিস।
--আর ছাপ্পার টেইম নাই ভাইজান। অহন মিশিন... বুতাম টিপা।
একজন ফুট কাটে, কিন্তু তাকে থামিয়ে সে চাচা ফুঁসে ওঠে-- যি আমারে মাটি লিতি বলে সি ঝেন আগুতে কবরি ঝায়।
ততক্ষণে এক জওয়ান হাঁক পাড়ে—কোই ফালতু ঝামেলা নেহি। ঠিকঠাক লাইনমে খাড়া রহো। ছে বাজনে পর এক এক কর সব অন্দর ঘুঁসে গা।
উদ্দালক ভাবে—বাব্বা! ভোটে এত উত্সাহ মানুষের! সত্যিই সার্বজনীন উত্সব যেন এ ভোট! সবাই কেমন সাধ্যমত ভালো পোশাক পড়ে লাইন দিয়েছে। মাস্কের আড়াল, তবু উজ্জ্বল চোখগুলো যেন হাসে।
ছ-টা বাজে। ভোট চালু হয়। আশামেয়েটি সবার হাতে স্যানিটাইজার স্প্রে করে। অনন্য চোখ বন্ধ করে কপালে হাত ঠেকায়। সেই চাচাই সবার প্রথমে তার গণতান্ত্রিক মত দান করে। মেহেন্দি রাঙানো দাড়ি। চোখে আবার সুরমাও। বয়স গোটা সত্তর বোধহয়। এই বয়সেও রঙিন বেশ।
--চাচা, আগু সাল ফির ফাস্টো ভোট? তা, ভাতিজাদের ইবার চান্স দিও। একজন অল্প বয়সী এজেন্ট ফোড়ন কাটে।
--উ কথা বলিস না বাপ। যদ্দিন চলতি-ফিরতি পারবো উ মোর নেঝ্য হক।
যা হোক হাসি-মস্করার মধ্যে দিয়ে বেশ সুষ্ঠভাবেই তো শুরুটা হল। এখন সকালটা বাকি সারাটা দিনের পূর্বাভাস হলেই বাঁচোয়া। ভাবে উদ্দালক, প্রিসাইডিং অফসার যে। গাঁয়ের লোক সব, সবাই সবাইকে চেনে। এখানে ফলস ভোট হয় না বোধহয়। নিজেই নিজেকে সান্ত্বনা দেয় যেন সে। যদিও এ ভাবনার তলায় এ আশঙ্কা আলতো হলেও ঘাই মারে যে, যা হয় তা ভাণ্ডার লুট, বুথ দখল যুদ্ধের নীতিতেই, যেখানে ন্যায় কথাটাই অন্যায়। তবে বুড়োর ন্যায্য ও হক কথাদুটি তার কানে বসে যায়, ফলে তার ভাবনায় এও ভাসে যে ভোট এদের কাছে উত্সব শুধু নয়, কোথায় তা যেন তাদের অধিকারকে মান্যতাও দেয়। না, সকালের ভোটদানে কোনও মহিলাকে দেখা যায় না, ওরা বোধহয় ঘরের কাজ সামলে একটু বেলাতেই আসবে। তবে যে সবই স্বস্তির তাও নয়, কেননা ভগ্নদূতের মতো মিঠুন এসে বলে যায়—সার, চা-ফা হবেনি আঝ। খাবারও হবেনি। দুকান সব বন্দ ভোটের ঝন্যি।
শান্তিরক্ষার্থে নির্বাচন কমিশন কড়াই বেশ এবার। হতাশায় দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে উদ্দালক। বাকি সব পোলিং পারসনও।
টুকটাক ভোট এগিয়ে চলে তার নিজস্ব নিয়মে, কোনও ‘ঝমিলি’বিহীন আপাতত। সময়ও গড়িয়ে চলে তার আপন ছন্দে ন-ঘটিকা ছাড়িয়ে দশের ঘরের দিকে। ঘরের সকালের কাজ সেরে মহিলারাও আসতে শুরু করেছে দল বেঁধে, যে দলে রঙের থোকা তোলা শাড়িতে, সালোয়ারে। নবীনা থেকে প্রবীণা। মহিলা মানেই যেন রঙের মেলা—পোশাকে, অকারণ কাকলিতে, হাসির উচ্ছল ঢেউ-এ। ফিরে গিয়ে হয়তো রান্না বসাবে তারা। ভাবনারা ছবি আঁকে উদ্দালকের মনে তার কাজের ফাঁকে ফাঁকে। সত্যিই ভোট জনগণের উত্সব, সার্বজনীন পরব, তৌহার।
--দুম! দুম!
সহসা উদ্দালকের সে ভাববিলাস ছলকে ওঠে উলঙ্গ বাস্তবতায়। উপুর্যপরি বোমা পড়ে কাছেপিঠে কোথাও। হাসির কাকলি ভেঙে পড়ে কান্নার রোলে। সুস্থির লাইন ছিটকে যায়। সেনারা পজিশন নেয় টানটান সাবধানতায়। বুথের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। বদ্ধ গণতান্ত্রিক সে থানে আতঙ্কে-গরমে ঘামতে থাকে পোলিং পার্টির সকলে। ভেতর থেকেই উদ্দালক শুনতে পায় ছোটাছুটির আওয়াজ। উত্সবপ্রাঙ্গণ মুহূর্তে যেন বা যুদ্ধক্ষেত্র! ভাবনা নতুন ঢেউ তোলে উদ্দালকের মনে। যে ভাবনায় এ আশ্বাস থাকে যে, এ কৌশল বহু পুরনো, তেমন প্রাণঘাতী নয়। তাদের শহরেও এর চল। বিপক্ষ পার্টিকে ভয় দেখানো, যাতে বিরুদ্ধ দলের নিরীহ সমর্থকরা ভোট দিতে আর না আসে। কায়েমী দলের জয় অনায়াস হয়।
ছুটে আসে মোবাইল সুরক্ষাবাহিনী। ছুটে আসে মূল দুই যুযুধান পার্টির প্রার্থী—হিন্দু দল এবং নব্য জাতীয়তা দল, শাসক যারা বর্তমানে। ছুটে আসে গন্ধে গন্ধে মিডিয়ার দল। খবর ভাসে—হাটতলার মোড়ে মুসলমানদের সঙ্গে গোয়ালা-ঘোষেদের যুদ্ধ। দু-দলই কট্টর ধর্মান্ধ। যদিও এ ক্ষেত্রে এ যুদ্ধ রাজনীতির ক্ষমতাদখলকে ছাপিয়ে সাম্প্রদায়িক চেহারা পায় না, পেতে দেওয়া হয় না বলেই। যদিও একটা প্রাণহানির ঘটনা ঘটেই যায়, এক বৃদ্ধের। কিন্তু তাকে যুদ্ধের বলি বা গণতান্ত্রিক মৃত্যু—কোনো তকমাতেই দেগে দেওয়া যায় না, তা সে যে কোনো বৃহত্ যজ্ঞে বলি যতই শুভ হোক না কেন! যেহেতু তা রক্তপাতহীন। বোধহয় সে গণতান্ত্রিক দাপাদাপির মধ্যে পড়ে মানুষটি আতঙ্কে হার্টফেল করে। ফলত মিডিয়া চূড়ান্ত হতাশ হয়, কেননা রক্তপাত ছাড়া যুদ্ধের খবর খবরই নয়, পাবলিক খায় না তা—অন্তত ভোটের ছুটির দ্বিপ্রাহরিক নাগরিক মাংস-ভাতের আমেজে!
এমত তরঙ্গহীনতার কারণে কিছুক্ষণ পরেই নিপাট শান্ততা ছায় তল্লাট জুড়ে। এক অপার্থিব নিস্তব্ধতা যেন বা, অন্তত তেমনই মনে হয় নাগরিক উদ্দালকের। হঠাত্ই সে নিস্তব্ধতাকে চিরে এক কাক ডেকে ওঠে, এ প্রাকৃতকতায় স্বাভাবিক জীবনছন্দ ফুটে উঠতে থাকে ক্রমে। বুথের দরজা খুলে দেওয়া হয়। গুটি গুটি পায়ে ভোটাররা একে একে আসতে শুরু করে। ফেরার পথে সব পার্টির ক্যাম্প থেকেই তারা মুড়ি-ঘুগনি, মুড়ি-বোঁদে, ঠান্ডা পানীয়ের বোতল নিয়ে ঘরের পানে হাঁটা লাগায় হাসিমুখে—একা কিংবা যূথবদ্ধতায়।
ভোটার আসতেই থাকে, আসতেই থাকে বিরামহীন, যেন বা কিছুক্ষণ আগের সে ভয় জাগানো ঘটনা নেহাত্ই সামান্য দুর্ঘটনাই, নিত্যনৈমিকতায় স্বাভাবিক যা। উদ্দালকরা খাওয়ারও সময় পায় না। কোনোরকমে কাজের ফাঁকে ফাঁকে টুকটাক বিস্কুট, কেক। বেলা একটার পর ঢেউ ওঠে যেন, যেহেতু মহল্লার সকল মহিলা একজোটে এসে হাজির হয়। ফলত এ ভোটতলা আবারও প্রাণ পায়— সাতরঙে, অকারণ হাসির-কাকলির হিল্লোলে, যদিও এ হিল্লোল কিছুটা হলেও চাপা, কেননা তাদের চোখ যেন প্রতিজ্ঞায় দৃঢ। উদ্দালকের মনে ন্যায্য ও হক—কথা দুটি আবারও ভেসে ওঠে। তাদের গল্ফগার্ডেন কমপ্লেক্সে এমনিতেই তারা অনেকেই ভোট দেয় না, তার ওপর যদি তাদের কমপ্লেক্সের সামনে বোমাবাজি হয়, কেই আর বেরোবে ভোট দিতে—প্রানের ঝুঁকি নিয়ে! সুবিধাভোগী শ্রেণী তারা। ভোট নামক মহান কর্তব্য তারা পালন করুক, বা না করুক রাষ্ট্রীয় সকল সুবিধা তাদের হাতের মুঠোয় সবসময় এবং অনায়াসও। গ্রাম অঞ্চলে, হয়তো নাগরিক বস্তি এলাকায়ও জীবনের প্রতি পরতে পরতে লড়াই করে পাওনা বুঝে নিতে হয়। ওর জানে পাঁচ বছর তোমার হে রাজা, এই একটা দিন আমাদের! সে হক, সে অধিকার তারা প্রাণ গেলেও ছাড়তে নারাজ।
চারটে বাজে প্রায়। বুথ ফাঁকাই বলতে গেলে। মাঝে মধ্যে দু-একজন ভোটারের আসা-যাওয়া। কিছু জটলা দূরে আইনি সীমার বাইরে। উদ্দালকরা একে একে এতক্ষণে মুড়ি বা চিড়ে ভাজা পেটে দেওয়ার ফুরসত পায়। আর তো কিছু জোটানোর সৌভাগ্য হয় নি তাদের। নির্বাচন কমিশনের ভাবগতিক যেন, যুদ্ধক্ষেত্রে খাওয়া কি? পার্টি এজেন্টরাও যে যার মতো মুড়ি-ঘুগনি, মুড়ি-বোঁদে চিবোয়। এক জন উদ্দালককে বোঁদে দিতে চায়। ও হাসিমুখে প্রত্যাখান করে তা, যেহেতু তা নিয়মবিরুদ্ধ। এবং সে প্রত্যাখানকে চাপা দিতেই উদ্দালক কথা ভাষায়।
--প্রায় নব্বই পারসেন্ট ভোট তো পড়েছে। আর কেউ আসবে বলে মনে হয়?
--সার, একদম শ্যাষবিলাতে মঞ্জিবেগম ভোট দিতি এলিই ঝানবেন ই-গেরামের ভোটপালা খতম।
সকল এজেন্ট বেজে ওঠে যেন সমতালে উদ্দালকের এবং অপরাপর সেই সবার মনে, বাহিরি যারা, বিস্ময় জাগিয়ে, যে বিস্ময় সমলয়ে প্রতিধ্বনি তোলে।
--সে কি! এর মানে?
--মঞ্জিবেগম মোদের গোটা গেরামের আম্মা। যবে থিকি ভোট তহন থিকিই তিনি ভোট দিলি পরেই ভোট শ্যাষ হয় ই-গেরামের সকল বুথে।
--সে কী! ১৯৫০ সাল থেকে তিনি ভোট দিয়ে আসছেন? এটা তো ঐতিহাসিক ব্যাপার! খবরে খাবার মতো ঘটনা! তাহলে তাঁর বয়স নিশ্চয় প্রায় একশো!
--আজ্ঞে না, তেনার বয়স মোরা কেউ ঝানি নি। পাঁসশোও হতি পারে, ফিন হাজারও।
এ হেন তথ্যে নাগরিক উদ্দালকরা অবাক, বাকহীন হয় সে পরিসরে ইতিহাস আবারও বাঙ্ময় হয়।
--তহন নবাবের রাজ, সি টেইমে মঞ্জিবেগম ই-গেরামের পত্তন করেন। তেনার নামেই তো মোদের গেরামখানির নাম মঞ্জিপুর।
ফলত আবারও বিস্ময় ফোটে, যাতে ঠাট্টার হুল— তা মঞ্জিবেগমের নাম ভোটার লিস্টে আছে?
--গেরামে কত্ত মঞ্জিবেগম। যি কোনো নামে টিক দেগি দিলিই হবেখন।
--তা, সব মঞ্জিবেগমের ভোট যদি হয়ে গিয়ে থাকে? তাহলে কোথায় টিক দেব?
--হাসি পায় আপনেদের বাক্যি শুনি! আপনেরা শহরে বাবু, লিখাপড়া শিখা লোক। এত বুঝদিল হলি হয়! পেত্যেক বুথে গণ্ডাখানি বাড়তি মঞ্জিবেগমের নাম লিখা থাকে আগু থিকাই... ফলস নাম।
--তা ভোটার আই॰ডি॰ কার্ড? সেও কি ফলস নাকি?
--আপনে ফিন হাসাইলেন সার। গোটা গেরামের আম্মা যি, তার আই॰ডি- পেরিচয়! উ এলি মোরা সেরিয়াল নাম্বার হেঁকলি আপনেদের কাম কিবল সি নাম্বারে টিক মারা চক্ষু মুদি। ই আপনেদের ম্যানিজ করতি হবি সার। মোদের গেরামের বাপ-দাদা-পর দাদার আমিলির রিয়াজ। নইলে...
এ অসম্পূর্ণ কথায় হাসি মুছে সাপের হিসহিসানি, যেন বা রক্তশীতল শাসানি। বাহিরি গণতন্ত্র-প্রহরী ওরা চারজন নিঃশব্দে চোখে চোখে কথা বোনে, যে মৌনতায় সম্মতির লক্ষ্মণ থাকে কেননা গণতন্ত্রে বাঁচার অধিকারও সংবিধান প্রদত্ত।
এবং অবশেষে সন্ধ্যা ছ-টা বাজো-বাজো সময়ে সে মাহেন্দ্রক্ষণ আসে। সম্পুর্ণ বোরখা-আবৃত অতিলৌকিক এক মূর্তি আবির্ভূত হয় যেন সে গণতান্ত্রিক থানে। এজেন্ট সকল উঠে দাঁড়ায়। দেখাদেখি উদ্দালকরাও উঠে দাঁড়ায়। ধ্বনি জাগে সমস্বরে— সেরিয়াল সাতশো ছেয়াশি।
সে মূর্তির আবরণহীন হাত ও পায়ের আদল কিশোরীর মায়া আঁকে, অন্তত তেমনটাই মনে হয় উদ্দালকের।
নিরাপত্তা-বলয়ের বাইরে সকল দলীয় ক্যাম্প অফিসসমূহে একযোগে ঢাক-ঢোল বেজে ওঠে উদ্দালকদের চমকে দিয়ে, যা প্রতিধ্বনি তোলে গোটা মঞ্জিপুর গ্রাম জুড়ে। সব ভোট-থানে এবারের মতো গণতান্ত্রিক এ পুজোর-পরবের আনুষ্ঠানিক পরিসমাপ্তি ঘটে। দিনশেষের পড়ন্ত সূর্যের ক্লান্ত আলো তখনও মায়ায় ছুঁয়ে থাকে মাঠের ধারের সেই নাম না জানা গাছটির শীর্ষডালের চিরল পাতাগুলি। মাটিতে এলিয়ে থাকে আলগোছে সে মায়ার ছায়া।
উদ্দালকরা ভিভি প্যাট মেশিন, ই॰ভি॰এম॰ প্যাক করে নিয়মমাফিক। শীল করে গালা বুলিয়ে। উদ্দালক ও সকল বুথ এজেন্ট তাতে সই দাগে। এ দুখানিই যে গণতন্ত্রের প্রাণভোমরা। উদ্দালক ও সরফরাজ দুজনে দুটো মেশিনের দায়িত্ব নেয়। উদ্দালক, প্রিসাইডিং অফিসার যে, নমস্কার জানায় এজেন্টদের।
--অনেক ধন্যবাদ আপনাদের সকলকে। আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া এত সুষ্ঠভাবে ভোট করতে পারতাম না আমরা।
--কী যে বলেন সার! বিগলিত তারা।
--আপনাদের ব্যাগগুলো এগিই দি সার। বাস অব্দি।
--না, না, তার প্রয়োজন নেই কোনো।
উদ্দালকরা হাসি মুখে আবারও হাতজোড় করে। এগিয়ে যায় হাটতলার মোড়ের উদ্দেশ্যে মাঠ ভেঙে। আধা সেনারা তাদের এসকর্ট করে। মাঠের শেষে কী মনে করে উদ্দালক একবার পেছন ঘোরে। মাঠ পেরিয়ে, মাঠ-পুকুর ছাড়িয়ে, দূরের গাছের ফাঁকে ফাঁকে পশ্চিম দিগন্তে তখন আগুন রঙের মাতন। সূর্য ডোবে... নাম না জানা গাছটির শীর্ষডালের চিরল-চিরল পাতায় সে মায়া চিক চিক করে যেন! কিছু মায়া রয়ে গেল কি? ভাবে উদ্দালক, যে ভাবনাকে দুলিয়ে মাঠ পেরিয়ে ভেসে আসে কিছু আত্মীয়-কথা,
--সার, সময় পেলি আবার এসেন। ইবার তো কিছু খাওয়াতি...