বেবী সাউ
কিছু প্রশ্ন। আমাদের ব্যস্ত জীবনের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। কিছু কথা, যা হয়ত বহুবার প্রজন্মের পর প্রজন্মের বুকে সংশয়ের জন্ম দিয়ে যায়। আদৌ কি আমরা স্বাধীন? কখনও কি আমরা বলতে পারব- ‘ট্র্যাফিক থামিয়ে চুমু স্বাধীনতা’?
‘তোমার আমার স্বাধীনতা/ রক্তের মতো লাল স্বাধীনতা/ তোমার আমার স্বাধীনতা/ আকাশের মতো নীল স্বাধীনতা/যেন সংগ্রাম আনে স্বাধীনতা/ যেন ভাবনা আনে স্বাধীনতা/ সাতচল্লিশ নয় স্বাধীনতা/ সাতচল্লিশ আনেনি, দেয়নি স্বাধীনতা’- কবীর সুমন
গানটি প্রথম শুনে চমকে উঠেছিলাম। কীভাবে এই ব্যক্তি জানতে পারলেন আমাদের মতো অনেকের মনের কথা? এ কথা অনস্বীকার্য, সাতচল্লিশ আমাদের এক রাজনৈতিক স্বাধীনতা দিয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার যে ভাবনার উপর দাঁড়িয়ে বহুসময় ধরে মানুষ নিজের জীবনকে নিবেদন করেছে, সেই স্বাধীনতা কি আমরা পেয়েছি? এই সব কথা ভাবলেই আমাদের মনের মধ্যে বসে থাকা সেই শিক্ষকমহাশয় বলেন -- বেটা, ইতিহাসের দিকে তাকাও। ইতিহাস পড়। কত অত্যাচার-ই না করেছে আমাদের ইংরেজ। কত মানুষের প্রাণ নিয়েছে, কত মানুষের ইজ্জত নিয়েছে। কিন্তু আমাদের মেরুদণ্ডের কারণে আমরা ছিনিয়ে আনতে পেরেছি স্বাধীনতা। হ্যাঁ, অনেক কিছু তার বিনিময়ে তুলে দিতে হয়েছে। ভাগ করতে হয়েছে দেশ। ভারত ছেড়েছে বৃটিশরা। তবেই না আমাদের দেশের লোকেরাই বসেছে শাসনের সিংহাসনে। এই তো আমাদের আত্মতৃপ্তি। যে, আমাদের শাসন করে আমাদের দেশের লোকেরাই। আমাদের কর নেয় আমাদের নিজের লোকেরাই। আমাদের নিয়মে বেঁধে রাখে আমাদের ঘরের নিয়মতান্ত্রিকরা। আর আমরাই ভোট দিয়ে তাদের নিয়ে আসি ক্ষমতায়। এই আমাদের আত্মপ্রসাদ। আমরা গর্বের সঙ্গে বলে থাকি, কাজ না করলে পাঁচ বছর পরে আমরাই টেনে নামিয়ে দেব। কিন্তু সত্যিই কি তা হয়? আমরা কি পারি গাড়িটাকে বদলে দিতে? না কি ড্রাইভারকেই পাল্টাই শুধু? কত বছর যেন হল আমরা স্বাধীন?
“ আমাদের সোনারুপো নেই, তবু আমরা কে কার ক্রীতদাস?’ – জীবনানন্দ দাশ
যেমন স্বাধীনতা, তেমন হল ইতিহাস! ভারী সংশয়াচ্ছন্ন একটা বিষয়। স্বাধীনতা প্রসঙ্গে ভাবতে ভাবতে, কারা কোথায় স্বাধীন কোন কালে, এটা ভাবার ও জানার ভারী ইচ্ছে হল। তা, ভারতের ইতিহাস ঘাঁটতে গিয়ে দেখি, এ তো ভারী মুশকিল! ভারতের মানুষ কবে ভারতের ছিল আর কবে যে স্বাধীন ছিল, সেটাই ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। ইতিহাসে সাধারণ মানুষের মনের কথা, যাপনের কথা, জীবনসংগ্রামের কথা তো কোথাও লেখা নেই। তাহলে এ কীসের ইতিহাস? এ কি শুধুই ক্ষমতার ইতিহাস? ঐশ্বর্যের? এই ধরুন, আমাদের মাথার উপর রাজত্ব করেছে চোল বংশ, কখনও মৌর্য বংশ, কখনও বিক্রমাদিত্য, কখনও সমুদ্রগুপ্ত, কখনও অশোক। কখনও বা পাল-সেন রাজবংশ। কিন্তু মানুষের রাজ কখনওই নয়। সবসময়েই মানুষ শাসিত হয়েছে আর তাদের শাসন করেছে কোনও না কোনও সাম্রাজ্যবিস্তারকারী রাজা। হোক না তারা ভারতীয়। কিন্তু শাসক তো! তাদের আমলে কি আমরা স্বাধীন ছিলাম? তাহলে আর মাৎস্যন্যায়ের কথাই বা বলা হয় কেন, আর মুহম্মদ ঘোরীর স্বৈরতন্ত্রের কথাই বা বলা হয় কেন? আচ্ছা, বিক্রমাদিত্যের রাজসভায় বা আকবরের রাজসভায় যে সব রাজকবি, রাজজ্যোতিষী, রাজগায়করা ছিলেন, তাঁরা ছাড়া আর অন্য কারুর কথা আমরা ইতিহাসে পড়ি না কেন? তবে কি তখন রাজঅনুগ্রহ ছাড়া কবি-সাহিত্যিকরা ইতিহাসেও জায়গা পেতেন না? কবি-সাহিত্যিক-শিল্প-বিজ্ঞান-দর্শন-সব ক্ষেত্রেই কি তখন ছিল রাজাকে খুশি রাখার, খুশি করার সংস্কৃতি? না হলে কেউ তো তাঁদের বিষয় নিয়ে চর্চা করার পরিসর খুঁজেই পাবেন না, উপরন্তু হয়ত, করলেও তা মানুষের দৃষ্টিগোচর হতেও পারবেনা। কমিউনিস্ট শাসনে রাশিয়ায় যদি পাস্তেরনাককে অন্তরীন করে রাখা সম্ভব দীর্ঘদিন ধরে, তাহলে রাজতন্ত্রের ভারতবর্ষে কেন তা সম্ভব নয়? মূল কথা তবে ক্ষমতা। সে দেশের মানুষদের হোক, বা হিন্দু-মুসলমান – খ্রীষ্টান – বৌদ্ধ যে কোনও ধর্মের-ই হোক। সাদা চামড়ার হোক বা হোক ভারতীয় বর্ণের? শাসক যখন ক্ষমতা, আর আমরা সেই ক্ষমতার অধীনে যখন অধীনস্থ প্রজা মাত্র, তাহলে স্বাধীন আমরা কখন ছিলাম? আমাদের শাসন করেছে দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় রাজারাই, তারপর এদেশে এসে সুলতান সাম্রাজ্য, তারপর মুঘল সাম্রাজ্য, তাদের পর ইংরেজরা এবং এখন আবার ভারতীয়রাই। পোশাক বদল করে, নাম বদল করে, মতাদর্শ বদল করে, শাসনের প্রকারভেদ বদল করে, এমনকী অত্যাচারের প্রকারভেদ বদল করেও। তাহলে আমরা স্বাধীন হলাম কোথায়? এই স্বাধীনতা যে আমাদের এক প্রবল অপমানকর দেশভাগের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল এবং তাতে সায় ও মদত দিয়েছিলেন এদেশের সেই সময়কার শাসকরাই, এও তো মিথ্যে নয়। কারণ সেখানেই স্বাধীনতার জন্য যত না আকাঙ্খা ছিল, তার চেয়ে বেশি ছিল ক্ষমতার প্রতি আগ্রহ। যে লোকটি এ সবের বাইরে থেকে স্বাধীন সমাজ,স্বাধীন ভারত তৈরির জন্য লড়াইয়ের চেষ্টা করলেন, তাঁকে আন্তর্জাতিক রাজনীতির বলি করে মেরে দেওয়াই হল, এমনকী তাঁর ইতিহাসটাই চেপে দেওয়া হল। নেতাজির অন্তর্ধান খুব সম্ভবত আমাদের স্বাধীনতা সম্পর্কে ধারণার দিকেই আঙুল তুলে দেওয়ার এক প্রতীকী ক্ষত, যা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমরা তো স্বাধীন, কিন্তু কেমন স্বাধীন?
“রাজা আসে যায়/ আসে আর যায়/ নীল জামা গায়ে/ লাল জামা গায়ে/ শুধু পোশাকের রঙ বদলায়/ দিন বদলায় না”- বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
স্বাধীনতা শব্দটাও ভীষণ আপেক্ষিক। ধরুন, ভারতীয়ত্ব, এই ব্যাপারটাই তো প্রশ্নের। হিন্দু ধর্ম বলতে যেমন কোনও ধর্ম নেই, তেমন ভারতীয়ত্ব বলেও কিছু নেই। আমরা পারস্পরিক হয়ে আছি। কিন্তু কাশ্মীরের মানুষ যদি জাতিসত্ত্বার আন্দোলন করেন, যদি কামতাপুরী, আসাম, মণিপুর এসব অঞ্চলে মানুষ প্রশ্ন করেন স্বাধীনতাকে, তবে তাঁরা হয়ে যাবেন সন্ত্রাসবাদী, বিচ্ছিন্নতাবাদী। মানে, ভারত রাষ্ট্রের ক্ষমতাতন্ত্রের কাছে তাদের পরাধীন হয়ে থাকতে হবে, তবেই তারা সাচ্চা ভারতীয়। আর নিজেদের আত্মপরিচয় খুঁজলে নয়। এখন তো মনে হচ্ছে বাঙালিদেরও আত্মপরিচয় খুঁজতে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে প্ররোচিত করছেন এই রাষ্ট্রই। তার পর ধরুন রাষ্ট্রভাষা। আমাদের দেশে সাহিত্য আকাদেমি স্বীকৃত রাষ্ট্রভাষা ২২টি। কিন্তু হিন্দি ভাষা রাজ করছে আমাদের সারা দেশে। এই বিবিধ ভাষার দেশে প্রশ্ন আসে, কেন অন্য সব ভাষা রাষ্ট্রভাষা নয়? সব ভাষাকেই জাতীয় ভাষার স্বীকৃতি কেন দেওয়া হবে না? আর এই দেওয়ার কাজটিই বা কারা করবেন? এই সব যখন মনের মধ্যে উঁকি দেয়, যখন উঁকি দেয় মণিপুরে, সীমান্ত অঞ্চলে, কাশ্মীরে সেনাবাহিনীর অকথ্য অত্যাচারের ইতিহাস ( যা লেখা হয় না), তখন স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন জাগে। যখন দেখি গত পাঁচ বছরে ভারতে আত্মহত্যা করেছে ১৩০০০ এরও বেশি কৃষক, অনাহারে মারা গেছেন আরও কয়েক হাজার, তখন স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন জাগে। যখন দেখি ভাল করে খেতে, পড়তে আর ওষুধ কিনে চিকিৎসার সুবিধে আর সুযোগ পাচ্ছে না ভারতের প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ, তখন প্রশ্ন জাগে স্বাধীনতা নিয়ে। তবে কি স্বাধীন কেবলমাত্র কিছু মহানগরের, হাইটেক সিটির মানুষ? তবে কি স্বাধীন শুধুমাত্র শাসকের সমর্থনকারী জার্সি পরা কিছু মানুষ? তবে কি স্বাধীন শুধুই সেই সমস্ত ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা হ্যাঁ হ্যাঁ বলা সঙ, যাঁদের এই সমর্থন করা ছাড়া আর সত্যিই কিছু করার নেই? করার নেই, কারণ তাঁরা জানেন, দেশের বুদ্ধিজীবী হয়ে থাকার জন্য তাঁদের ক্ষমতার কাছাকাছিই থাকতে হবে। আচ্ছা ধরুন, কৌটিল্য তো আচমকা আসেননি। অর্থনীতিশাস্ত্র-ও একদিনে তৈরি হয়নি। তাহলে আমরা শুধু কৌটিল্য-র ইতিহাস পড়ি কেন? কারণ তিনি রাজক্ষমতার কাছের মানুষ ছিলেন। ইতিহাস তো রচিত হয় না, হয়নি কখনও। ইতিহাস নির্মিত হয়। সামন্ততন্ত্রের সময়ও তাই ছিল, রাজতন্ত্রের সময়েও তাই ছিল। আচ্ছা ধরুন, জেনারেল ডায়ারের নেতৃত্বে জালিয়ানওয়ালাবাগে যে নারকীয় হত্যাকাণ্ড হয়েছিল, তার পাশে কেন থাকবে না বরনাগরের এক রাতে হত্যা করে তিনশো তরুণের লাশ জলে ভাসিয়ে দেওয়ার ইতিহাস? দ্বিতীয়টি কি ইতিহাস নয়? না কি দ্বিতীয়টির ইতিহাস হলে মুশকিল? কেন লেখা হবে না মরিচঝাঁপিতে যে গণহত্যা হয়েছিল তার কাহিনি ইতিহাসে? এই সব হত্যাকাণ্ড কি কোনও সভ্য দেশে হয়? কোনও স্বাধীন নিয়মে মণিপুরের মায়েদের মতো নগ্ন হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে হয় ধর্ষণকারী, অত্যাচারী সেনার বিরুদ্ধে? ইশরাত জাহানের কথাও মনে নেই আপনাদের? ফেলানির কথা? মনে নেই নেই সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম? মনে নেই গুজরাতের দাঙ্গা? মনে নেই পস্কোয় জমি অধিগ্রহণ? আরও এমন কত কী! কিন্তু আমরা বলব আমরা স্বাধীন কারণ ইংরেজরা আর নেই এ দেশে। আমরা স্বাধীন, কারণ আমাদের দেশের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে কিছু দেশীয় বড় বড় ব্যবসায়ী, আর বেশির ভাগ-ই বহুজাতিক কোম্পানি। আমরা স্বাধীন, কারণ আমাদের সংস্কৃতি, ভাষা এই বিশ্বায়নের যুগে ‘হাঁস ছিল সজারুও, ব্যকরণ মানি না/ হয়ে গেল হাঁসজারু কেমনে তা জানি না’ –এর মতো। আমরা স্বাধীন, কারণ আমাদের প্রতি মুহূর্তে মনে করিয়ে দেওয়া হয় ‘জেনেশুনে বিষ করেছি পান’ গানটি গাইতে গাইতে আমরাই ভোট দিয়ে মিশে গেছি জনমতামতে। আমরা স্বাধীন কারণ আমাদের মধ্যবিত্ত শ্রেণি স্বাধীন। আমরা স্বাধীন কারণ আমাদের বেশ কয়েকটি এ ওয়ান নগরী আছে। আমরা স্বাধীন, কারণ ছত্তিশগড়, অন্ধ্রপ্রদেশ তেলেঙ্গানায় রাজ করতে পারে সেনাবাহিনীর বেয়নেট। আমরা স্বাধীন, কারণ আমাদের সিনেমায়, সাহিত্যে, এমনকী যৌনতাতেও সেন্সরের থাবা বসাতে পারে রাষ্ট্র। আমরা স্বাধীন কারণ আমরা ধর্ম নিয়ে এখনও স্বাধীন ভাবে দাঙ্গা করতে পারি। আমরা স্বাধীন, কারণ ভারতীয় ক্রিকেট টিম খেলতে যায় বিশ্বকাপ। আমরা স্বাধীন কারণ আমরা এশিয়াডে, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে, ভারত নামের জার্সি পরি। আমরা স্বাধীন কারণ আমাদের রুচি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে কিছু বহুজাতিক সংস্থা। আমরা প্রজা। আমাদের আবার স্বাধীনতা কীসের? নিজের বক্তব্য আর প্রশ্ন রাখার জন্য এ দেশে প্রাণ যায় গৌরী লঙ্কেশ, সুজাত বুখারির মতো সাংবাদিকদের। সফদর হাশমিকে আমরা ভুলে যাই। আমাদের করের টাকায় নাকের ওপর দিয়ে সাইরেন বাজাতে বাজাতে চলে যায় মন্ত্রীদের গাড়ি। আমাদের করের টাকায় প্রতিরক্ষা খাতে খরচ হয় কয়েক হাজার কোটি টাকা। কিন্তু গ্রামে গ্রামে ওষুধ যায় না, বিদ্যুৎ যায় না, শিক্ষা যায় না, স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ থাকে, চাকরি নেই কয়েক কোটি মানুষের। আমরা স্বাধীন। কারণ আমাদের শাসকদের গায়ের রঙ ইংরেজদের মতো নয়। ইংরেজরা যখন বাক-স্বাধীনতা হরণ করেছিল, তখন ছিল অত্যাচার। কিন্তু আমাদের দেশের রাজারা তা করলে? অত্যাচার নয়, তা হল, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা।
“ তাতে আমাদের কতটুকু ক্ষতি? কতটুকু ক্ষতি মিতে/ হাঁ-করা জুতোটা অবাধ্য বড়, ভালো করে বাঁধো ফিতে”- ( প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের গান, বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা)
সত্যিই আমাদের তাতে খুব একটা ক্ষতি নেই। আমরা তো ভালোই আছি। আমরা তো খবরকাগজ পড়া, স্বাধীনতা দিবসে জমিয়ে পতাকা তুলে ছূটি কাটানো মধ্যবিত্ত। আমরা কেউ বসবাস করি কলকাতায়, কেউ বা জামশেদপুরে, কেউ মুম্বইতে, কেউ দিল্লিতে, কেউ নাগপুরে, কেউ চেন্নাইয়ে। আমরা কেউ থাকি উঁচু ফ্ল্যাটে, কেউ বা এসি ঘরে। আমাদের ডিনার লাঞ্চ ভরে ওঠে ভালো ভালো খাবারে। আমাদের চিকিৎসার জন্য আছে প্রাইভেট হাসপাতাল, কথা বলার জন্য আছে থলি ভর্তি ফ্রি জিবি নিয়ে দেশিয় বা বহুজাতিক মোবাইল নেটওয়ার্ক, বিনোদনের জন্য আছে কয়েকশো চ্যানেল, সিরিয়াল্, মাল্টিপ্লেক্স, ওয়েবসিরিজ, দেশব্রতী হওয়ার জন্য ক্রিকেট ম্যাচ, গণতান্ত্রিক হওয়ার জন্য ভোট, সমাজসেবা করার জন্য এনজিও, আর বিপ্লবের জন্য সোশ্যাল নেটওয়ার্ক। আমাদের কতটুকু ক্ষতি? আমরা যে কোনও সময় এন আর আই হয়ে অপেক্ষা করি কবে গ্রিন কার্ড পাব। কবে ওদেশের নাগরিকত্ব পাব। আমাদের কোনও দেশ নেই। আমাদের শাসক নিয়ে মাথাব্যথা নেই। আমাদের কোনও ইতিহাস নেই। আমাদের স্বাধীনতাও নেই, আর তা নিয়ে আমাদের কিছু এসেও যায় না। কারণ জানি, যেখানেই যাব, আমাদের শোওয়ার ঘরেও উঁকি দিয়ে থাকবে শাসকের ওয়াচটাওয়ার। তাকে এড়িয়ে যাওয়া দুঃসহ ব্যাপার।
তবু প্রশ্ন তো জাগেই। আর দিবাস্বপ্ন দেখি একদিন সমস্ত মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করছে- স্বাধীনতা কোথায় আছে? স্বাধীনতা কার? স্বপ্ন, তো, স্বপ্নই, কারণ তা বাস্তব হয় না কখনও। আমরা উৎসবমুখর জাতি। আসুন, মেতে উঠি। কারণ “আমরা তো অল্পে খুশি, কী হবে দুঃখ করে/ আমাদের দিন কেটে যায় সাধারণ ভাত কাপড়ে” (জয় গোস্বামী)