দোঁহা

কৌশিক সেনের কবিতা

 


ষোড়শোপাচার

 

-১-

 

ফাগুনের পরিযায়ী মেঘ, নিয়েছি দু’হাত দিয়ে খুঁটে

মালহারে আরেক আগুন, বয়ে চলে একা ঝাঁকামুটে

পুঁটুলিতে বেদম আবেগ, নত হয় পিঠ আর ঘাড়

স্খলিত পোশাক যাক পরে, সারা দেহে ধ্যানের পাহাড়।

 

-২-

 

উন্মুখ ছিল জরাদাগ, রোদের শলাকা শালবনী

মুহুর্মুহু আহুতপরাগ, উপাচার মেঘমায়াযোনি

আমনের ধানকাটা হলে চুপিচুপি ভরি গোলাঘর

সাপের ছোবল খেয়ে বাঁচি, কাঁচিকাটা নীলাভ গতর।

 

-৩-

 

ধ্বনিতে প্রণয়াভাস নেই, নাকি কোনো সুরেলা ডহর

পলিমাঝে বয়ে যায় নদী, ধুয়ে দেয় সুরেলা শহর

সুহানিরাতের মত শীত, ফুলেল দোয়াতে রাখা চুন

কলমের কালি শুধু লাল, কেউ বুঝি আজও গুমখুন।

 

-৪-

 

মেষরাশি মেঘেদের দল, পর্বতে কুয়াশা ছড়ায়

বহুদূর ভেসেছে মাদল, ওখানে কি বেদনা তরাই!

হাতুড়ি পিটছে নাকি কেউ, নাকি তবে নাগারার ধ্বনি!

তোমরা বলবে ডুবজল, আমি জানি ওটা আচমনই।

 

-৫-

 

আহরিত যত ধন ছিল, ছড়িয়ে দিয়েছি পাতাভারে

আমরাও দোয়েল কোকিল, পিহু ডাকি যত কাঁটাতারে।

ভারে ভারে বয়ে চলি রোদ, সেঁকে নেওয়া যত সুখস্মৃতি

মেপে রাখা স্বরের পারদ, ফলিত জ্ঞানের পরিমিতি।

 

-৬-

 

সেচের দুধারে রাখা জল, সরু করে কেটে রাখা খাল

নিঠুর বেঁধেছে পোড়াবাঁশি, আমরাতো কালের রাখাল

আলোকিত দেউটির দেশ, টিমটিম জ্বলে দীপশিখা

এখানে কি জ্বলেছে আবেশ, নিদারুণ কোনো বিভীষিকা!

 

-৭-

 

পথের দুপাশে রাখি ঋণ, নিবেদনে কত গিনিসোনা

স্থুলদেহ একদা বিলীন, বেদনার মেঘপরগণা।

আলোর সকাশে ঘরবাড়ি, তারই মাঝে মেহনের পাড়া

আজও কে শানায় তরবারি, জ্বেলে রাখে আদি ধ্রুবতারা।

 

-৮-

 

তোমাকে দেখেছি ফুল, আগুনের সেরা মৌতাতে

আকাশ সেজেছে টিপে, লিপস্টিকে, ঘাতপ্রতিঘাতে

আলোর দোপাটি দেখা, চোখে চোখে মেঘমাস্কারা

আমাকে দেখিও পথ, ভুলে গেলে গোধূলির পাড়া।

 

-৯-

 

যুগলে শুনেছি গান, প্রণিপাতে চাঁদের তরণী

ও সুখ কাঁসার নয়, বগিথালা মিশেছে ভরণই।

পদ্মপুরাণ পড়া শ্লোক, পরীরা ভুলেছে শোকতাপ

আমাদের রামায়নি গান, আমাদেরই আয়ুধ কলাপ।

 

-১০-

 

টাওয়ারঘড়ির মত দিন, কাঁটা ঘিরে আজও সন্দেহ

সময়ের মহিমা মলিন, পলিথিনে মুড়ে রাখা দেহ।

ছুরি কাঁচি, সূচ সুতো জানি, জানি তার কাটাছেঁড়া কত

মৃতের নাভিতে রাখি ঠোঁট, তুমি যদি হও সম্মত!

 

-১১-

 

বড়ই জটিল ছিল রোগ, বাঁচবার আশা বড় ক্ষীণ

তবু যদি পার হই পথ, রেলগেট প্রহরাবিহীন।

ত্বরিতগতিতে চলে ট্রেন, ভেতরের আলো জ্বলে নেভে

সাইকেলে একলা সওয়ার, ধুয়ে যায় যত ভাবাবেগে।

 

-১২-

 

বড়ই কঠিন পরমায়ু, খুটখাট জীবনের লেখা

আমরাও লিখে রাখি চিঠি, বায়বীয় মেঘমুচলেকা

কলমের নিবে যদি ত্রাস, অকারণে বেঠিক বানান

আমরাই আদিদেব বুঝি, একলা করেছি বিষপান।

 

-১৩-

 

লবণের ধারক শরীর, বুঝি কেউ শতদলনাভি

কুটিরে বেঁধেছি কামধেনু, বেদনার কোনো মহাগাভী

অভিষেকে দুগ্ধদোহন, চৌকাঠে স্নেহআল্পনা

তবুওতো কারুবাকিপদ, ভরে ওঠে আদিআলোচনা!

 

-১৪-

 

জানুতে স্থাপিত অবসাদ, অষ্টধাতুর কোনো নারী

বৃন্তে ফুটেছে চপলতা, ঘনঘটা পুষ্পবাহারি

বহনের বহুত খরচ, হাতিয়ার ভেসে যায় জলে

শোনো যদি ঘন্টার ধ্বনি, ওখানে কি পিদিম জ্বলে!

 

-১৫-

 

শৃঙ্গারে মকরধ্বজ, সজ্জায় ফোটে কলাবতী

মেঘভাঙা শরৎতপন, আবাহনে কিবা বল ক্ষতি!

রাতভর নেশার তরল, সরলতা ভুলেছে পানীয়

আমাদের বহুজনপদ, সকলেই পিতৃস্থানীয়।

 

-১৬-

 

মাজুলিদ্বীপের মত দেশ, কারা যেন ছিল বড় প্রিয়

রক্তে পরেছে কার ছায়া, মদেশিয় পরমাত্মীয়

কাঁটাতারে দ্বিধা হয় বুক, টিয়ারং করেছি পাচার

তাম্বুল, তর্পণ, নতি–বেদনার ষোড়শোপাচার।।

 

 

 

 



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন