মাতৃভাষা
(১)
যে বর্ণের কাছে গেলে ছোঁয়া যায় মাকে।
আমি আশ্রয় বলি তাকে।
যে ধ্বনি দুগ্ধময়, যে স্বর প্রসবী।
আমি তাকে স্নেহ ব'লে ভাবি।
শব্দ মমতা যার, বাক্য করুণা।
আমি তার আঁচল ছাড়িনা।
সে আমার সব জানে। যত ভুল, যত উঁকিঝুঁকি।
তবু বুকেতে জড়িয়ে নেয়। যদি একবার মা বলে ডাকি।
দৃশ্য তার, ঘ্রাণ তার, শ্রুতি তার, তারই তো চেতনা।
আমি কোথা যাবো তাকে ছেড়ে? তাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না।
তাকালে মুখের দিকে নিভে যায় দুঃখ, নিরাশা।
আমায় লালন করেছে মা। আমি ধারণ করেছি তার ভাষা।
যে ভাষা কন্ঠে নিলে ছোঁয়া যায় মাকে।
আমি অহঙ্কার বলি তাকে।
(২)
আমার ভাষা মাটি। আমার আনন্দধান আখর।
আমার ভাষার ভিতরে কত জল, খুঁড়ে দ্যাখো...
আমার ভাষা আকাশ। ঝলোমলো মোহনচূড়ার ডানায়।
আমার ভাষা তোমার মুখে কী অপূর্ব মানায়।
আমার ভাষা রঙিন। ছড়িয়ে আছে জারুলে কাঞ্চনে...
আমার ভাষা সব অবসাদ সারিয়ে দিতে জানে।
আমার ভাষা পীযূষ। পেড়িয়ে এলো আম কাঁঠালের বন।
আমার ভাষা লক্ষ্মী ব্রতকথা। আমার ভাষা সত্যনারায়ণ...
ভাষা আমার গাঙুর। জলে ভাসছে খেয়াতরী।
আমার ভাষা পদ্মপাতায় নাচ দেখানো ফড়িং।
আমার ভাষা শিশির। ঘাসের ঠোঁটে ঘাসের ঠোঁটে ঘাসে...
আমার ভাষা পঁচিশে বৈশাখ। আমার ভাষা বাইশ শ্রাবণ মাসের।
আমর্ম জড়িয়ে আছি তাই, সেই অহং ধ্বনি। অহং লিপি, কথন।
শুচি এত শুচি। ঠিক আমার মায়ের মুখের মতো...
(৩)
প্রসাদ ঠাকুরের গানের এই পঙক্তিটি-
'মন বের হয়ে দ্যাখ মা কন্যা রূপে রামপ্রসাদের বাঁধছে বেড়া...'
বা রবীঠাকুরের গানের-
'ও মা। অনেক তোমার খেয়েছি গো অনেক নিয়েছি, মা...'
অথবা কাজী নজরুলের গানের এই পঙক্তি-
'তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে...'
এদের মধ্যে যে মা রয়েছে আমার মধ্যেও আছে সেই মা শব্দটি...
মা
ভাষা